উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবে আজকের তারকারা
আবার এলো শুদ্ধসঙ্গীতের ইন্দ্রজালে বন্দি হওয়ার সময়। বিশ্বের খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী, বাদক ও নৃত্যশিল্পীদের নিয়ে আজ শুরু হচ্ছে ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব ২০১৭’। পঞ্চরজনীর এই আয়োজনে আজ থাকছে উৎসবের প্রথম দিন ড. এল সুব্রহ্মণ্যনের এবং আসতানা সিম্ম্ফনি ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রার পরিবেশনা। এদিন সরোদের অনিন্দ্য সুর ঝঙ্কার তুলে ধরতে মঞ্চে উঠবেন রাজরূপা চৌধুরী। খেয়াল পরিবেশনায় থাকবেন বিদুষী পদ্মা তালওয়ালকর, সুপ্রিয়া দাস এবং বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিল্পীরা। অন্যদিকে ফিরোজ খান ও পূর্বায়ন চ্যাটার্জি তুলে ধরবেন তাদের অনবদ্য সেতার বাদন। রাকেশ চৌরাশিয়া শোনাবেন বাঁশির হৃদয়গ্রাহী মূছর্না
ড. এল সুব্রহ্মণ্যন
বেহালার মুকুটহীন সম্রাট বলা ড. এল সুব্রহ্মণ্যনকে। শুধু তাই নয়, ভারতীয় এই সঙ্গীতজ্ঞকে বিশ্বের খ্যাতিমান বেহালাশিল্পীদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কারণ তিনিই একমাত্র ভারতীয় শিল্পী, যার পরিবেশনায় প্রাধান্য পেয়েছে দক্ষিণ ভারতীয় উচ্চাঙ্গসঙ্গীত, পাশাপাশি পশ্চিমা ধ্রুপদী সঙ্গীত। এ ছাড়াও তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করেছেন স্টিভ ওয়ান্ডার, ইয়েহুদি মেনুহিন, জঁ পিয়ের, স্টেফান গ্রাপ্পেল্লি, রামপাল ছাড়াও বিশ্বনন্দিত শিল্পীদের সঙ্গে। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের দর্শকের কাছে আগে থেকেই তিনি পরিচিত। যে জন্য তার অনবদ্য পরিবেশনা শোনার জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন অনেকে। প্রতীক্ষার আরও একটি কারণ বেহালার সঙ্গে এবার তিনি অর্কেস্ট্রার পরিবেশনা তুলে ধরবেন। তার সঙ্গে থাকছেন আসতানা সিম্ম্ফনি ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রা দল। যেজন্য ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের ২০১৭’-এ আজকের অন্যতম আকর্ষণ মানা হচ্ছে তাকে। গ্র্যামির জন্য মনোনীত এই শিল্পী একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। সঙ্গীতে অবদানের জন্য ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পেয়েছেন পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ পদক।
ভারতের জনপ্রিয় প্লেব্যাক শিল্পী কবিতা কৃষ্ণমূর্তি তার জীবনসঙ্গী।
বিদুষী পদ্মা তালওয়ালকর
খেয়ালের বিশ্বনন্দিত এক শিল্পীর নাম বিদুষী পদ্মা তালওয়ালকর। গোয়ালিয়র, কিরানা, জয়পুর ঘরানার খেয়াল পরিবেশন করে তিনি জয় করেছেন অগণিত সঙ্গীতপ্রেমীর হৃদয়। এই অনবদ্য গায়কি রপ্ত করার পেছনে পিতামহ কানেবুভা ও পণ্ডিত গঙ্গাধরবুভার অবদান বলে তিনি স্বীকার করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি মোগহুবাঈ কুর্দিকর এবং গজানরাও জোশির সাহচর্যে সঙ্গীত সাধনা করার সুযোগ পান। তালওয়ালকরের সঙ্গীত শ্রেষ্ঠতর গুরানসদের একটি অনন্য মিশ্রণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তিনি সঙ্গীত নাটক একাডেমি পুরস্কার, রাজহাঁস প্রতিষ্ঠান পুরস্কার, শ্রীমতী ভাটসালাবাঈ ভীমসেন জোশি পুরস্কার, পণ্ডিত যশরাজ পুরস্কারসহ আরও অনেক পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন। তবলাশিল্পী সুরেশ তালওয়ালকার স্ত্রী তিনি। তাদের দুই সন্তান সত্যজিৎ ও সাবানি তালওয়ালকর দু’জনই তবলাশিল্পী।
