Menu

সেতারে শুরু, রাত ভোর হলো খেয়ালে – বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উত্সব

thumbnail

বাংলাদেশের এ প্রজন্মের তরুণদের শাস্ত্রীয় সংগীত আন্তর্জাতিক মানকে ছুঁয়ে ফেলেছে। তার প্রমাণ মিললো গতকাল বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উত্সবে শিল্পীদের পরিবেশনায়। শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রবাদপ্রতীম ওস্তাদদের কাছে তালিম নিয়ে দেশের শিল্পীরাও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উঠে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে। গত বুধবার অভিজিত্ কুন্ডর ধ্রুপদ যেমন মন কেড়েছে দর্শকদের। গতকাল বৃহস্পতিবার তেমনি বেঙ্গল পরম্পরার শিল্পীদের পরিবেশনা মন মাতিয়েছে শ্রোতা-দর্শকদের। সংগীত কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনাও মন কেড়েছে। পরে বাংলাদেশের স্বনামধন্য বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিমের বাঁশিবাদনও সবার মন ভরিয়ে দিয়েছে।

বেঙ্গল আয়োজিত উচ্চাঙ্গ সংগীত উত্সব ছয় বছর পেরোচ্ছে। উত্সব নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ, রেজিস্ট্রেশনের উত্তেজনা, আবাহনী মাঠে বন্ধুদের দল বেঁধে আড্ডা, সেলফি তোলা সবকিছুই ইতিবাচক দিক। কিন্তু এই বিশাল আয়োজনের সবচেয়ে বড় সাফল্য মনে হয় এটাই যে, বাংলাদেশে উচ্চাঙ্গ সংগীতে আগ্রহী একটা প্রজন্ম গড়ে উঠছে।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, দর্শক সংখ্যার বিচারে এই উত্সব অনন্য অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সম্ভবত দর্শক সংখ্যার বিচারে, উত্সবের সময়কাল ও অধিক সংখ্যক শিল্পীর অংশগ্রহণের জন্য এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংগীত উত্সব। এমনটা হতে পারে উত্সব শুরুর আগে আয়োজকরাও কল্পনা করেননি। কিন্তু বাংলাদেশের সংগীতপিপাসু মানুষ সেটাই সম্ভব করে দেখিয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার উত্সবের তৃতীয় দিনের আয়োজন শুরু হয় বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীদের সেতার বাদনের মধ্য দিয়ে। পন্ডিত কুশাল কুমার দাশের শিষ্যদের পরিবেশনায় দিনের শুরুতেই মুগ্ধ হন মাঠে আগত দর্শক-শ্রোতারা। সাতজনের দলটিতে ছিলেন প্রশান্ত মন্ডল, টি এম সেলিম রেজা, রিংকু চন্দ্র দাস, মেহরিন আলম, জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়, মোহাম্মদ কাউসার ও জাহাঙ্গীর আলম শ্রাবণ। এরপর মঞ্চে আসেন দুই ভারতীয় শিল্পী বিদ্বান ভিক্ষু বিনায়ক রাম ও সেলভাগণেশ বিনায়ক রাম। ভিক্ষু বিনায়ক রাম বাজিয়ে শোনান ঘাটম আর কঞ্জিরা বাদন করেন সেলভাগণেশ বিনায়ক রাম।

এরপর খেয়াল পরিবেশন করেন সরকারি সংগীত কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ১৮ সদস্যের এ দলটিতে ছিলেন আশা খন্দকার, বিটু কুমার শীল, দেবজানি দাস, ড. ফকির সুমন, জি এম সাইফুল ইসলাম, জোহরা হোসাইন, মল্লিকা ওঝা, গোলাম মোস্তফা, মমিন মিয়া, মুরাদ হোসাইন, নিউটন বৈরাগী, নিত্য গোপাল ঠাকুর, অর্বি শর্মি, শারমিন সুলতানা স্মৃতি, কৃষ্ণ গোপাল, সুমা ব্যাপারি, সুস্মিত সাহা ও তমালিকা হালদার।

এরপর সরোদ বাদন করেন ভারতের প্রখ্যাত সরোদশিল্পী আবির হোসেন। এরপর বাংলাদেশের প্রখ্যাত বংশিবাদক গাজী আবদুল হাকিম বাঁশিতে সুর তোলেন। বাঁশির সুর থামতেই মঞ্চে আসেন ভারতের পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকর। বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের এ শিক্ষকের পরিবেশনায় ছিল ধ্রুপদ। তার কণ্ঠের মাধুর্যে সে সময় মাঠে সৃষ্টি হয় এক অনন্য পরিবেশ। তিনি মঞ্চ থেকে নামতেই বেহালা হাতে মঞ্চে আসেন ভারতের বিদুষী কালা রামনাথ। তৃতীয় দিনের শেষ পরিবেশনায় খেয়াল পরিবেশন করেন পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী।

এদিকে উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞদের পরিবেশনার পাশাপাশি উত্সব প্রাঙ্গণে চলছে বাংলাদেশের সংগীত সাধক ও তাদের জীবনী নিয়ে সচিত্র প্রদর্শনী। এছাড়াও বেঙ্গল ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটেলমেন্ট আয়োজন করেছে ‘সাধারণের জায়গা’ শীর্ষক স্থাপত্য প্রদর্শনী।

বাদ্যযন্ত্রের ছবি প্রদর্শনী: উত্সব ভেন্যু আবাহনী মাঠের এক অংশে চলছে বাদ্যযন্ত্রের ছবি ও পরিচিতি প্রদর্শনী। এ প্রদর্শনীতে রয়েছে উপমহাদেশের নানা ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র। তার কোনোটি বহুল পরিচিত, কোনোটি আবার চর্চার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রদর্শনীতে রয়েছে পাখোয়াজ, সরোদ, টিকিয়া, অ্যাকর্ডিয়ান, সুনাদ, নাকাড়া, হারমোনিয়াম, ইন্ডিয়ান ব্যাঞ্জো, সারেঙ্গী, এস্রাজ, ?যুগী সারেঙ্গী, কর্নেট, ক্ল্যারিনেট, বিউগল, ট্রাম্পেট, সানাই, মেঁকুড়, প্রেমজুড়ি, তানপুরা, মাদল, স্বরাজ, গোপীযন্ত্র, সারিন্দাসহ আরো অনেক বাদ্যযন্ত্র।

আজকের আয়োজন:আজ শুক্রবার উত্সবের চতুর্থ দিনের আয়োজন শুরু হবে শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। মনিপুরি, ভরতনাট্যম ও কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবেন সুইটি দাস, অমিত চৌধুরী, স্নাতা শাহরিন, সুদেষ্ণা স্বয়মপ্রভা, মেহরাজ হক এবং জুয়াইরিয়াহ মৌলি। সরোদ-বাদনে অংশ নেবেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর পর খেয়াল পরিবেশন করবেন ওস্তাদ রাশিদ খান, সরোদ-বাদন করবেন পন্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, বেহালা-বাদন করবেন ড. মাইশুর মঞ্জুনাথ, খেয়াল পরিবেশন করবেন পন্ডিত যশরাজ ও চেলো-বাদন করবেন সাসকিয়া রাও দ্য-হাস। সবশেষে সেতার-বাদন করবেন পণ্ডিত বুদ্ধাদিত্য মুখার্জি।

 

View Full Article