Menu

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের দ্বিতীয় দিন – আরাধনায় সমর্পিত রাত

thumbnail

শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এক ধরনের আরাধনা। যারা এ সঙ্গীতের চর্চা করেন তারা সাধনায় মগ্ন থাকেন। আর দর্শক-শ্রোতা যারা সরাসরি এই সঙ্গীত উপভোগ করেন তাদের হৃদয়তন্ত্রীতেও অন্যরকম দ্যোতনার সৃষ্টি হয়। তারাও এক ধরনের আরাধনার মধ্যেই থাকেন।

বুধবার বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের দ্বিতীয় দিনে শাস্ত্রীয় নৃত্য, যন্ত্রসঙ্গীত, কণ্ঠ মাধুর্যের পরিবেশনা- সব মিলিয়ে অন্যরকম একটি রাত পার করেছেন দর্শক-শ্রোতারা। আরেকটি বড় ব্যাপার হল ষষ্ঠ আসরে এসে উৎসবটি আরও উজ্জ্বলতা পেয়েছে। উৎসবকে ঘিরে সঙ্গীতপ্রেমীদের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ দিনে দিনে আরও বাড়ছে। সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত উপভোগ করছেন নানা ধরনের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। যারা এ সঙ্গীত বোঝেন না তারাও এখানে এসে এ সঙ্গীতের স্বাদ নিচ্ছেন।

‘সঙ্গীত জাগায় প্রাণ’- এ প্রতিপাদ্যে স্কয়ার নিবেদিত উৎসবে সহযোগিতা করছে ব্র্যাক ব্যাংক। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে শিক্ষাবিদ এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে। উৎসবের দ্বিতীয় দিনের আয়োজনের শুরুতেই ছিল ভারতের প্রখ্যাত কত্থক নৃত্যশিল্পী অদিতি মঙ্গলদাসের পরিবেশনা। শিল্পীর নেতৃত্বে অদিতি মঙ্গলদাস ড্যান্স কোম্পানি দর্শকদের উপহার দেয় নতুন তিন পর্বের একটি নৃত্য প্রযোজনা। অদিতি মঙ্গলদাসের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন গৌরি দিবাকর, মিনহাজ, আম্রপালি ভান্ডারি, অঞ্জনা কুমারী, মনোজ কুমার ও সানি শীর্ষদিয়া। যার প্রথম পর্বটির শিরোনাম ছিল- উৎসব। নৃত্যের রীতি ও কৌশল রপ্তের মধ্য দিয়ে ভিনদেশি উৎসবের মাত্রা-তাল-লয়-রস উপস্থাপন করে দলটি। এর পরের পরিবেশনারটি শিরোনাম- ‘প্রিয়তমের খোঁজে’। তুর্কি বংশোদ্ভূত প্রখ্যাত সঙ্গীতসাধক এবং ফার্সি ও হিন্দি ভাষার কবি হযরত আমির খসরুর মানব ও ঈশ্বরপ্রেমের বর্ণনায় রচিত কবিতাংশ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নৃত্য পরিবেশন করেন অদিতি ও তার দল। সবশেষে তারানার মধ্য দিয়ে শেষ হয় দলটির পরিবেশনা। দলটির সঙ্গে কণ্ঠ ও হারমোনিয়ামে ফারাজ আহমেদ, তবলা ও পার্ধানে মোহিত গাঙ্গানি, পাখোয়াজে আশীষ গাঙ্গানি ও বাঁশিতে ছিলেন রোহিত প্রসন্ন।

দিনের দ্বিতীয় পরিবেশনায় ছিল বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীদের তবলা পরিবেশনা। এতে অংশ নেন প্রশান্ত ভৌমিক, সুপান্থ মজুমদার, এম যে জেসাস ভুবন, ফাহমিদা নাজনিন, নুসরাত-ই-জাহান ও শ্রেষ্ঠা প্রিয়দর্শিনী।

