Menu

উচ্চাঙ্গসংগীত নিয়ে এত বড় আয়োজন কোথাও দেখিনি

thumbnail

রাকেশ চৌরাশিয়া ভারতের খ্যাতিমান বাঁশিশিল্পীদের একজন। কিংবদন্তি বাঁশিশিল্পী হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার এই বংশধর এবার অংশ নিয়েছেন বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে। শুনিয়েছেন বাঁশির অনবদ্য পরিবেশনা। আলোচিত সেতারশিল্পী পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার বাঁশির যুগলবন্দি উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। রাকেশ চৌরাশিয়ার সঙ্গে কথা বলে লিখেছেনÑ ফয়সাল আহমেদবেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে পরিবেশনার অভিজ্ঞতা কেমন?

এতদিন শুধু শুনেছি, বাংলাদেশে উচ্চাঙ্গসংগীতের বড় এক উৎসব হয়।  সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সুবাদে যতটুকু জেনেছি, তাতে মুগ্ধ হয়েছি।  কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা একেবারেই আলাদা।  ভাবিনি, এদেশে উচ্চাঙ্গসংগীতের এত কদর।  উৎসবে অংশ নিয়ে তার প্রমাণ পেলাম।  আমি যখন কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানে অংশ নেই, আশা করি দর্শক যেন অগণিত হয়।  সংগীত পরিবেশনের সময় তারা যেন উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে।  এই উৎসব নিয়েও তেমন প্রত্যাশা ছিল।  কিন্তু উৎসবে অংশ নেওয়ার পর যা চোখে পড়েছে, তা প্রত্যাশার বেশি কিছু। তাই স্বীকার করতেই হয়, উচ্চাঙ্গসংগীত নিয়ে এমন বিশাল আয়োজন আর কোথাও দেখিনি।  পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার বংশধর বলে তার বাঁশি বাদনের সঙ্গে অনেকে আপনার বাদনের তুলনা করেন। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার বাঁশি বাদন আমাকে শুধু মুগ্ধই করেনি, শিল্পী হওয়ারও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।  তাই কখনো অস্বীকার করি না, বাঁশিশিল্পী হওয়ার পেছনে হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার প্রভাব সব সময় ছিল।  কিন্তু আমি কখনো তার অনুকরণ করিনি।  কারণ তা সম্ভব নয়।  যতই অনুকরণ করি না কেন, তার নিজস্বতাকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারব না।  একই রাগ, একই সংগীত ভিন্ন ভিন্ন বাদকে ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে।  এভাবেই একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যায়। এজন্য হাতে খড়ির পর থেকে নিজের মতো করে সংগীত সাধনা করে যাচ্ছি।  আমি জানি প-িত হরিপ্রসাদের বংশধর বলেই তার বাঁশি বাদনের সঙ্গে আমার পরিবেশনার তুলনা করেন অনেকে।  কিন্তু আমি সব সময় মনে করি, হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার মতো সংগীত মহারথীর সঙ্গে আমার তুলনা চলে না কোনোভাবেই।  সংগীত পরিবেশনায় আজকাল যুগলবন্দি বেশি চোখে পড়ছে।  এর কারণ কী? অন্যান্য সংগীতে যখন ফিউশন হচ্ছে, তখন রাগের যুগলবন্দিতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়।  তা ছাড়া যুগলবন্দি এক ধরনের প্রতিতার মতো।  ভিন্ন ভিন্ন বাদ্যের সঙ্গে একই রাগ পরিবেশনের কৌশলটাও সহজ নয়।  এটা করতে গিয়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা যেমন হয়েছে, তেমনই শিল্পী হিসেবে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করার সুযোগ পেয়েছি।  ওস্তাদ জাকির হোসেন, এডগার মায়ার, জোশুয়া রেডম্যান, বেলা ফেকসহ অন্য যাদের সঙ্গে যুগলবন্দি বাজিয়েছি; অগণিত দর্শকের সাড়া পেয়েছি।  এতে স্পষ্ট, দর্শক-শ্রোতাদেরও যুগলবন্দি পছন্দ।  এজন্য আমি নিজেও বাঁশির সঙ্গে অন্যান্য বাদ্যের যুগলবন্দি পছন্দ করি।  কিন্তু সব সময়ই চাই রাগের শুদ্ধতা ধরে রাখতে।  পাশাপাশি কোনো বাদ্য যেন প্রাধান্য না পায় সেটাও খেয়াল রাখি।  আমি মনে করি, যুগলবন্দি এমন হওয়া উচিত; যেখানে একধিক বাদ্যের বাদন এক হয়ে যায়।নিরীক্ষাধর্মী কাজ নিয়ে আপনার ভাবনার কথা জানতে চাই।  মনের গহিনে ডুবে গিয়ে তুলে আনতে হয় সুরের অনুষঙ্গ।  সেটা স্পষ্ট করে তুলে ধরতে অনেক সময় নিরীক্ষাধর্মী কাজ করতে হয়।  এর মধ্য দিয়ে নিজস্ব ভাবনাকে নানা মাত্রায় তুলে ধরা যায়।  এজন্য নিরীক্ষাধর্মী কাজকে আমি সমর্থন করি।  নিজেও চেষ্টা করি নানা আঙ্গিকে সংগীত পরিবেশনের।  কাজের ক্ষেত্রে স্বীকৃতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন? দর্শক-শ্রোতার ভালোবাসার চেয়ে বড় পুরস্কার আর কিছু হতে পারে না।  তারপরও যখন রাষ্ট্র কিংবা কোনো সংগঠন বা অনুষ্ঠান আয়োজক, পৃষ্ঠপোষক কোনো সম্মাননা দেয় সেটাকে আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা বলেই মনে করি।  আমিও ভারতীয় মিউজিক একাডেমি পুরস্কার, ড. এপিজে আবদুল কালাম পুরস্কার, আদিত্যর বিড়লা কালাকিরাণ পুরস্কারসহ আরও অনেক পদক ও সম্মাননা পেয়েছি।  এই প্রাপ্তি আমাকে এটাই মনে করিয়ে দেয়, আমাকে আজীবন সংগীত সাধনা করে যেতে হবে।  আর সংগীতের মাধ্যমেই শ্রোতাদের মনে অনুরণন তুলে যেতে হবে প্রতিটিক্ষণ।

 

View Full Article