Menu

চৌরাসিয়ার এক ঘণ্টার পরিবেশনা

স্টেডিয়ামভর্তি দর্শকদের কাছে পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া যখন বিদায় চাইলেন ঘড়ির কাঁটায় তখন মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৭মিনিট। সাথে সাথে দর্শক সারি থেকে আওয়াজ ওঠে ‘ওয়ান মোর’, ‘ওয়ান মোর’ বলে। বিনয়ের সাথে বাঁশির জাদুকর স্পষ্ট বাংলায় বললেন, ‘আমি তো বাজাতে চাই। দিনব্যাপী বাজাতে চাই। কিন্ত আমার এখানে যে একটা ঘড়ি আছে, সেটাতো আর বাজাতে দিচ্ছে না।’
তার আগে রাতের সপ্তম পরিবেশনায় আরতী আঙ্কালকি যখন খেয়াল পরিবেশন শেষ করেন ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত পৌনে ৪টা। সঞ্চালক ঘোষণা দেন এবার মঞ্চে আসবেন পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। সাথে সাথে স্টেডিয়ামভর্তি হাজার হাজার দর্শকের হর্ষধ্বনি আর করতালিতে অন্য রকম এক আমেজ তৈরী হয়। সঞ্চালক সময় চেয়ে নেন মঞ্চ প্রস্তুতের জন্য। নেভে যায় আলো। ১০ মিনিট পর যখন মঞ্চের আলো জ্বলে উঠল বাঁশির জাদুকরকে দেখা গেলো পাঞ্জাবি আর উত্তরীয় গায়ে মঞ্চের ঠিক মাঝখানে বসা। সাথে আরো কয়েকজন সহযোগী। প্রথমেই দর্শকদের উদ্দেশে কুশলবাক্য। গত বছরের স্মৃতিচারণ করে বললেন, ‘গত বছর এই স্টেডিয়ামে আগত দর্শকদের বলেছিলাম, সবাই যেন ছোট্ট একটা বাঁশি সাথে করে নিয়ে আসেন।’ তারপর একটু মজা করে বললেন, ‘আগামী বছর ট্রাকভর্তি করে আমিই মুম্বাই থেকে ছোট বাঁশি নিয়ে আসব। যেন সবাই আমার সাথে বাঁশির তাল তুলতে পারেন।’ এবার বিশাল পরিসরে শুদ্ধ সঙ্গীতের আয়োজনের জন্য বেঙ্গল কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করে বলেন, ‘আশা করি, সামনে এই আয়োজন এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে যে, এ রকম দুইটা স্টেডিয়াম দরকার হবে দর্শকদের জন্য।’ এর পরেই শুরু হয় চৌরাসিয়ার সুমধুর বাঁশির সুর। বাঁশিতে রাগ প্রভাতী ও রাগ জৈৎ বাজিয়ে শোনান তিনি। তবে দর্শকের সবচেয়ে বেশি করতালি পেয়েছেন ফোক ধুন বাজিয়ে। ঘড়ির কাঁটায় যখন ভোর ৫টা। তিনি বলেন, ‘আপনাদের এবার একটা কীর্তন শোনাব। এর মাধ্যমেই শেষ হয় তার ঘণ্টাব্যাপী পরিবেশনা। সাথে তবলায় তাল দেন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। পাখাওয়াজে ছিলেন পণ্ডিত ভবানী শঙ্কর। বাঁশি বাজিয়ে শিল্পীকে সহযোগিতা করেছেন দেবপ্রিয় রণদ্বীপ ও বিবেক সোনার এবং তানপুরায় ছিলেন অভিজিৎ কুণ্ডু। পরিবেশনা শেষে শিল্পীর হাতে উৎসবের সম্মাননা স্মারক তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব ২০১৬-এর নিবেদক স্কয়ার গ্রুপ। আয়োজন সমর্থনে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড। অনুষ্ঠানে সম্প্রচার সহযোগী ছিল মাছরাঙা টেলিভিশিন। মিডিয়া পার্টনার আইস বিজনেস টাইমস। আতিথেয়তা সহযোগী হিসেবে ছিল র‌্যাডিসন হোটেল। সার্বিক সহযোগিতায় বেঙ্গল গ্রুপ। অনুষ্ঠান আয়োজন হয়েছে বেঙ্গল ডিজিটাল, ম্যাংগো, বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয় ও পারফেক্ট হারমনি প্রোডাকশনস সিঙ্গাপুরের সহযোগিতায়। ইভেন্ট ব্যবস্থাপনায় ছিল ব্লুজ কমিউনিকেশনস।
উপমহাদেশ তথা বিশ্বে সর্বাধিক বড় পরিসরে আয়োজিত উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের এ আসরটি এ বছর উৎসর্গ করা হয় লেখক সৈয়দ শামসুল হকের স্মৃতির উদ্দেশে।

View Full Article