Menu

নাচের মূল তথা নিজেকে সমর্পণ

thumbnail

সকালে মুম্বাই থেকে ঢাকায় এসেছেন। চোখেমুখে ভ্রমণক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। তার পরও হাসিমুখে গণমাধ্যমের সামনে এলেন ভারতের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী অদিতি মঙ্গলদাস। ধানমণ্ডির শেখ কামাল আবাহনী মাঠে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত পঞ্চ রজনীর উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ বুধবার কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবে তার ‘অদিতি মঙ্গলদাস ড্যান্স কোম্পানি’। তার আগে গতকাল মঙ্গলবার সোনারগাঁও হোটেলের যমুনা হলে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন কত্থক নাচের সমকালীন ধারার প্রখ্যাত এই শিল্পী। শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে ক্লান্ত থাকার কথা জানিয়ে বললেন, প্লেন জার্নির রেশ এখনও কাটেনি। কাল (আজ) পারফরম্যান্স। আপনারা অনেকক্ষণ বসে আছেন। এজন্য ক্ষমা চাচ্ছি।’ তারপর আলাপচারিতায় তুলে ধরেন তার নৃত্যজীবন ও কত্থক নাচ সাধনার নানা স্মৃতি।

অদিতি মঙ্গলদাস বলেন, পাঁচ বছর বয়স থেকে নাচের হাতেখড়ি। নাচই তার ধ্যান-জ্ঞান। প্রায় ৫২টি বছর মগ্ন হয়ে আছেন কত্থক নাচ নিয়ে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কৌশল আবিস্কার করে চলেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনের তাগিদে কৌশল রপ্ত করা দোষের নয়। তবে একজন শিল্পী তেমনই হওয়া উচিত, যাকে কৌশল কখনই গ্রাস করবে না। নিজেকে সমর্পণ করতে হবে নাচের মধ্যে। আর সেখানেই রয়েছে শিল্পীর সার্থকতা। তবেই তো মানুষ নাচের অন্তর্নিহিত নির্যাস উপভোগ করতে পারবে।’ অদিতি জানান, নাচের ক্ষেত্রে তার কাছে কৌশল কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়, নিজেকে সমর্পণ বা নিবেদনটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে অদিতি মঙ্গলদাস জানান, তিনি নাচ নিয়ে তৃপ্ত। সব সময় সমকালীন ধারায় চর্চা করেন। মানুষের সামনে নতুন কিছু নিয়ে আসতে পারলে ভালো লাগে। যখন থেকে এই উৎসবে যোগ দেবেন বলে মনস্থির করেছেন, তখন থেকেই বাংলাদেশের দর্শক-শ্রোতাদের জন্য নতুন কিছু দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন বলে জানান তিনি। এ সময় তিনি স্বীকার করেন, উচ্চাঙ্গসঙ্গীত নিয়ে এ ধরনের আয়োজন বিশ্বের আর কোথাও হয় না। এ কারণে বেঙ্গলের মঞ্চে পারফরম্যান্স করার জন্য তিনি উদগ্রীব হয়ে আছেন।

অদিতি মঙ্গলদাস বলেন, ‘নাচের কিছু নির্দিষ্ট কৌশল আছে এবং থাকে। এ বাইরেও শিল্পীর নিজস্ব কোনো না কোনো কৌশল আছে। অনেক সময় সে কৌশল মুখ্য নয়, বরং নিজেকে ভেঙেচুরে উপস্থাপনা করাই হচ্ছে একজন প্রকৃত শিল্পীর কাজ। আর সব সময় সেটাই করে আসছি। তেমনি এক ধরনের কাজ নিয়ে প্রথমবারের মতো এ দেশের দর্শক-শ্রোতার সামনে হাজির হচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের দর্শক-শ্রোতার জন্য তিন পর্বের একটি নৃত্যভাবনা করেছি। এ প্রযোজনাটি আর কোথাও পরিবেশিত হয়নি। তিন পর্বের এ নৃত্যভাবনার প্রথমেই রয়েছে উৎসব।’ এ প্রসঙ্গে অদিতি মঙ্গলদাস বলেন, ‘ভাষা ভিন্ন হতে পারে, তবে নাচের ভাষা প্রায় অভিন্ন। উৎসব ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। রীতি ও কৌশল রপ্তের মধ্য দিয়ে ভিনদেশি উৎসবের মাত্রা-তাল-লয়-রস উপস্থাপন করা খুব সহজ। আর সেটি পরিবেশিত হবে উৎসব পর্বে।’

