Menu

ধ্রুপদী সংগীতের অনন্য উপস্থাপনা

thumbnail

 

রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া উচ্চাঙ্গসংগীতের আসরের গতকাল ছিল দ্বিতীয় দিন। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে উপমহাদেশের খ্যাতিমান শাস্ত্রীয় শিল্পী, যন্ত্রী ও কলাকুশলীরা মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে দেন। আবিষ্ট হয়ে পড়েন শ্রোতারা।
প্রথমদিনের মতো গতকালও অনুষ্ঠানের শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টায়। ছুটির দিন থাকায় উৎসব প্রাঙ্গণে ছিল সংগীতপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড়। সন্ধ্যার মধ্যেই স্টেডিয়াম পরিণত হয় জনস্রোতে। শাস্ত্রীয় সংগীতের এ মহাউৎসবে ভোর পর্যন্ত চলে ধ্রুপদী সংগীতের বিভিন্ন পরিবেশনা।
গতকাল মঞ্চে প্রথম আসেন শিল্পী বিদুষী মাধবী মুডগাল ও আরুশি মুডগাল। মাধবী মুডগাল নটরাজ ও অষ্টপদি পরিবেশনা করেন। আরুশি মুডগাল আহলাদ পরিবেশন করেন রাগ সাহানায়। এ ছাড়া তিনি রবীন্দ্রসংগীত ‘হেমন্তে কোন বসন্তেরই বাণী’ গানে নৃত্য পরিবেশন করেন। ভৈরবী পল্লবী পরিবেশন করেন দুজন একসঙ্গে। কণ্ঠ সহযোগিতায় ছিলেন মনিকুন্তলা ভৌমিক ও ক্ষীতি প্রকাশ মহাপাত্র, পাখওয়াজে ছিলেন জিতেন্দ্র কুমার সাইন, সেতারে ইয়ার মোহো ও বাঁশিতে শ্রীনিবাস সত্যপঠী।
পরিবেশনা শেষে শিল্পীদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।
ওডিশি নৃত্যের পরিবেশনার পর দলীয় তরলার পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে ওঠেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা তিনতাল পরিবেশন করেন। দলীয় তরলার পরিবেশনায় অংশ নেন চিন্ময় ভৌমিক, ফাহমিদা নাজনিন সুমাইয়া, এম. জে. জে ভুবন, নুসরাত-ই-জাহান খুসবু, পঞ্চম স্যানাল, প্রশান্ত ভৌমিক, সুপান্থ মজুমদার। তাদের সঙ্গে হারমোনিয়ামে ছিলেন মিলিন্দ কুলকার্নি। পরিবেশনা শেষে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষক সুরেশ তালওয়ালকার মঞ্চে উঠে চমৎকার পরিবেশনার জন্য শিক্ষার্থীদের শুভকামনা জানান। সবশেষে শিল্পীদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীদের পর খেয়াল পরিবেশন করতে মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী প্রিয়াঙ্কা গোপ। তবলায় তাকে সঙ্গত করেন ইফতেখার আলম প্রধান। প্রিয়াঙ্কা গোপ শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী হিসেবে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন পুরো পরিবেশনাতেই। ইফতেখার আলম প্রধান বাংলাদেশের একজন প্রতিষ্ঠিত তবলাশিল্পী। ২০১৬ সালে ইফতেখার লন্ডনের প্রখ্যাত রয়েল অ্যালবার্ট হলে ‘অ্যা ক্ল্যাসিকাল অডিসি : ট্রিবিউট টু রবিশঙ্কর’ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পীদের সঙ্গে কৃতিত্বের সঙ্গে তবলা পরিবেশন করেন।
দ্বিতীয় রজনীর অন্যতম আকর্ষণ ছিল রাহুল শর্মার সন্তুর পরিবেশনা। শিল্পীকে এ সময় তবলায় সঙ্গত করেন আরেক জনপ্রিয় তবলিয়া সত্যজিৎ তালওয়ালকার। তার পরিবেশনার সুরের স্রোতে ভেসে ভেসে ভিন্ন এক শৈল্পিক সৌন্দর্য বিরাজ করেছিল পুরো আর্মি স্টেডিয়াম। যেন এক সুরের সমুদ্র রূপ।
অনুষ্ঠানের দলীয় কণ্ঠসংগীত পরিবেশন করেন মোহাম্মদ শোয়েব ও অন্যরা। তার সঙ্গে তবলায় ছিলেন ইফতেখার আলম প্রধান, পাখওয়াজে সুষেন কুমার রায়। এক মায়াবী সুরের বন্ধনে শিল্পীরা আগলে রাখেন শুদ্ধসংগীতের দর্শকদের।
গত রজনীর শিল্পীদের মধ্যে আরও ছিলেন সেতারে পূর্বায়ন চট্টোপাধ্যায়, খেয়াল পরিবেশন করেন প-িত উলহাস কশলকর। আরও ছিলেন প-িত রনু মজুমদারের বাঁশি ও ইউ রাজেশের ম্যান্ডোলিনের যুগলবন্দি পরিবেশনা। মাইহার ঘরানার এই বাদ্যশিল্পী আর্ট অব লিভিং অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে ৫,৩৭৮ জন বংশীবাদকে উপস্থাপন করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। বিষয়টি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে। আর ইউ রাজেশ ভারতের একজন বিশিষ্ট ম্যান্ডোলিন শিল্পী। ম্যান্ডোলিনের স্বনামধন্য শিল্পী ইউ শ্রীনিবাসের ভ্রাতা ইউ রাজেশ তার বাবা ও ভাইয়ের কাছে তালিম নেন। জন ম্যাকলফ্লিনের অ্যালবাম ‘ফ্লোটিং পয়েন্টে’ ম্যান্ডোলিন বাদনে গ্র্যামি পদকের জন্য তিনি মনোনয়ন লাভ করেন। এভাবে ম্যান্ডোলিন আর বাঁশির মধুর পরিবেশনার মধ্য দিয়েই শেষ হয় উৎসবের দ্বিতীয় রজনীর পরিবেশনা।

View Full Article