Menu

চতুর্থ রাত ছিল সুরে নৃত্যে ও যন্ত্রের ঝংকারে বিভোর

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে চতুর্থ দিন নৃত্য পরিবেশন -সংবাদ

গতকাল ছিল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত পাঁচরাতের উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসবের চতুর্থ রাতের আসরে। রাগে, তালে, লয়ে, ঠাটে, খেয়ালের শৈল্পিক সৌন্দর্যে এক অনবদ্য রূপ পেয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই সংগীতাসরটি। শিল্পীর পরিবেশনার সঙ্গে শিল্পও পেয়েছিল অন্যরকম এক উচ্চতা। গতকাল ছুটির দিন হওয়াতে চতুর্থ রাতের আসরে সংগীতপ্রিয় সুরের সমজদারদের উপস্থিতিও ছিল অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশি। সুরের কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অধীর ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অনুষ্ঠাস্থলে প্রবেশে সংগীতানুরাগীদের ছিলনা বিন্দুমাত্র বিচলতা।

সেই দুই হাজার ১২ সালে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে এই উৎসব শুরুর আগেও এই বিষয়টা ছিল ভাবনার অতীত। তাঁবু ঢাকা খোলা মাঠে বসে আছে হাজার সংগীতানুরাগী, সন্ধ্যা থেকে রাত পেরিয়ে ভোর। মন্ত্রমুগ্ধের মতো হাজার শ্রোতা শুনছে রাগসংগীত। ভাবনাতীত এ বিষয়টাই ঘটেছে আর্মি স্টোডিয়ামের পরিবর্তে প্রথমবারের মতো ঢাকার আবাহনী মাঠে প্রধমবারের মতো অনুষ্ঠিত এবারের এ উৎসবেও। প্রথম দুই রাতের মতো চতুর্থ রজনীতেও শ্রবণের বিভোরতায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে রাজধানীর সংগীতপ্রেমীরা। কখনও কণ্ঠে কখনও যন্ত্রের সুর-তাল ও লয়ের মায়াবি মূর্ছনায় নিজেদের সিক্ত করছেন অগণন শ্রোতা। রাতের গভীরতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শ্রোতার সংখ্যা।

চতুর্থ দিনের উৎসবের অনুষ্ঠানের শুরু হয় বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের নৃত্যশিল্পীদের সমন্বিত নৃত্যর ছন্দময় দোলায়। ‘নৃত্য চিরন্তন : মনিপুরি, ভারতনাট্যম, কত্থক নৃত্যার্ঘ’ শীর্ষক দুই পর্বে ভাগ করা এ পরিবেশনাটির নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন গুরু বিপিন সিংহ, পন্ডিত বিরজু মহারাজ, শিবলী মোহাম্মদ এবং ভাবনা, সার্বিক নৃত্য পরিচালনা ও সম্বনয়কারী হিসেবে ছিলেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতীয় অন্যতম প্রাচীন নৃত্যধারা মনিপুরি, ভরতনাট্যম এবং কত্থক নৃত্য পরিবেশনে অংশ নেন-নৃত্যশিল্পী সুইটি দাস, অমিত চৌধুরী, স্নাতা শাহরিন, সুদেষ্ণা স্বয়মপ্রভা, মেহরাজ হক এবং জুয়াইরিয়াহ মৌলি। পরিবেশনা শেষে শিল্পীদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।

তাদের এ সম্মিলিত এই নৃত্য পরিবেশনের পরেই ‘সরোদ’-এ শাস্ত্রীয় সংগীতের সুর ছড়াতে মঞ্চে আসেন ‘বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়’-এর শিক্ষার্থীরা। এরপর খেয়াল পরিবেশন করেন পৃথিবীখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ওস্তাদ রশিদ খান। রশিদ খানের মায়াময় অনন্য কণ্ঠের খেয়ালের পরেই ‘সরোদ ও বেহালা’ যুগলবন্দি পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন-পন্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার এবং ড. মাইশুর মঞ্জুনাথ। এতে সরোদ বাজিয়ে শোনান পন্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার এবং বেহালা বাজিয়ে শোনান ড. মাইশুর মঞ্জুনাথ। তাদের এ যুগল পরিবেশনা শেষে মঞ্চে ফের পরিবেশিত হয় খেয়াল। এবারের খেয়ালের শিল্পী পন্ডিত যশরাজ। এরপরেই রাতের শেষভাগে যন্ত্রসংগীত নিয়ে মঞ্চে উপনিত হন-সাসকিয়া রাও দ্য-হাস এবং পন্ডিত বুদ্ধাদিত্য মুখার্জি। এর প্রথমেই ‘চেলো’ পরিবেশনায় অংশ নেন-সাসকিয়া রাও দ্য-হাস। অতঃপর রাতের একেবারে শেষভাগে পন্ডিত বুদ্ধাদিত্য মুখার্জি ‘সরোদ’-এ শাস্ত্রীয় সংগীতের সুর-সূধায় শেষ হয় চতুর্থ দিনের আয়োজন।

