Menu

উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের আসর আজ শেষ – ভোরে বাঁশি বাজাবেন চৌরাসিয়া

thumbnail উৎসবের চতুর্থ দিনে তবলায় তিনতালে মুগ্ধ করেন নীলেশ রণদেব : নয়া দিগন্ত

 

জনরুচি, জীবন ও মননে মাত্রা সঞ্চারের প্রয়াস নিয়ে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের সবচেয়ে বড় আয়োজন আর্মি স্টেডিয়ামে। এ সঙ্গীতের ঐতিহ্য অনেক প্রাচীন হলেও নতুন আঙ্গিকে তা জানার সুযোগ করে দিয়েছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব। দেশে এ সঙ্গীতের নতুন একটি প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি এ উৎসবের নানা আয়োজন বাড়িয়ে দিয়েছে এর মাহাত্ম্য। অনুষ্ঠানের শেষ দিনে আজ মঞ্চে উঠবেন অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ বাঁশির জাদুকর হিসেবে পরিচিত পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। তাকে তবলায় সহযোগিতা করবেন পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। চৌরাসিয়া ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত বেনারসের পণ্ডিত রাজা রামের কাছে কণ্ঠসঙ্গীতে তালিম নেন। পরে পণ্ডিত ভোলানাথের বাঁশি শুনে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, বাঁশিবাদন শিখবেন। পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া সবার শ্রদ্ধাভাজন, ভারতের অন্যতম বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ। তার অর্জন ও সম্মাননার তালিকা দীর্ঘ। ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ, সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার ও ন্যাশনাল অ্যামিনেন্স অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করেছে। ডাচ রাজপরিবারের পক্ষ থেকে ‘অফিসার ইন দ্য অর্ডার অব ওরাঞ্জ ন্যাসো’ খেতাব এবং ফরাসি সরকারের পক্ষ থেকে নাইট উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। পণ্ডিত হরিপ্রসাদ বর্তমানে রটারড্যাম মিউজিক কনজারভেটরির ওয়ার্ল্ড মিউজিক বিভাগের আর্টিস্টিক ডিরেক্টর।
বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে উৎসব প্রাঙ্গণের ভেতরে-বাইরে ব্যানারগুলোতে বিখ্যাত উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিল্পীদের নানা ছবির মধ্যে দিয়ে স্বনামধন্য সব শিল্পীকে জানছেন আগতরা। প্রদর্শিত হচ্ছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে ব্যবহার হওয়া বিভিন্ন যন্ত্র। শিশুসহ নানা বয়সীরা তা দেখছেন। একই সাথে এ সঙ্গীতের অনুষঙ্গের সাথে পরিচিত হচ্ছেন। সুরের জাদুতে ভাসতে ভাসতেই অনেকেই ঘুরে আসতে পারছেন ঢাকা নিয়ে বিশেষ স্থাপত্য প্রদর্শনী ‘আগামীর ঢাকা’ থেকে। যেখানে বুড়িগঙ্গা নদীর দুই তীরে আধুনিক এক ঢাকার চেহারা ফুটে উঠেছে। পুরনো এবং নতুন ঢাকা পুরোটাই প্রদর্শন করা হয়েছে নতুন আঙ্গিকে। খিদে পেলে ফুড কোর্টে গিয়ে খেতে খেতেও উপভোগ করা যাচ্ছে সঙ্গীতের মাধুর্য। আছে প্রিয় শিল্পীর সঙ্গীত সংকলন সংগ্রহের সুযোগ। সবচেয়ে বড় কথা নানা ধরনের উচ্ছাঙ্গসঙ্গীত সরাসরি উপভোগ করে তার রস আস্বাদন করা যাচ্ছে। এমনই আয়োজনে ভরা উৎসবটির চতুর্থ রজনী ছিল গতকাল রোববার।
চতুর্থ দিন গতকাল উৎসব শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টায় কত্থক নৃত্যের মাধ্যমে। পরিবেশন করেন মুনমুন আহমেদ ও তার দল রেওয়াজ। পরিবেশনার শেষে মুনমুন আহমেদের হাতে স্মারক তুলে দেন প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী। পরবর্তী পরিবেশনা ছিল নীলেশ রণদেবের। তিনি তবলায় তিনতাল বাজিয়ে মুগ্ধ করেন দর্শকদের। হারমোনিয়াম সহযোগিতায় ছিলেন মিলিন্দ কুলকার্ণি। পরিবেশনা শেষে শিল্পীর হাতে উৎসাবের স্মারক তুলে দেন বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম।
