Menu

গানে গানে সারা রাত

মামুন মিজানুর রহমান: গানে গানে কেটেছে নগরবাসীর সারা রাত। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় শ্রোতাদের পদচারণা। রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উত্সব। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত পাঁচ দিনের এ উত্সবের প্রথম দিনেই ছিল এবারের আসরের সবচেয়ে বর্ষীয়ান শিল্পী বিদুষী গিরিজা দেবীর খেয়াল। আরও ছিলেন ড. এল সুব্রক্ষ্ম্যণনের বেহালা, ওস্তাদ আশীষ খাঁর সরোদ, প্রবীণ গোডখিণ্ডির বাঁশি আর রাতিশ তাগড়ের বেহলার সুর। স্কয়ার নিবেদিত এবারের উত্সব উত্সর্গ করা হয়েছে সম্প্রতি প্রয়াত কবি সৈয়দ শামসুল হককে।

সন্ধ্যা ৭টায় উত্সব শুরু হয় নৃত্যনন্দনের শিল্পীদের সম্মেলক নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘রবি করোজ্জ্বল নৃত্যমালিকা’ শিরোনামের এ আয়োজনে ছিল রবীন্দ্রনৃত্যের নানা আঙ্গিক। নাচের শুরুতে মঞ্চে আসেন সাদা শাড়ি পরিহিত এক দল নারী। নৃত্যের সঙ্গে পরিবেশিত গানগুলোর মধ্যে ছিল ‘বাসন্তী, ‘হে ভুবনমোহিনী’, ‘বিপুল তরঙ্গ রে’, ‘ওই পোহাইলো তিমির রাতি’। এ ছাড়াও ছিল রবীন্দ্রনাথের একটি ব্রজবুলি গান।

এরপর ছিল বাঁশি ও বেহালার যুগলবন্দি। ২০১০ সালে আর্জেন্টিনায় ওয়ার্ল্ড ফ্রুট ফেস্টিভালসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় উত্সবে বাঁশি বাজিয়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন প্রবীণ গোডখিণ্ডি। তার বাঁশির সঙ্গে যুগলবন্দিতে ছিলেন রাতিশ ‘ইনসিঙ্ক’ শোর স্রষ্টা ও ভারতের মিউজিশিয়ানস ফেডারেশনের সভাপতি রাতিশ তাগড়ে বেহালা নিয়ে। তবলায় সঙ্গত করেন রামদাস পালসুল।

রাত তখন ৯টা। বাঁশি ও বেহালার যুগলবন্দি শেষ হয় ততক্ষণে। অনুষ্ঠানের এ পর্বে ছিল উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্যবর্ধন শ্রিংলা, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সেলিম আর এফ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার পর খেয়াল নিয়ে মঞ্চে আসেন বিদুষী গিরিজা দেবী। সেনিয়া ও বেনারস ঘরানার প্রবাদপ্রতিম কণ্ঠশিল্পী তিনি। তার সঙ্গে তবলায় গোপাল মিশ্র ও সারাঙ্গিতে সঙ্গত করেন মুরাদ আলী খান।
সরোদবাদন নিয়ে মঞ্চে আসেন আলাউদ্দিন খাঁর দৌহিত্র ও আলী আকবর খাঁর পুত্র ওস্তাদ আশীষ খাঁ। গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।

তার সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ। ‘জাসরাঙ্গি’ শিরোনামে ছিল খেয়ালের একটি যুগলবন্দি। এটি নিয়ে মঞ্চে আসেন জয়পুর আত্রৌলি ঘরনার শিল্পী বিদুষী অশ্বিনী ভিদে দেশপাণ্ডে ও মেওয়াতি ঘরানার প্রখ্যাত শিল্পী পণ্ডিত সঞ্জীব অভয়ঙ্কর। তাদের সঙ্গে আজিঙ্কা যোশি ও রোহিত মজুমদার ছিলেন তবলায়।

গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত ড. এল সুব্রহ্ম্যণনের বেহালা বাদনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় গতকালের আয়োজন। ড. এল সুব্রহ্ম্যণনের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন পণ্ডিত তন্ময় বসু। বেহালার সুরে সুরে নেমে আসে ভোর।