নৃত্যের ছন্দে, রাগে, সুরে, খেয়ালে, ঠাটে, তালে, লয়ে সুরের শিল্পী, শিল্প ও শিল্পের অনুরাগীদের ঘটিয়ে সমস্ত বিশ্ব ব্রহ্মা-কেই যেন কিছু সময়ের জন্য দূরে ঠেলে দিয়েছে সুরপিয়াসীরা। সংগীতের বিশুদ্ধতায় শুদ্ধ হওয়ার জন্য সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত দর্শক শ্রোতাদের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা প্রমাণ করে-সংগীত যে সব কিছুর ঊর্ধ্বে। ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুরের আসর শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন বিচ্ছেদের চিহ্ন ফুটে উঠে অনুষ্ঠাস্থলে আগতদের মাঝে। সারারাত পর্যন্ত সংগীতের সাধনায় মত্ত থাকার পরও যেন মনে হয়েছিল আরও কিছুক্ষণ থাকলেই ভালো হতো। আগামী ৩১ ডিসেম্বর ভোরে শেষ হবে পাঁচরাতের এই সংগীতাসর।

তৃতীয় দিনের সম্পূর্ণ আয়োজন : উৎসবের তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীদের সেতার-বাদনের মধ্য দিয়ে। সেতার দলে ছিলেন প্রসেনজিৎ মন্ডল, টি এম সেলিম রেজা, রিঙ্কু চন্দ্র দাস, মেহরীন আলম, জ্যোতি ব্যানার্জি, মোহাম্মাদ কাউসার এবং জাহাঙ্গীর আলম শ্রাবণ। তাদের সঙ্গে তবলায় ছিলেন প্রশান্ত ভৌমিক ও সুপান্থ মজুমদার। পন্ডিত কুশল কুমার দাসের কম্পোজিশনে তারা কিরওয়ানি রাগে সেতার অর্কেস্ট্রা পরিবেশন করেন। এরপর শিল্পীদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন গ্র্যামি বিজয়ী শিল্পী বিদ্বান ভিক্ষু বিনায়ক রাম।

এরপরেই কর্ণাটকি যন্ত্রসংগীত নিয়ে মঞ্চে আসেন পিতা-পুত্র বিদ্বান ভিক্ষু বিনায়ক রাম ও সেলভাগণেশ বিনায়ক রাম। ভিক্ষু বিনায়ক রাম বাজিয়ে শোনান ঘাটম আর কঞ্জিরা বাদন করেন সেলভাগণেশ বিনায়ক রাম। তাদের সঙ্গে কাঞ্জিরা ও কোনাক্কল বাজিয়েছেন স্বামীনাথন এবং মোরসিংয়ে ছিলেন এ গণেশন। নিজেদের পরিবেশনার শুরুতেই তারা ঘাটমে শিব তা-ব ও সেভেন অ্যান্ড হাফ বিট কম্পোজিশন বাজান। পরে তারা গুরুবন্দনা ও গণপতি তালম বাজিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন। শিল্পীদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ।

এরপর খেয়াল পরিবেশন করেন সরকারি সংগীত কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ১৮ সদস্যের এ দলটিতে ছিলেন আশা খন্দকার, বিটু কুমার শীল, দেবজানি দাস, ড. ফকির সুমন, জিএম সাইফুল ইসলাম, জোহরা হোসাইন, মল্লিকা ওঝা, গোলাম মোস্তফা, মমিন মিয়া, মুরাদ হোসাইন, নিউটন বৈরাগী, নিত্য গোপাল ঠাকুর, অর্বি শর্মি, শারমিন সুলতানা স্মৃতি, কৃষ্ণ গোপাল, সুমা বেপারী, সুস্মিত সাহা ও তমালিকা হালদার। দলটি পরিবেশন করে রাগ মালকোষ। তাদের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেছেন সৈয়দ সাজিদ হোসেন ও মো. রাশেদুল হাসান, হারমোনিয়ামে ছিলেন মো. মফিজুর রহমান, এবং সারেঙ্গীতে মতিয়ার রহমান। পরিবেশনা শেষে তাদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন শাস্ত্রীয় সংগীতের খ্যাতিমান শিল্পী পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী। এরপর সরোদ পরিবেশন করেন শিল্পী আবির হোসেন। তার সঙ্গে তবলায় ছিলেন যোগেশ শামসি এবং তানপুরায় অভিজিৎ দাশ। শিল্পী পরিবেশন করেন রাগ আভোগী। পরিবেশনা শেষে আবির হোসেনের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী। সরোদ পরিবেশনার পর বাঁশি বাদন নিয়ে মঞ্চে আসেন গাজী আবদুল হাকিম। তিনি দেশ রাগ, পিলু ঠুমরী ও কয়েকটি ধুন পরিবেশন করেন শ্রোতাদের জন্য। তার সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন দেবেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জি এবং তানপুরায় সঙ্গত করেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী সামীন ইয়াসার ও এস এম আশিক আলভি। পরিবেশনা শেষে শিল্পীর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন আবাহনী লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। বাঁশির পর ধ্রুপদ সংগীতে দর্শকদের মোহিত করেন শাস্ত্রীয় সংগীতের সনাতন ধারার বিশিষ্ট পন্ডিত উদয় ভাওয়ালকর। তিনি পরিবেশন করেন রাগ মাড়ু ও রাগ তিলং। তার সঙ্গে পাখোয়াজে সঙ্গত করেন সুখাদ মুন্ডে, এবং তানপুরায় সংগত করেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী অভিজিৎ কুন্ডু ও টিংকু কুমার শীল। পরিবেশনা শেষে পন্ডিত উদয় ভাওয়ালকরের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। ধ্রুপদ পরিবেশনা শেষে গায়কী অঙ্গের বেহালা বাদন নিয়ে মঞ্চে আসেন বিদূষী কলা রামনাথ। তিনি পরিবেশন করেন-রাগ নট ভৈরব, এবং রাগ বসন্ত। শিল্পীকে তবলায় সঙ্গত করেন-যোগেশ শামসি, এবং তানপুরাতে সঙ্গত করেন জ্যাতাশ্রী রায় চৌধুরী ও চন্দ্রা সাহা স্মৃতি। পরিবেশনা শেষে শিল্পীর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এরপরেই এবারের ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব ২০১৭’-এর তৃতীয় দিনের শেষ পরিবেশনাটি ছিল পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর খেয়াল। তিনি তার পরিবেশনার শুরুতেই পরিবেশন করেন-রাগ গুনকেলি, এবং যোগিয়া রাগে বাংলা গান। শেষে তিনি একটি ভজন পরিবেশন করেন। শিল্পীকে তবলায় সঙ্গত করেন পন্ডিত যোগেশ শামসি, হারমোনিয়ামে গৌরব চ্যাটার্জি এবং তানপুরায় বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল কুমার মালাকার ও অভিজিৎ দাশ। পরিবেশনা শেষে পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল ?মুহিত।

