Menu

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব-২০১৬ চৌরাসিয়ার জাদুকরী বাঁশির সুরে বিদায় রাগিণী

তুলির শেষ আঁচড়টি দিলেন বাঁশির জাদুকর পন্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। তার বাঁশির সুরে হেমন্তের হাওয়া যেন বয়ে যাচ্ছিলো ঢাকার আর্মি স্টেডিয়াম জুড়ে। শুরু থেকে একমনে বাজিয়ে গেলেন ৭৮ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি। বাঁশির সুরের প্রতি কাতর শ্রোতারাও ভাসলেন সেই মোহনীয় ঢেউয়ে।

গত সোমবার বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের পঞ্চম আসরের শেষ শিল্পী হিসেবে হরিপ্রসাদ মঞ্চে আসেন যখন ঘড়ির কাঁটা রাত ৩টা ৪০ মিনিটের ঘর ছুঁয়েছে। ততোক্ষণে মূলমঞ্চের সামনে-পেছনে, স্টেডিয়ামের গ্যালারি ও ঘাসে এবং খাবারের জায়গাজুড়ে শুধু শ্রোতা আর শ্রোতা! শেষ রাতে বাঁশি বাজিয়ে ভোরকে আমন্ত্রণ জানালেন হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। উৎসব শেষ হয় তার পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। ঘড়ির কাঁটা তখন ভোর ৫টা ৫ মিনিট। কিন্তু শ্রোতারা যেতে দিতে নারাজ! তিনি বললেন- আমি পুরোদিন বাজাতে পারবো! শেষমেষ সবাই দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান তাকে।

thumbnail

মঞ্চে এসে হরিপ্রসাদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাঁশির সুরে ভেসে রাত জেগে কয়েক হাজার নিশাচর পরিশুদ্ধ শ্রোতা বাড়ি ফিরলেন তৃপ্তি নিয়ে। হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া সবার শ্রদ্ধাভাজন, ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীতজ্ঞ। পনেরো বছর বয়স পর্যন্ত বেনারসের পন্ডিত রাজা রামের কাছে কণ্ঠসংগীতে তালিম নেন। পরে পন্ডিত ভোলানাথের বাঁশি শুনে তিনি সিদ্ধান্ত নেন বাঁশিবাদন শিখবেন। তার অর্জন ও সম্মাননার তালিকা দীর্ঘ। ভারত সরকার হরিপ্রসাদকে পদ্মবিভূষণ, সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার ও ন্যাশনাল এমিনেন্স অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করেছে। ডাচ রাজপরিবারের পক্ষ থেকে ‘অফিসার ইন দ্য অর্ডার অফ ওরাঞ্জ ন্যাসো’ খেতাব এবং ফরাসি সরকারের পক্ষ থেকে নাইট উপাধি লাভ করেছেন। বর্তমানে রটারড্যাম মিউজিক কনজারভেটরির ওয়ার্ল্ড মিউজিক বিভাগের আর্টিস্টিক ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োজিত আছেন তিনি।

সমাপনী দিনে শিল্পী তালিকায় ছিলো শাস্ত্রীয়সংগীতের বড় বড় দিকপালের নাম। সন্তুরে শিবকুমার শর্মা তো ছিলেনই, ছিলেন পন্ডিত যোগেশ শামসি, পন্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও আজিঙ্কা যোশি (তবলা), আরতী আঙ্কালিকার ও কুমার মারদুর (খেয়াল), পন্ডিত কুশল দাস (সেতার)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের দলীয় কণ্ঠসংগীতও ছিলো।

এ রাতের শেষ পরিবেশনা ছিলো বংশীবাদক হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার। তার পরিবেশনা শুনতে আগের দিনগুলোর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি শ্রোতা হাজির হন মাঠে। সন্ধ্যা থেকে তাদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। রাত বাড়ার সঙ্গে দর্শক-শ্রোতাও বেড়েছে। হরিপ্রসাদের সুবাদেই বিদায়বেলা হয়ে রইলো সুরের কারুকাজে বর্ণিল। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ২৪ নভেম্বর থেকে উপমহাদেশের রথি-মহারথি শিল্পীদের পরিবেশনায় রাগাশ্রয়ী বাদ্য আর সংগীতে হৃদয় ডুবিয়ে হাজার হাজার মানুষ কাটিয়ে দিয়েছেন ৫টি রাত।

 

View Full Article