গানের যুগ-সারথি 2012
শাস্ত্রীয়সংগীত চর্চায় আমাদের ঐতিহ্য আছে। হাজার বছরের বাংলা গান চর্যাপদ থেকে শুরম্ন করে গীতগোবিন্দ, মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণবপদাবলিতে অসংখ্য প্রাচীন রাগের সন্ধান পাওয়া যায়। এদেশে উচ্চাঙ্গসংগীত চর্চার ÿÿত্রে ওসত্মাদ আলাউদ্দিন খাঁ থেকে শুরম্ন করে বিংশ শতক পর্যমত্ম বাংলাদেশের প্রত্যমত্ম অঞ্চলে যে সকল সংগীতসাধক অবদান রেখেছেন, অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীকে আলোকিত করেছেন, এই যুগ-সারথীদের প্রতি রইল আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।
উচ্চাঙ্গসংগীতের উজ্জ্বল অতীত আমরা হারাতে বসেছি, আমরা ভুলে গেছি শুদ্ধ সংগীতের স্বজনদের। এই প্রদর্শনীর জন্য অল্প সময়ে যে কয়জন সংগীতসাধকের তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে তা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হলো। ময়মনসিংহ জেলার উজ্জ্বল সাংগীতিক ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের ময়মনসিংহ শাখা এ ধরনের একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে, যা দেখে আমরা উদ্বুদ্ধ হই। সম্মিলন পরিষদের আতিকুল আলম যে সংগ্রহ রেখে গিয়েছিলেন তার সঙ্গে অন্যান্য জেলার সংগীতচর্চার ইতিহাস সংযোজন করার চেষ্টা আমরা করেছি। অকালপ্রয়াত আতিকুল আলমের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি এই প্রদর্শনীর মাধ্য দিয়ে। বেঙ্গল আইটিসি এসআরএ উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব উপলÿÿ আপনাদের সামনে এই প্রদর্শনী তুলে ধরতে পেরে আমরা আনন্দিত। তবে তথ্য সংগ্রহ যা হয়েছে তা অপ্রতুল এবং কোনোভাবেই বাংলাদেশের সাংগীতিক ইতিহাসের প্রতিনিধিতব করে না, একটা ধারণা দেয় মাত্র। এই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজটি অব্যাহত থাকবে। এ আমাদের পথচলার শুরম্ন।
সংগীতের সুদিনকে ফিরিয়ে আনতে হলে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে। ইতিহাসকে জানতে হবে এবং তা থেকে শক্তি অর্জন হবে। বাংলাদেশে শাস্ত্রীয়সংগীত চর্চার প্রামাণ্য ইতিহাস দাঁড় করাতে হলে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। আপনার কাছে এই সংক্রামত্ম কোনো তথ্য, উপাত্ত বা ছবি থাকে তা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন। আমরা সকলে মিলে ঋদ্ধ করতে চাই আমাদের সংস্কৃতিকে। আমরা বিশ্বাস করি সংগীতের সুদিন অন্বেষায় এই পথচলাতে আপনি হবেন আমাদের সহযাত্রী।
![thumbnail](https://bengalclassicalmusicfest.com/wp-content/uploads/2016/10/Vishmadev-Chattopadhyay.jpg)
ভীস্মদেব চট্টোপাধ্যায় ১৯০৯-১৯৭৭
বাঙালিদের মধ্যে যাঁরা হিন্দুস্তানি খেয়াল গায়ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাধর ছিলেন ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়। বালক ভীষ্মদেবের গান শুনে খলিফা বদল খাঁ চমৎকৃত হন এবং তাঁকে শেখাতে সম্মত হন। বদল খাঁ সাহেবের অধীনেই সংগীতাভ্যাস গড়ে ওঠে। মাত্র পনেরো বছর বয়সে প্রথম গানের রেকর্ড করেন। কাজী নজরুল ইসলামের কল্যাণে ভীষ্মদেব তেইশ বছর বয়সেই মেগাফোন কোম্পানির সংগীত নির্দেশক হিসেবে নিযুক্ত হন। গায়ক ও সুর¯্রষ্টারূপে যখন খ্যাতির তুঙ্গে ঠিক সেই সময় ১৯৪০ সালে প-িচেরিতে অরবিন্দ আশ্রমে চলে যান। গ্রামোফোন রেকর্ডে তাঁর প্রতিভার পরিচয় বাণীবদ্ধ আছে। ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায় এসেছিলেন মুক্তাগাছার জমিদারের কাছে এবং জীবেন্দ্রকিশোর ভীষ্মদেবের ভৈরবী বাংলা খেয়ালের সুর সংশোধন করে দিয়েছিলেন। ভীষ্মদেবের এই গান বাংলা খেয়ালের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম শচীন দেববর্মন, ঊমা বসু, কাননবালা, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, যূথিকা রায় ও আখতারি বাই।
