নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে বাংলাদেশ
‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব’ বাংলাদেশে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারের উৎসবটি আরও বর্ণাঢ্য ও রঙিন হবে বলে মনে করছেন এই আয়োজনের প্রাণপুরুষ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু। সম্প্রতি এ বছরের উৎসব নিয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ক’দিন আগেও সংশয় ছিল। অনেকের মনে ছিল প্রশ্ন, এবার কি রাগ-রাগিণীর মূর্ছনায় ডুবে থাকা হবে না? যার জন্য বছরজুড়ে থাকে প্রতীক্ষা, সেই উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের সব আয়োজন কি থেমে গেল? এ জন্যই আমরা পিছিয়ে যাইনি। একটু দেরিতে হলেও ঘোষণা দিয়েছি উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের। বিশ্বের খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী, বাদক ও নৃত্যশিল্পীদের নিয়ে আজ শুরু হতে যাচ্ছে এই উৎসব। পঞ্চরজনীর এই আয়োজনে নানা বাদ্যের অনিন্দ্য সুরঝঙ্কার ছাড়াও থাকছে ধ্রুপদ-খেয়াল-টপ্পা-ঠুমরি এবং ভরতনাট্যম-ওড়িশি-কত্থকসহ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও নৃত্যের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা। তিনি জানান, এবারের আয়োজনেও থাকছে বিশ্বনন্দিত শিল্পীদের পরিবেশনা। আশা করা যায়, প্রতিবারের মতো এবারও চোখে পড়বে অগণিত সঙ্গীতপ্রেমীর মিলন মেলা। শুরুতে এ আয়োজনটি ছিল ছোট পরিসরে। এরপর থেকে বড় পরিসরে উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমার ধারণা পৃথিবীর আর কোথাও এত বড় আয়োজনে টানা ৫ দিন উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের উৎসব হয় না। সেই দিক থেকে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে বাংলাদেশ। এবারের উৎসবটি বিগত বছরগুলোর তুলনায় আরও বর্ণাঢ্য ও রঙিন হবে বলেই আমরা আশাবাদী।
আবুল খায়ের লিটু বলেন, দেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে রক্ষা ও বিকশিত করার লক্ষ্য নিয়েই আমরা বেঙ্গল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করি। সেই ধারাবাহিকতায় উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব আয়োজনে উদ্যোগী হই। এখন এই উৎসবটির ব্যাপকতা বেড়েছে। এই গর্ব কিন্তু আমাদের একার নয়, সমগ্র বাংলাদেশের। যখন দেখি গভীর রাতেও শহরের মানুষ দল বেঁধে গান শুনতে আসেন, তখন শুধু অবাক হই না, গর্বও হয়। সত্যি এ এক অসাধারণ দৃশ্য। সবকিছু দেখে আনন্দে মন ভরে ওঠে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এই উৎসবের শুরুটা করেছিলাম অনেক ভাবনা থেকে। সঙ্গীতগুরু রবিশংকর, উদয় শংকরসহ অনেকেরই নাম বলা যাবে, যারা এক সময় আমাদের দেশেরই মানুষ ছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জীবিকার প্রয়োজনে তারা ভারতে চলে যান। সঙ্গীতগুরু আলী আকবর খাঁ, উদয় শংকর, রবিশংকর, বেলায়েত খাঁ যারা শুধু ভারতে নন, সারা পৃথিবীতে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতকে জনপ্রিয় করেছেন, তারা সবাই বাঙালি, বাংলাদেশের মানুষ। কারও বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কারও গৌরীপুর, কেউ ময়মনসিংহ, কেউ মুন্সীগঞ্জে বড় হয়েছেন। তার মানে আমাদের দেশেই তো উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের মূল শিকড় ছিল। একটা জেনারেশন পার হয়ে গেছে মাত্র। এখন যে জেনারেশন বেড়ে উঠছে তাদের এই শিকড়ের সন্ধান দিতে হবে। এই ভাবনা থেকেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের যাত্রা শুরু করেছিলাম। সেই সময় অনেকেই বলেছিলেন যে, সাধারণ মানুষ উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শুনতে চায় না। কিন্তু আমরা উৎসবটি শুরু করার পর দেখেছি, এই ধারণাটা পুরোপুরি সত্য নয়। আয়োজনের ক্ষেত্রে যদি আন্তরিকতা থাকে, পরিবেশ যদি ভালো হয় তাহলে নান্দনিক যে কোনো উদ্যোগের প্রতিই সাধারণ মানুষও আগ্রহী হয়ে ওঠে।
এই উৎসবের ক্ষেত্রে আমাদের সফলতা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। শুরুতে যা ভেবেছিলাম এখন তার চেয়ে অনেক বড় আয়োজনে হচ্ছে। উৎসবে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার দর্শক আসেন। উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শোনানোর জন্য পৃথিবীর অন্য কোথাও এত জমায়েত হয় না। সেদিক দিয়ে আমরা কিন্তু অনেক ভাগ্যবান। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, উৎসবে ১৮-৩০ বছর বয়সী ছেলেমেয়েকে আমরা বেশি পাচ্ছি। এ ছাড়াও ভিআইপি থেকে শুরু করে সমাজের সব স্তরের মানুষই এখানে আসেন।
বেঙ্গল গ্রুপ আগামীতে নতুন কী উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে? এরকম এক প্রশ্নের জবাবে আবুল খায়ের লিটু বলেন, আমরা বেঙ্গল থেকে অনেক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি সামনে পরিকল্পনাগুলোর বিস্তারিত জানাতে পারব। এ ছাড়াও দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নে বরাবরই বেঙ্গল ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ‘মেঘমল্লার’ ও ‘অনিল বাগচীর একদিন’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছি। এগুলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছে। আরও কিছু চলচ্চিত্র প্রক্রিয়াধীন আছে।