পূর্বায়ন চ্যাটার্জি
ভারতের প্রখ্যাত সেতারবাদকদের অন্যতম একজন পূর্বায়ন চ্যাটার্জি। ভারতের পাশাপাশি তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সেতার বাজিয়ে দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। খ্যাতিমান তবলাশিল্পী ওস্তাদ জাকির হোসেনের সঙ্গে যুগল পরিবেশনের অভিজ্ঞতা আছে তার। এ ছাড়াও সঙ্গীত পরিচালক শঙ্কর মহাদেবনের সঙ্গে সম্মিলিত কাজ করেছেন তিনি। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি সেতারে ফিউশন ঘরানার সঙ্গীত পরিবেশন করেও সঙ্গীতপ্রেমীদের মাঝে সাড়া জাগিয়েছেন তিনি।
রাকেশ চৌরাশিয়া
‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব ২০১৭’-এর প্রথম রজনীতে বাঁশিতে শাস্ত্রীয় অনিন্দ্য সুর তুলে ধরবেন রাকেশ চৌরাসিয়া। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সাড়া জাগানো এই শিল্পী কিংবদন্তি বাঁশিশিল্পী পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বংশধর। সম্পর্কে ভাগ্নে। তবে রাকেশ চৌরাশিয়া একক কাজের মধ্য দিয়েই নিজের পরিচিতি গড়ে নিয়েছেন। ওস্তাদ জাকির হোসেন, এডগার মায়ার, বেলা ফ্লেক, জোশুয়া রেডম্যানসহ অন্যান্য সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গেও কাজের বোঝাপড়াও বেশ ভালো। ভারতের পাশাপাশি ফ্রান্সের প্যারিসে সেন্ট ডেনিস উৎসব, ইংল্যান্ডে লিসেস্টার ইন্টারন্যাশনাল মিউজিক ফেস্টিভ্যাল এবং বিবিসি রেডিওতে সঙ্গীত পরিবেশন করে আলোচিত হয়েছেন রাকেশ। ভারতীয় মিউজিক একাডেমি পুরস্কার, ড. এ পি জে আবদুল কালাম পুরস্কার, আদিত্যর বিড়লা কালাকিরাণ পুরস্কারসহ আরও অনেক পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
রাজরূপা চৌধুরী
রাজরূপা চৌধুরী বাংলাদেশের শিল্পী হলেও তিনি জন্মগ্রহণ করেন কলকাতায়। মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকে ওস্তাদ আমীর খান স্কুল অব ইন্সস্টুমেন্টাল মিউজিকে সরোদ শেখেন প্রণব নাহার অধীনে। তিনি পণ্ডিত অজয় সিনহা রায় এবং সিদ্ধার্থ রায় চৌধুরীর কাছ থেকেও তালিম গ্রহণ করেন। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণির পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি অধ্যাপক সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তালিম নেন। রাজরূপার বাদনশৈলী গঠনে অধ্যাপক সঞ্জয়ের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশে বসবাস করছেন।
ফিরোজ খান
ফিরোজ খান বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সেতার শিল্পী। ওস্তাদ খুরশিদ খানের সঙ্গীত দ্বারা তিনি প্রভাবিত। সেতারে তিনি দীক্ষা নিয়েছেন লক্ষ্মীকান্তর অধীনে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সঙ্গীত পরিবেশন করে আলোচিত হয়েছেন এই শিল্পী। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সুপ্রিয়া দাস
সুপ্রিয় দাস বাংলাদেশের একজন খেলায় শিল্পী। আজ তিনি বেঙ্গল পরম্পরার হয়ে খেয়াল পরিবেশন করবেন। তিনি বর্তমানে পণ্ডিত উল্লাস কর্মকারের কাছে দীক্ষা নিচ্ছেন।