Menu

সেতার খেয়ালে মাতোয়অরা শ্রোতা

thumbnail

প্রথম, দ্বিতীয় রাতের মতো তৃতীয় রাতেও বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসব ২০১৬-র সুরের ধারায় মাতোয়ারা ছিলেন হাজারো শ্রোতা-দর্শক। আর্মি স্টেডিয়ামে মোহাবিষ্টরা বুঁদ ছিলেন সন্ধ্যা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত। তবলা, সেতার, বাঁশি আর খেয়ালে জমেছিল এই সুরের হাট। বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীদের দলীয় সরোদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় শুরু হয় তৃতীয় রাতের আয়োজন। সরোদে রাগ কাফি পরিবেবেশন করেন বেঙ্গল পরম্পরার শিক্ষার্থীরা। এরপর বাঁশির সুরে ধ্রুপদীর চেতনায় শান দিয়ে দেন কর্নাটকি সংগীত রীতির বংশীবাদক শশাঙ্ক সুব্রহ্ম্যণন। ভারতে ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জন ম্যাক্লফিলন, পাকো দ্য লুচা, জাকির হোসেন, সুলতান খান, বিশ্বমোহন ভট্, অজয় চক্রবর্তীসহ শাস্ত্রীয় সংগীতের বহু স্বনামধন্য শিল্পীর সঙ্গে বাঁশি বাজিয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালে জন ম্যাক্লফিলনের সঙ্গে বাঁশি বাজানোর জন্য গ্র্যামির মনোনয়ন লাভ করেন তিনি। পরিবেশনার সময় শিল্পীকে মৃদঙ্গমে সংগত করেন পারুপল্লী ফাল্পুন ও তবলায় সত্যজিৎ তালওয়ালকার। শশাঙ্ক সুব্রহ্ম্যণনের বাঁশির জাদুর রেশ কাটতে না কাটতেই খেয়াল নিয়ে মঞ্চে আসেন ভারতীয় ক্লাসিক্যাল মিউজিকের স্বনামধন্য শিল্পী ড. প্রভা আত্রে। কিরানা ঘরানার অন্যতম অগ্রজ শিল্পী তিনি। ড. আত্রের খেয়ালে সমগ্র আর্মি স্টেডিয়ামে নেমে আসে সুনসান নীরবতা। ধ্রুপদী সুরের ইন্দ্রজালে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সমজদারদের সুরের সমুদ্রে নিমজ্জিত করেন খেয়াল, ঠুমরি, দাদরা, গজল ও নাট্যসংগীতে সমান পারঙ্গম শিল্পী ড. প্রভা আত্রে। তার সঙ্গে তবলায় ছিলেন রোহিত মজুমদার। এরপর অঙ্গুলির ছোঁয়ায় তবলার তালে তালে ছন্দময় পরিবেশের সৃষ্টি করে সুরের এই উৎসবকে প্রাণের উৎসবের পরিণত করেন পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমনসে তিনিই প্রথম ভারতীয় শিল্পী, যিনি তবলা পরিবেশন করেন। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ফরুখাবাদ বাদনরীতির একজন অন্যতম ধারক ও বাহক। পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের তবলার জাদুকরী পরিবেশনা শেষে ধ্রুপদ নিয়ে মঞ্চে আসেন বিশিষ্ট শিল্পী পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকার। পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকারের পর সেতার পরিবেশন করেন পণ্ডিত সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। বাদনে স্বতঃস্ফূর্ততা তার সংগীতশৈলীকে বিশিষ্ট করে তুলেছে। ইউনেস্কোর প্লেনারি অধিবেশনে কৃতিত্বের সঙ্গে সংগীত পরিবেশন করেছেন। উৎসবের তৃতীয় রাতের শেষ চমক ছিল ওস্তাদ রশিদ খানের খেয়াল। রামপুর-সহস ওয়ান ঘরানার প্রতিষ্ঠাতা এনায়েত হোসেন খাঁঁর প্রপৌত্র এবং ওস্তাদ গোলাম মুস্তফা খাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র এই শিল্পীর খেয়াল জাদুর পরশ দিয়ে যায় শুদ্ধসংগীতের অনুরাগীদের হূদয়ে। বিলম্বিত আলাপের আবেগময়তায় গায়কীতে তিনি বিশেষত্ব রেখে নিজের পরিবেশনা শেষ করেন। তার সঙ্গে তবলায় সংগত করেন পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। পণ্ডিত রবিশঙ্কর, জন ম্যাক্লফিলন, ওস্তাদ রশিদ খান, ওস্তাদ আমজাদ আলি খাঁ, পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার মতো শিল্পীদের সঙ্গে দেশে বিদেশে তবলা পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেছেন শুভঙ্কর। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে শুরু হওয়া ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব ২০১৬’ এর নিবেদক স্কয়ার গ্রুপ। আয়োজনের সমর্থন করছে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড। অনুষ্ঠানে সম্প্রচার সহযোগী মাছরাঙা টেলিভিশন। মিডিয়া পার্টনার আইস বিজনেস টাইমস। আতিথেয়তা সহযোগী র‌্যাডিসন হোটেল। সার্বিক সহযোগিতায় বেঙ্গল গ্রুপ। অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে বেঙ্গল ডিজিটাল, ম্যাংগো, বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয় ও পারফেক্ট হারমনি প্রোডাকশনস্ সিঙ্গাপুরের সহযোগিতায়। ইভেন্ট ব্যবস্থাপনায় ব্লুজ কমিউনিকেশনস। গত চার বছর ধরে আয়োজিত ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব’ শিল্পী ও দর্শকের অংশগ্রহণের নিরিখে এরই মধ্যে এই উপমহাদেশে তথা বিশ্বে সর্বাধিক বড় পরিসরের উচ্চাঙ্গসংগীতের আসর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের (১৯৩৫-২০১৬) স্মৃতির উদ্দেশে এ বছর উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে।

আজ চতুর্থ রাতের পরিবেশনা : আজ উৎসবের চতুর্থ দিন মুনমুন আহমেদ ও তার দল রেওয়াজের দলীয় কত্থক নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দিনের শুরু হবে।

তবলা পরিবেশন করবেন নীলেশ রণদেব। খেয়াল পরিবেশন করবেন জয়তীর্থ মেউন্ডি। তবলায় যুগলবন্দী পরিবেশনা থাকছে যোগেশ শামসি ও পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কর্নাটক কণ্ঠসংগীতের যুগলবন্দী পরিবেশনা থাকবে রঞ্জনী ও গায়ত্রীর। সরোদ পরিবেশন করবেন পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার। তার সঙ্গে তবলায় থাকবেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর খেয়াল পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে চতুর্থ দিনের পরিবেশনা।

 

View Full Article