কত্থক নৃত্য নয় যেন গল্প!
শরীফা বুলবুল : কত্থক মানে গল্প বলা। বিদ্যুৎচমকের মতো একেকটি নৃত্যের মুদ্রায় যেন অনেক গল্প বলে গেলেন অদিতি মঙ্গল দাস ও তার দল। শিল্পের সুষমা ছড়াতে শিল্পীরা শুধু নূপুরের রিনিঝিনির শব্দে দ্যোতনাই সৃষ্টি করলেন না, দোলা দিয়ে গেলেন উচ্চমার্গীয় এই শাস্ত্রীয় নৃত্যানুরাগীদের হৃদয়ের গহিনেও। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডি আবাহনী মাঠে আগত নৃত্যানুরাগীদের কত্থক নৃত্যের শাস্ত্রীয় মুদ্রায় অভিভূত করে দর্শনার্থীদের।
কত্থক নাচের উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী ভারতীয় অদিতি মঙ্গলদাস ও তার দলের অনবদ্য পরিবেশনার মধ্য দিয়েই আসরের দ্বিতীয় রাতের উদ্বোধন হয়। আবেগিক অনুভূতির মধ্য দিয়ে এই শিল্পী ও তার দল মঞ্চকেই দোলাননি, দুলিয়েছেন মাঠে আগত শাস্ত্রীয় সুরে নিমগ্ন সবাইকে। এরপর ‘তবলা’য় ইন্দ্রজাল সৃষ্টি করেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীত শিক্ষালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবলার বোলে বোলে ব্যাকরণগত সুরের দোলায় মুগ্ধ করে তোলে শ্রোতাদের। পরে সন্তুর বাজিয়ে শোনান পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা। ‘খেয়াল’ এ তন্ত্রমুগ্ধের মায়াজাল ছড়িয়ে দেন পণ্ডিত উল্লাস কশলকর। রাতের নির্জনতায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনন্য ‘খেয়াল’ নিমজ্জিত হয়ে মাঠভর্তি শ্রোতারা হারিয়ে যায় ধ্যানের নিমগ্নতায়। এছাড়া রাতে সেতারে সুর তোলেন ওস্তাদ শাহিদ পারভেজ খান। ‘ধ্রæপদ’-এর মোহনীয়তায় মানসপটে সুন্দরের চিত্র এঁকে দেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী অভিজিৎ কুণ্ডু। এরপর বাঁশি নিয়ে মঞ্চে আসেন পণ্ডিত রনু মজুমদার। তার সঙ্গে সরোদে যুগলবন্দি ছিলেন পণ্ডিত দেবজ্যোতি বোস। সরোদ আর বাঁশির যুগলবন্দি পরিবেশনায় সুরের সাগরে ঢেউ খেলে যায় পুরোমাত্রায়। হালকা, মৃদু আর উচ্চমাত্রার দমে এ সময় অনুষ্ঠানের পরিবেশে বিরাজ করে শুদ্ধ সুরের মুগ্ধতা। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র ছেদ পড়েনি ধ্যানে মগ্ন শ্রোতাদের। স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যে সাধনায় আসরেই পরিণত হয় আবাহনীর মাঠ। আর সেই সাধনার রেশ রেখেই পণ্ডিত রনু মজুমদারের বাঁশি আর পণ্ডিত দেবজ্যোতি বোসের সরোদের যুগলবন্দি পরিবেশনার মধ্য দিয়েই ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব ২০১৭’-এর দ্বিতীয় রাতের আসরের সমাপ্তি ঘটে।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এবারের উৎসবের নিবেদক স্কয়ার গ্রুপ। উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামানকে। ৩০ ডিসেম্বর শনিবার শেষ হবে পাঁচরাতের দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের আসর।