আজকের আয়োজনে যা থাকছে : আজ এ উৎসবের পঞ্চম ও শেষ দিন। এ পঞ্চম ও শেষ দিনের এবারের এ উৎসব শুরু হবে ওড়িশি নৃত্য পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে। নৃত্য পরিবেশন করবেন-বিদুষী সুজাতা মহাপাত্র। এরপর মঞ্চে উঠবে যন্ত্রসংগীতের সুর-ঝঙ্কার। এতে ‘মোহনবীণা’ বাঁজিয়ে শোনাবেন পন্ডিত বিশ্বমোহন ভট্ট। মোহনবীণা’র মোহনীয় সুরের রেশ কাটতে না কাটতেই কণ্ঠে খেয়াল পরিবেশন করতে মঞ্চে আসবেন-ব্রজেশ্বর মুখার্জি। তারপরেই শুরু হবে যুগল সেতার বাদন। এ যুগল সেতার বাদনে অংশ নেবেন-পন্ডিত কুশল দাস ও কল্যাণজিত দাস। এরপর রাতের একেবারে রাতের শেষ ভাগেও থাকবে মনমোহিত ‘সেতার’-এর সুর। এ পর্যায়ে সেতারে শাস্ত্রীয় সংগীতের সুর ছড়াবেন-পন্ডিত কৈবল্যকুমার গুরাভ। আর তারপরেই একবছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মঞ্চে আসবেন-পন্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। বাজাবেন বাঁশি। বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও তিনি তার মন্ত্রমুগ্ধকর বাঁশির সুরে মাতিয়ে তুলবেন হাজার হাজার সংগীতপ্রিয় মানুষদের। তার বাঁশির সুরেই হবে ভোর, মানুষের মনে ঘরে ফেরার তাগিদ না থাকলেও একসময় ফিরতে হবে বাড়ি। আর এর সঙ্গেই যেমন শেষ হবে হবে না হবে না করেও শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব-২০১৭’-এর আয়োজন, তেমনই শুরু হবে আবারও একবছরের অপেক্ষার প্রহর গুনন।

স্কয়ার নিবেদিত এবারের এ উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশ ও ভারত ও পশ্চিমাদেশ কাজাখস্থানের ২শতাধিক শিল্পী। শিল্পী ও দর্শকের অশগ্রহণ এবং ব্যাপ্তির বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উচাঙ্গসংগীতাসরে পরিণত হওয়া বৃহৎ এ আয়োজনটি সাজানো হয়েছে দেশের নবীন শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পীদের সঙ্গে শ্রোতার মন উচাটন করা উপমহাদেশের ওস্তাদ, পন্ডিত. গুরু ও বিদুষীদের অনবদ্য পরিবেশনা দিয়ে। আয়োজনে উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞদের পরিবেশনার পাশাপাশি উৎসব প্রাঙ্গণে চলছে বাংলাদেশের সংগীত সাধক ও তাদের জীবনী নিয়ে সচিত্র প্রদর্শনী। এ ছাড়াও বেঙ্গল ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটলমেন্ট আয়োজন করেছে ‘সাধারণের জায়গা’ শীর্ষক স্থাপত্য প্রদর্শনী।

 

View Full Article