অদিতি মঙ্গলদাস দ্বিতীয় অংশের পরিবেশনার নাম দিয়েছেন, বাংলায় অনুবাদ করলে ‘পরমের খোঁজে’। এ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ প্রতিনিয়ত প্রেম-ভালোবাসা খুঁজে ফেরে। কেউ খোঁজেন ঈশ্বর-আল্লাহকে, কেউ আবার চান মানবপ্রেম। এসবেরই রূপ দেওয়া হয়েছে এ পর্বটিতে। হযরত আমির খাসরুর কবিতাংশ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নাচের এই অংশ তুলে ধরা হবে। সর্বশেষ পর্বে থাকবে তারানা।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে অদিতি মঙ্গলদাস বলেন, ‘একই জিনিস সব সময় সবার ভালো লাগে না। লাগারও কথা নয়। ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা সবার জন্যই মঙ্গলজনক, যিনি নাচেন তিনি তৃপ্তবোধ করেন। আবার যিনি বা যারা দেখেন, তারাও বৈচিত্র্যময়তায় পুলকিত হন।’

সব রকমের শাস্ত্রীয় নাচের মধ্যে কত্থক সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারা। প্রাচীনকালে একটি সম্প্রদায় ছিল, যারা নৃত্য ও গীত দিয়ে দেবদেবীর মাহাত্ম্যবলি পরিবেশন করত। ‘কত্থক’ সেই সম্প্রদায়। বেঙ্গলের মঞ্চে অদিতি মঙ্গলদাস কোম্পানির পরিবেশনা শুরু হবে দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রথম পরিবেশনা হিসেবে। ‘সূর্য-বন্দনা’র মধ্য দিয়ে শুরু হবে এই পরিবেশনা। নানা পর্যায়ে দেখা মিলবে ক্রমলয়, কবিতা, তোড়া বা টুকরা ও সঙ্গীত।

অদিতি মঙ্গলদাসের জন্ম ১৯৬০ সালে গুজরাটের আহমেদাবাদে। এই অঞ্চলের কত্থক নাচের কিংবদন্তি কুমুদিনী লাখিয়ার কাছে নাচে হাতেখড়ি নেন শৈশবে। পরে দীক্ষা নিয়েছেন কত্থক নাচের যজশ্বী পণ্ডিত বিরজু মহারাজের কাছেও। দীক্ষা শেষে বিভিন্ন সময় বিরজু মহারাজের সঙ্গে নানা দেশে নৃত্য-সফর করেছেন তিনি। বাংলাদেশে কত্থক নাচের দল নিয়ে এসেছেন এবারই প্রথম। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সোভিয়েত ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তিনি ভারতের জনপ্রিয় কোরিওগ্রাফার। দৃষ্টিকোণ ড্যান্স ফাউন্ডেশনের নৃত্য-অধ্যক্ষ। ২০০৫ সাল থেকে ছয় সদস্যের ড্যান্স দল নিয়ে নৃত্য-ভ্রমণ করে চলেছেন বিভিন্ন দেশে। দলের নাম দিয়েছেন ‘অদিতি মঙ্গলদাস ড্যান্স কোম্পানি’। বাংলাদেশে এই ড্যান্স কোম্পানির এটিই প্রথম পরিবেশনা।

 

View Full Article