এর পরের পরিবেশনায় সন্তুর নিয়ে মঞ্চে আসেন দিনের অন্যতম আকর্ষণ শিবকুমার শর্মা। তার সন্তুর বাদনে ভেসে আসে মধুর সুর। সে সুর মোহাবিষ্ট করে রাখে মাঠের হাজার হাজার দর্শককে।

এরপর উলহাস কশলকর পরিবেশন করেন খেয়াল ও ওস্তাদ শাহিদ পারভেজ খান পরিবেশন করেন সেতার। বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী অভিজিত কুণ্ড পরিবেশন করেন ধ্রুপদ। রনু মজুমদারের বাঁশি আর দেবজ্যোতি বোসের সরোদের যুগলবন্দি পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় দ্বিতীয় দিনের আয়োজন।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞদের পরিবেশনার পাশাপাশি উৎসব প্রাঙ্গণে চলছে বাংলাদেশের সঙ্গীতসাধক ও তাদের জীবনী নিয়ে সচিত্র প্রদর্শনী। এছাড়া বেঙ্গল ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটলমেন্ট আয়োজন করেছে ‘সাধারণের জায়গা’ শীর্ষক স্থাপত্য প্রদর্শনী।

আজ তৃতীয় রাতের আয়োজন : আজ বৃহস্পতিবার উৎসবের তৃতীয় দিনের আয়োজনের শুরুতেই রয়েছে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীদের সেতার-বাদন। ঘাটম ও কঞ্জিরা বাজিয়ে শোনাবেন বিদ্বান ভিক্ষু বিনায়ক রাম ও সেলভাগণেশ বিনায়ক রাম। খেয়াল পরিবেশন করবেন সরকারি সঙ্গীত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সরোদ পরিবেশন করবেন আবির হোসেন, বাঁশি বাজিয়ে শোনাবেন গাজী আবদুল হাকিম, ধ্রুপদ পরিবেশন করবেন পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকর এবং বেহালায় সুর তুলবেন বিদুষী কালা রামনাথ। অজয় চক্রবর্তীর খেয়াল পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তৃতীয় রাতের পরিবেশনা।

বাকি দিনগুলোর আয়োজন : উৎসবের চতুর্থ দিন অর্থাৎ শুক্রবারের আয়োজনের শুরুতেই রয়েছে শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশনা। মনিপুরি, ভরতনাট্যম ও কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবেন সুইটি দাস, অমিত চৌধুরী, স্নাতা শাহরিন, সুদেষ্ণা স্বয়মপ্রভা, মেহরাজ হক এবং জুয়াইরিয়াহ মৌলি। সরোদ বাজিয়ে শোনাবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। খেয়াল পরিবেশন করবেন ওস্তাদ রাশিদ খান, সরোদ বাজাবেন তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, বেহালা বাজিয়ে শোনাবেন ড. মাইশুর মঞ্জুনাথ, খেয়াল পরিবেশন করবেন যশরাজ। চেলোতো সঙ্গীত পরিবেশন করবেন সাসকিয়া রাও দ্য-হাস। সবশেষে রয়েছে বুদ্ধাদিত্য মুখার্জির সেতার পরিবেশনা।

উৎসবের পঞ্চম ও শেষ দিন শনিবারের আয়োজনের শুরুতেই রয়েছে বিদুষী সুজাতা মহাপাত্রের ওড়িশি নৃত্যের পরিবেশনা। মোহন বীণা পরিবেশন করবেন বিশ্বমোহন ভট্ট, খেয়াল পরিবেশন করবেন ব্রজেশ্বর মুখার্জি, যৌথভাবে সেতার বাদনে অংশ নেবেন কুশল দাস ও কল্যাণজিত দাস, সেতার বাজিয়ে শোনাবেন কৈবল্যকুমার। অন্যান্যবারের মতো এবারও হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশি বাদনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে উৎসব।

View Full Article