Menu

জমে গেছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব

শাস্ত্রীয় নৃত্য, গীত ও বাদ্যে মুখরিত এখন ঢাকার সন্ধ্যা। হালকা শীতকে সঙ্গি করে সঙ্গীতপ্রিয় মানুষের পদচারণায় মুখরিত এই স্টেডিয়াম। সন্ধ্যা থেকে রাতভর সঙ্গীতের মুর্ছনায় বিমতিহ হচ্ছেন শ্রোতারা। বাংলাদেশ এবং ভারতের বর্ষীয়ান ও উদীয়মান শিল্পীদের পরিবেশনায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনের পঞ্চম বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব । বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করা হয়। এবারে উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের স্মৃতির উদ্দেশে। শুরুতে ‘রবি করোজ্জ্বল’ শীর্ষক দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দল নৃত্যনন্দন। এ দিন বাঁশিতে প্রবীণ গোদখিন্ডি ও বেহালায় রাতিশ টাগডের যুগলবন্দিতে তবলায় ছিলেন রামদাস পালসুল।

এর পর প্রধান অতিথি হিসেবে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। মঞ্চে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার পর বিদুষী গিরিজা দেবী পরিবেশন করেন খেয়াল। তাকে তবলায় সঙ্গ দেন গোপাল মিশ্র। এর পর ওস্তাদ আশিষ খান সুর তোলেন সরোদে। তার সঙ্গে তবলায় ছিলেন পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ। ‘জাসরাঙ্গি’ শিরোনামে খেয়ালের যুগলবন্দি পরিবেশন করেন বিদুষী অশ্বিনী ভিদে দেশপাণ্ডে ও পণ্ডিত সঞ্জীব অভয়ংকর। তাদের তবলায় সঙ্গত করেন আজিঙ্কা যোশি ও রোহিত মজুমদার। প্রথম দিন সবশেষে শ্রোতাদের বেহালার সুরে মন্ত্রমুগ্ধ করতে মঞ্চে আসেন ড. এলসুব্রহ্ম্যণন। তার সঙ্গে তবলায় ছিলেন পণ্ডিত তন্ময় বোস। ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে উৎসব চলবে রাতব্যাপী। সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। সভাপতিত্ব করবেন শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান। মঞ্চে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো থাকবেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের নিবেদক স্কয়ার গ্রুপ। গত চার বছরের ধারাবাহিকতায় এবারো এই আয়োজনে ধ্রæপদী সঙ্গীত ও নৃত্যের গুরুত্বপূর্ণ শাখার উল্লেখযোগ্য পরিবেশনা উপস্থাপন করা হচ্ছে। এবারের কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য দিক নবীন শিল্পীদের উপস্থিতি ও একাধিক যৌথ পরিবেশনা। উৎসবে বাংলাদেশের ১৬৫ জন শিল্পী অংশ নিচ্ছেন।

উদ্বোধনী পর্বে স্বনামধন্য নৃত্যশিক্ষক শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা ও নির্দেশনায় নৃত্যনন্দন দলের প্রায় ৬০ জন শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূল গান ও ভাঙা গানে মনিপুরী, ভরতনাট্যম, ওডিশি ও কত্থক রীতির রূপায়ণ পরিবেশন করেন। প্রথিতযশা শিল্পী মুনমুন আহমদ তার দল নিয়ে কত্থক পরিবেশন করবেন উৎসবের চতুর্থ দিন। এবারের উৎসবে অংশ নিয়েছেন বেনারস ঘরানার পদ্মবিভূষণপ্রাপ্ত ৮৭ বছরের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী বিদুষী গিরিজা দেবী। উৎসবের প্রথমদিনে প্রবীণতম এই শিল্পী খেয়াল, ঠুমরি ও টপ্পার পরিবেশনায় ছড়িয়েছেন পূরব অঙ্গের রূপ-রস। প্রথমদিনের পরিবেশনায় আরো অংশ নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেয়া কিংবদন্তি শিল্পী আলাউদ্দিন খাঁ’র বংশধর ওস্তাদ আশিষ খাঁ। এবারের উৎসবে প্রাধান্য পাবে নবীন শিল্পীদের উপস্থিতি ও একাধিক যৌথ পরিবেশনা। প্রেরণাসঞ্চারী ওডিশি নৃত্যের আশ্রয়ে মঞ্চ আলোকিত করে বিদুষী মাধবী মুডগাল ও তার শিষ্যা আরুশি মুডগাল। এ উৎসবের প্রথমবারের মতো শোনা গেছে ম্যান্ডোলিনের সুর। বাঁশি ও ম্যান্ডোলিনের যুগলবন্দি পরিবেশন করেছেন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত শিল্পী বংশীবাদক রনু মজুমদার ও ইউ রাজেশ। বিগত বছরের মতো এবারো অনন্য এই সঙ্গীতায়োজনে অংশ নিচ্ছেন প্রবাদপ্রতিম বাঁশরিয়া পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। শোনা যাবে পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার মোহনীয় সন্তুরের সুর। কণ্ঠসঙ্গীত ও বাদ্যের নানা পরিবেশনা নিয়ে হাজির হচ্ছেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, পণ্ডিত উলহাস কশলকর, ওস্তাদ রশিদ খান, পণ্ডিত কুশল দাস, পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার ও পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকার। শোনা যাচ্ছে বিশিষ্ট সেতারির পণ্ডিত সঞ্জয় বন্দ্যোপায়েরর মিষ্টি-মধুর সেতারের বাজনা। থাকছে পদ্মভূষণপ্রাপ্ত কিরানা ঘরানার কোকিলকণ্ঠী শিল্পী ড. প্রভা আত্রে এবং ফরুকাবাদা ঘরানার খ্যাতিমান তবলিয়া পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ও তার ছেলে অনুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পরিবেশনা। বাঁশি ও বেহালার যুগলবন্দি পরিবেশনায় রঙ ছড়াচ্ছেন প্রবীণ গোধকিণ্ডি ও রাতিশ টাগডের। যৌথ তবলাবাদনে অংশ নিচ্ছেন পণ্ডিত যোগেশ শামসী ও পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন মেজাজের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত উপস্থাপন করছেন সেতারে রাগসঙ্গীতের নন্দিতশিল্পী পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়, কর্ণাটকি সঙ্গীতে পারদর্শী ভগ্নিদ্বয় রঞ্জনী ও গায়ত্রী, কর্ণাটকি বংশীবাদক শশাঙ্ক সুব্রহ্মণ্যন, খেয়ালিয়া আরবতহী আঙ্কালিকার, জয়তীর্থ মেউন্ডি ও কুমার মারদুর। প্রতিদিন রাত ১টায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে উৎসবের প্রবেশ পথ। অনুষ্ঠান উপভোগ করা যাচ্ছে সন্ধ্যা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত।

View Full Article