![thumbnail](https://bengalclassicalmusicfest.com/wp-content/uploads/2016/10/Bonbithy-Sengupta.jpg)
বনবীথি সেনগুপ্তা ১৯২০-১৯৯১
বনবীথি সেনগুপ্তা চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় ১৯২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নাচ, গান, আবৃত্তি, অভিনয় ও ছবি অাঁকায় দক্ষ ছিলেন। তিনি অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্সে ভজন-কীর্তন পরিবেশন করে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি স্কুলের সংগীতশিক্ষক ছিলেন। চট্টগ্রামে সংগীতভবন প্রতিষ্ঠায় তাঁর অন্যতম ভূমিকা ছিল এবং সেখানে অধ্যÿ হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি প্রিয়দারঞ্জন সেনগুপ্ত, বিজয় নাহা, বিনোদ চক্রবর্তী, শওকত আলী প্রমুখের কাছে সংগীতে তালিম নিয়েছিলেন। বনবীথি সেনগুপ্তা ১৯৯১ সালের ১০ মে পরলোকগমন করেন।
![thumbnail](https://bengalclassicalmusicfest.com/wp-content/uploads/2016/10/Munshi-Roish-Uddin.jpg)
মুন্সি রইসউদ্দিন ১৯০১-১৯৭৩
ওসত্মাদ মুন্সি রইসউদ্দিন মাগুরা জেলার নাকোল গ্রামে ১৯০১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি সংগীতপাগল ছিলেন। প্রথমে শামসুল হকের কাছে সংগীতে দীক্ষা নেন। পরবর্তীকালে কলকাতায় রাসবিহারী মলিস্নক, লÿÿনŠর শরজিৎ কাঞ্জিলালের কাছেও শিক্ষালাভ করেন। তিনি গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর সংগীতকলা ভবনে সংগীতে শিক্ষা গ্রহণ করে ১৯৪৭ সালে এদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি নারায়ণগঞ্জে প্রবেশিকা সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে সংগীতের প্রসারের জন্য মাগুরা, নড়াইল ও খুলনায়ও সংগীত বিদ্যালয় খুলেছিলেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকায় বুলবুল একাডেমী স্থাপিত হলে তিনি তাঁর অধ্যÿ হিসেবে যোগদান করেন। মুন্সি রইসউদ্দিন রাগসংগীতকে সহজবোধ্য করে সাধারণের মাঝে প্রচার ও প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ঢাকা বেতারে তিনি নিয়মিত উচ্চাঙ্গসংগীত পরিবেশন করতেন। তাঁর বেশকিছু সংগীতবিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়, যার মধ্যে অভিনব শতরাগ গ্রন্থের জন্য আদমজী পুরস্কার পেয়েছিলেন। ১৯৬৭ সালে সংগীতে অবদানের জন্য ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স’ সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৭৩ সালের ১১ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
![thumbnail](https://bengalclassicalmusicfest.com/wp-content/uploads/2016/10/Ful-Muhammad.jpg)
ফুল মোহাম্মদ