খেয়াল পরিবেশন করেন জয়তীর্থ মেউন্ডি। যুগলন্দি তবলা বাজিয়েছেন পণ্ডিত যোগেশ শাসসি ও পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়া মাঝরাতে কর্ণাটক কণ্ঠসঙ্গীতের যুগলবন্দি করবেন রঞ্জনী ও গয়ত্রী। সরোদ পরিবেশনে পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার। ভোরে পণ্ডিত অজয় চত্রবর্তীর খেয়াল পরিবেশনার মাধ্যমে চতুর্থ দিনের আয়োজন শেষ।
তৃতীয় দিনের সর্বশেষ পরিবেশনা ছিল ওস্তাদ রাশিদ খানের। তিনি ভারতের অন্যতম খেয়ালিয়া। প্রতিভাধর এ শিল্পী অল্প বয়সেই তার কণ্ঠমাধুর্য ও গায়নশৈলীর জন্য সুনাম অর্জন করেন। তিনি রামপুর-সহসওয়ান ঘরানার প্রতিষ্ঠাতা এনায়েত হোসেন খঁাঁর প্রপৌত্র এবং ওস্তাদ গোলাম মুস্তফা খাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে মূলত তালিম নেন তার মাতামহ ওস্তাদ নিসার হোসেন খাঁর কাছে। তার গায়নে বিশেষত্বের ছাপ রেখেছেন বিলম্বিত আলাপের আবেগময়তায়, বিস্তারের গভীরতায় ও তানকারীর ব্যতিক্রমী দক্ষতায় ও ব্যঞ্জনে।
২০০৬ সালে রাশিদকে ভারত সরকার পদ্মশ্রী ও সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পদকে ভূষিত করে। ২০১০ সালে ওয়ার্ল্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস ও ২০১২ সালে সঙ্গীত মহাসম্মান পুরস্কার পান। রশিদ খান শুরুতে রাগ ললিত পরিবেশন করেন। ঠুমরী ‘ইয়াদ পিয়া কি আয়ি’ পরিবেশনের মাধ্যমে শেষ করেন তিনি। অসামান্য সঙ্গীতের সাথে তবলায় তাল দেন পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ পরিবেশনায় ভোকালে ছিলেন কৃষ্ণা বোগানে, হারমোনিয়ামে অজয় যোগলেকার, সারঙ্গিতে মুরাদ আলী খান এবং তানপুরায় এলভিন মজুমদার ও সামিন ইয়াসার। শিল্পীর হাতে উৎসবের সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
অনুষ্ঠানের পঞ্চম ও শেষ দিন আজ সোমবার। শুরু হবে দলীয় কণ্ঠসঙ্গীত দিয়ে। পরিবেশন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তবলায় থাকবেন জাকির হোসেন ও সরূপ হোসেন। এ ছাড়াও থাকবে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীদের দলীয় সেতার। হবে সমাপনী অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথি থাকবেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো রয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক ও ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। সমাপনীর পর সন্তর পরিবেশন করবেন, পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা। তবলায় থাকবেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি। খেয়াল : কুমার মারদুর। তবলায় আজিঙ্কা যোশি। সেতার : পণ্ডিত কুশল দাস। পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। খেয়াল : আরতী আঙ্কালিকার। তবলায় রোহিত মজুমদার। সঙ্গীত উপভোগের পাশাপাশি শ্রোতাদের জন্য খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা রয়েছে উৎসব প্রাঙ্গণে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্টলে পাওয়া যাবে আইস মিডিয়ার ম্যাগাজিন ও বেঙ্গল পাবলিকেশনসের বই। চার বছর ধরে আয়োজিত ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব’ শিল্পী ও দর্শকের অংশগ্রহণের নিরিখে এরই মধ্যে এ উপমহাদেশে তথা বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিসরে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের আসর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ বছর উৎসবটি উৎর্সগ করা হয়েছে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের স্মৃতির উদ্দেশে।

 

View Full Article