Menu

মুদগাল পরিবারের সঙ্গে বেঙ্গল উৎসবে

thumbnail

অনেক দিন পরে দেখা। বিমানবন্দরে আমাকে দেখে দৌড়ে এসে আনন্দে জড়িয়ে ধরল আরুশি। তারপর মাধবী পিসি এসে আলিঙ্গন করলেন। আমাদের সবার খুশির সীমা রইল না। আমার গুরুজি দিল্লির গান্ধর্ব মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পদ্মশ্রী পণ্ডিত মধুপ মুদগালজি এক মাস আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে মাধবী পিসি (মাধবী মুদগাল—গুরুজির বড় বোন) ও আরুশি (গুরুজির ছোট মেয়ে) আসবেন ঢাকায় বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে অংশ নিতে। পদ্মশ্রী মাধবী মুদগাল ভারতে ওডিশি নৃত্যের এক জীবন্ত কিংবদন্তি। আর তাঁর শিষ্য আরুশি মুদগাল অনেক মেধাবী একজন নৃত্যশিল্পী। গুরুজির মেয়ে হওয়ার সুবাদে আরুশি আমার ছোট বোনের মতো হলেও সে ও তার বড় বোন সাওনী আমার ভীষণ ভালো বন্ধু। ওরা আমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট হলেও আমরা তিনজনই একজন আরেকজনকে ‘তুই’ করে বলি।
এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল র্যা ডিসনে এসে জমিয়ে আড্ডা দিতে দিতে আমরা দিল্লিতে একসঙ্গে কাটানো সময়ের স্মৃতিচারণা করছিলাম। তখন অবধি বেঙ্গলের অনুষ্ঠানটিতে আমার গাওয়ার কথা ছিল না, যদিও দিল্লিতে মাধবীজি ও আরুশির নৃত্যের সঙ্গে আমার অসংখ্যবার গাওয়ার সুযোগ হয়েছে। পরদিন সকাল সাতটায় ঘুম ভাঙল আরুশির ফোনে। ও একটু কাঁদো কাঁদো গলায় কথা বলছিল। ভাবলাম, এই কারণে হয়তো ও আমাকে ফোনে দুষ্টুমি করে ভয় দেখাচ্ছে যেন আমি সকাল সকাল হোটেলে চলে যাই। কিন্তু একটু পরে দেখলাম সত্যি সত্যি ও কাঁদছে অনেক। পেটে প্রচণ্ড ব্যথা ছিল নাকি সারা রাত। আমি খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম শুনে। আমার দাদা ডাক্তার। তাঁকে ফোন করে ওষুধ লিখিয়ে নিয়ে তখনই বেরিয়ে গেলাম। অনেক খোঁজাখুঁজি করে সেই ভোরবেলা একটা ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে পৌঁছে গেলাম হোটেলে। অবস্থা এত খারাপ ছিল যে ওই দিন সন্ধ্যায় বেঙ্গল উৎসবে ওর অংশ নেওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। সারা দিন কিছু খেতেও পারল না সে। দুপুর পর্যন্ত ওদের সঙ্গে কাটিয়ে বাসায় চলে এলাম। দুপুরের পর আরুশি মেসেজ পাঠাল, মাধবীজি বলেছেন আমাকে একটা রবীন্দ্রসংগীত গাইতে হবে নাচের সঙ্গে। শুনে খুব ভালো লাগল। মহড়ার সুযোগ বা সময় তো ছিল না! তবু বললাম, গাইব। ভেবে খুব ভালো লাগা কাজ করছিল যে বেঙ্গল উৎসবে গাইব, তা-ও মাধবী মুদগাল ও আরুশি মুদগালের সঙ্গে। পরে আরুশির শরীর আগের চেয়ে একটু ভালো হওয়াতে সিদ্ধান্ত হলো যে সে অনুষ্ঠানে অংশ নেবে। যাঁরা সেদিন অনুষ্ঠানে ছিলেন নিশ্চয়ই দেখেছেন, এতটা শরীর খারাপ নিয়েও আরুশি সবাইকে কীভাবে মন্ত্রমুগ্ধ করেছিল। আর মাধবীজির কথা তো বলাই বাহুল্য। গেয়েছিলাম রবিঠাকুরের ‘হেমন্তে কোন বসন্তেরই বাণী’। একজন অবাঙালি হয়েও রবীন্দ্রসংগীতটির সঙ্গে অসাধারণ নেচেছিল আরুশি।
অবশেষে এল বিদায়ের পালা। আমাকে বিদায় দিতে গিয়ে মাধবী পিসি এবং আরুশির চোখ ছলছল করছিল। চোখের জল লুকোতে দ্রুতগতিতে বেরিয়ে এসেছিলাম হোটেল থেকে। কিছু ভালোবাসা এমনও হয়, যা দেশ মানে না, ভাষাও মানে না।

View Full Article