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে ১৯২২ সালে জন্ম। অনুকূল পারিবারিক পরিবেশে অল্প বয়সেই সংগীতচর্চা শুরম্ন করেন। সংগীতে হাতেখড়ি বাবার কাছে। বাবা শেখ গোলাম রসুল সংগীতজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। গীত ও গজলে ফুল মোহাম্মদের দাদা শেখ কালু মিয়ারও সুনাম ছিল। সাত বছর বয়স থেকে মুর্শিদাবাদের রাজবাড়ির সংগীতজ্ঞ রামগোবিন্দ পাঠকের কাছে উচ্চাঙ্গসংগীতে তালিম নেন। ইতোপূর্বে ওসত্মাদ কাদের বক্সের কাছে শিখেছিলেন। কাদের বক্সের অনুমতি নিয়ে রামগোবিন্দ পাঠকের কাছে শিক্ষা নেন। দশম শ্রেণীর ছাত্র থাকা অবস্থায় অল ইন্ডিয়া রেডিওর কলকাতা কেন্দ্রে গাইতে শুরম্ন করেন। ১৯৩৮ সালে কলকাতায় ওসত্মাদ মেহেদী হুসেইন খানের (রামপুর) কাছে শিক্ষা অব্যাহত রাখেন। গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর কাছেও কিছুদিন উচ্চাঙ্গসংগীতে শিক্ষালাভ করেন। ১৯৪৭ সালে ঢাকা চলে আসেন। সেখানে ওসত্মাদ লতাফত হোসেন খানের কাছে কিছুদিন শিক্ষা নেন। ১৯৪০ সালে নিখিল বঙ্গ মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করে ফুল মোহাম্মদ প্রশংসা অর্জন করেন। সংগীতে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ওসত্মাদ ফুল মোহাম্মদ ১৯৮২ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
![thumbnail](https://bengalclassicalmusicfest.com/wp-content/uploads/2016/10/Saimud-Ali-Kha.jpg)
সাইমুদ আলী খান
শাস্ত্রীয় সংগীতের নিবেদিত সাধক ওসত্মাদ সাইমুদ আলী খান ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নৃপেন্দ্রনাথ দাস, বাবু বিজয়চন্দ্র কুমার ও প–ত বিষ্ণু সেবক মিশ্রের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেন। প্রখ্যাত বেহালাবাদক রঘুনাথ দাসের কাছে বেহালা শেখেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দিনাজপুরে সংগীত পরিবেশন করে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপ্ত করেছিলেন। দিনাজপুরে শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রসারে তাঁর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তাঁর সংগীত-বিষয়ক দুটি গ্রন্থ উচ্চাঙ্গসংগীত প্রবেশ এবং শাস্ত্রীয় সংগীত ও প্রয়াত ভাতখ– বিশেষ উলেস্নখযোগ্য।
![thumbnail](https://bengalclassicalmusicfest.com/wp-content/uploads/2016/10/Surendra-Lal-Das.jpg)
সুরেন্দ্রলাল দাশ ১৯০২-১৯৪৩
সুরসাধক, সংগীতাচার্য সুরেন্দ্রলাল দাস উপমহাদেশীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের এক পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি ১৯০২ সালের ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শহরের অদূরে কাট্টলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জমিদার প্রাণ হরিদাস একজন বিখ্যাত গায়ক ছিলেন। সুরেন্দ্রলাল দাশের (ঠাকুরদা) উদ্যোগে চট্টগ্রামে ত্রিশের দশকে বিখ্যাত চিটাগাং মিউজিক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিখ্যাত সংগীতকাররা অংশগ্রহণ করেন। ১৯২০ সালে তিনি আর্যসংগীত সমিতিতে যোগ দেন এবং এ সংস্থার কার্যক্রম প্রসারিত করেন। পরে এই শিক্ষায়তনটির নামকরণ তাঁরই নামানুসারে সুরেন্দ্র সংগীত বিদ্যাপীঠ রাখা হয়। তাঁর সুর ও তাল রচনা অভিনব। সংগীতজ্ঞ স্বামী প্রজ্ঞানানন্দের মতে, বর্তমানে রাগসংগীতের পরিবেশে অর্কেস্ট্রা রচনায় তাঁর প্রভাব স্পষ্ট। ১৯৪৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর তিনি পরলোকগমন করেন।
![thumbnail](https://bengalclassicalmusicfest.com/wp-content/uploads/2016/10/Abid-Hussain-Kha-2.jpg)
আবিদ হুসেন খাঁ
লÿÿনŠর তবলিয়া খলিফা আবিদ হুসেন খাঁ ময়মনসিংহে এসেছিলেন। তাঁর পিতামহ মোম্মে খাঁ ছিলেন পেশাদার তবলিয়া। আবিদ হুসেনের জন্ম ১৮৬৭ সালে লÿÿনŠর মহলস্নv মেহমুদনগরের পৈতৃক নিবাসে। পিতা মোহাম্মদ খাঁ। আবিদ হুসেনের বড় দুই ভাই তাঁদের সমকালে ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ তবলিয়া, যাঁদের নাম লÿÿনŠর খ্যাতিমান কত্থক নাচিয়ে কলকাদিন বিনদাদিনের সঙ্গে উচচারিত হয়। বড় ভাই নানেণ খাঁর মৃত্যুর পর তিনি খেলাফত লাভ করেন। ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে যেসব গায়ক-বাদক বিলাত যাওয়ার সুযোগ লাভ করেছিলেন খলিফা আবিদ হুসেন তাঁদের একজন।
![thumbnail](https://bengalclassicalmusicfest.com/wp-content/uploads/2016/10/Radika-Mohon-Maitra.jpg)
রাধিকামোহন মৈত্র ১৯১৭-১৯৮১
রাধিকামোহন মৈত্র রাজশাহীর এক সম্ভ্রামত্ম জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিশিষ্ট সরোদিয়া ওসত্মাদ মোহম্মদ আমির খানের কাছে পাঁচ বছর বয়সে তালিম নেন এবং গুরম্নর মৃত্যু পর্যমত্ম প্রায় ১২ বছর তাঁর কাছে দীক্ষা নিয়েছিলেন। এরপর রামপুরের বীণকার ওসত্মাদ দবির খানের কাছে ধ্রম্নপদ ধামারের ওপর শিক্ষাগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি ওসত্মাদ আলাউদ্দিন খাঁর কাছেও কিছুদিন তালিম নেন। দেশভাগের পর কলকাতায় বসবাস শুরম্ন করেন। তিনি বিশ্বের নানা দেশে সংগীত পরিবেশন করেন। সংগীত পরিবেশনে নিজস্ব শৈলী তাঁকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দেয়। কলকাতায় তিনি নবীন সংগীতশিল্পী সৃষ্টিতে বিশাল অবদান রেখেছেন। তাঁর শিষ্যদের তালিকা চমকপ্রদ। প্রখ্যাত সেতারিয়া নিখিল ব্যানার্জি ও সরোদিয়া বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত তাঁর শিষ্য ছিলেন। দর্শনে এমএ করে আইন পেশা অবলম্বন করেন। তবে কিছুদিনের মধ্যেই ছেড়ে দিয়ে সরোদবাদনে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন। তিনি সংগীতাচার্য উপাধি লাভ করেন।
![thumbnail](https://bengalclassicalmusicfest.com/wp-content/uploads/2016/10/JamirUddin-Kha.jpg)
জমিরউদ্দিন খাঁ ১৮৯৫-১৯৩২
ঠুমরির অসামান্য রূপকার হিসেবে খ্যাত জমিরউদ্দিন খাঁর জন্ম আমবালা শহরে পিতা মসিৎ খাঁর বাড়িতে ১৮৯৫ সালে। পিতার কাছে ধ্রম্নপদেই প্রাথমিক তালিম নেন। পিতার মৃত্যুর পর খলিফা বদল খাঁর কাছে খেয়ালে তালিম নেন। যে ঠুমরি গানের জন্য তাঁর বিপুল খ্যাতি তার তালিম তিনি পেয়েছিলেন সেকালের বিখ্যাত বাইজি ও সংগীতপটীয়সী গওহরজানের কাছে এবং পরে কিংবদমিত্মতুল্য ঠুমরি গায়ক মৌজুদ্দিনের কাছে। পাকাপাকিভাবে বাস করেছেন কলকাতার রিপন স্ট্রিটে। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে খ্যাতিমান হয়েছেন কলকাতার কৃষ্ণচন্দ্র দে, আঙ্গুরবালা, হরিমতী এবং জাতীয় কবি কাজী নজরম্নল ইসলাম। গ্রামোফোন কোম্পানির মুখ্য প্রশিÿক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। আধুনিক বাংলা গানের উন্মেষপর্বে জমিরউদ্দিন বিশেষ প্রভাব বিসত্মার করেন। সংগীত পরিবেশনের জন্য ময়মনসিংহে এসেছিলেন তিনি।
![thumbnail](https://bengalclassicalmusicfest.com/wp-content/uploads/2016/10/Joydeb-Goshami.jpg)
জয়দেব গোস্বামী ১১৭৯-১২০
জয়দেব গোস্বামী রাজা লক্ষ্মণ সেনের শ্রেষ্ঠ সভাকবি ছিলেন। তিনি ছিলেন গীতিকার ও গায়ক। জয়দেবের জন্মস্থান নিয়ে মতভেদ থাকলেও অধিকাংশ পন্ডিত মনে করেন, তাঁর জন্ম বীরভূম জেলার কেন্দুবিল্ব (কেঁদুলী) গ্রামে এবং সেখানেই বাস করেছেন, যা বর্তমানে ‘জয়দেব কেন্দুলী’ নামে খ্যাত। তাঁর রচিত গীতগোবিন্দ বাংলা সাহিত্যের আদি-অমূল্য সম্পদ ও দিকনির্দেশক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তাঁকে আদিকবি হিসেবে অভিহিত করা হয়। তাঁর রচনা বড়ু চন্ডীদাস, শ্রীচৈতন্য থেকে রবীন্দ্রনাথকেও প্রভাবিত করেছিল। তাঁর রচিত গীতগোবিন্দ আজো বাংলা ও ভারতের অনেক মন্দিরে নিয়মিত গাওয়া হয়। লক্ষ্মণ সেনের দরবারে খ্রিষ্টীয় বারো শতকে পদ্মা বাই গান্ধার রাগ পরিবেশন করে সভাকে বিমোহিত করেছিলেন। সেই সময় দরবারের সংগীতাচার্য কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ খাম্বাজ, গান্ধার প্রভৃতি রাগ উপমহাদেশের সর্বত্র গাওয়া হতো। এ-গ্রন্থটি বিশ্বে নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
![thumbnail](https://bengalclassicalmusicfest.com/wp-content/uploads/2016/10/Gul-Muhammad-Kha.jpg)
গুল মোহাম্মদ খান ১৮৭৬-১৯৭৯
১৮৭৬ সালে ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খান দ্বারভাঙ্গার তিরহুত শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তাঁর পিতা ওস্তাদ আহমদ খান, পিতামহ ওস্তাদ নামদার খান ও চাচা ওস্তাদ হায়দার বক্সের কাছে দীক্ষা নিয়েছিলেন। তিনি ঢাকায় সংগীত পরিবেশন করতে এসে সেখানকার মানুষের সংগীতপ্রীতি দেখে পরবর্তী সময়ে সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকা বেতারের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দীর্ঘদিন সেখানে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন করেন। ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খান ১৯৬৫ সালে বুলবুল একাডেমী পুরস্কার, ১৯৭৭ সালে শিল্পকলা একাডেমী ‘স্বীকৃতি সংবর্ধনা’ ও ‘একুশে পদক’ পেয়েছিলেন। ঢাকায় শাস্ত্রীয়-সংগীত প্রসারে তাঁর উলেস্নখযোগ্য অবদান রয়েছে। ১৯৭৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
![thumbnail](https://bengalclassicalmusicfest.com/wp-content/uploads/2016/10/Jadu-Bhatta.jpg)
যদুভট্ট ১৮৪০-১৮৮৩
ঊনবিংশ শতকে বাংলায় শাস্ত্রীয় সংগীতচর্চার যে অভূতপূর্ব উন্মেষ ঘটে এবং সংগীতের নানা শাখায় বাঙালিরা যে দৃষ্টান্তমূলক সফলতা অর্জন করেন তারই উজ্জ্বল প্রতিভূ যদুভট্ট। তাঁর জন্ম বিষ্ণপুরে। যদুভট্ট কিছুকাল জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক শিক্ষক ছিলেন। ত্রিপুরার রাজা বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের একান্ত সুহৃদ ছিলেন। তিনি কলকাতা থেকে প্রখ্যাত সেনিয়া রবাবিয়া কাশিম আলী খাঁ এবং তৎকালীন বাংলার শ্রেষ্ঠ ধ্রুপদিয়া রঙ্গনাথ যদুভট্টকে আমন্ত্রণ করে ত্রিপুরায় নিয়ে যান। ‘রঙ্গনাথ’ উপাধি মহারাজ বীরচন্দ্রেরই দেওয়া। এক সভায় কাশিম আলী রবাবে ও যদুভট্ট কণ্ঠে একই রাগ শুদ্ধ মলহার পরিবেশন করেন। সেদিন যদুভট্ট কাশিম আলীর বাদনে অভিভূত হয়ে তাঁর কাছে গান্ডা বেঁধেছিলেন সেনিয়া তালিমে দীক্ষিত হবার জন্য। ত্রিপুরার নবরত্ন দরবারে কিছুদিন থাকার পর কাশিম আলী ঢাকার জয়দেবপুরে এবং যদুভট্ট কলকাতায় চলে যান। সুবিখ্যাত সংগীতগুণী রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী যদুভট্টের শিষ্য ছিলেন। ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যদুভট্টের কাছে সংগীতে পাঠ গ্রহণ করেন।