নৃত্য নয় যেন দৃশ্যকাব্য
শরীফা বুলবুল : ছন্দের ছোঁয়ায় শব্দ যেমন হয়ে ওঠে কবিতা ঠিক তেমনি মুদ্রার ছোঁয়ায় নৃত্য হয়ে ওঠে দৃশ্যকাব্য। বিদ্যুৎচমকের মতো নৃত্য শিল্পীদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়া নূপুরের ছন্দে ছন্দে কখনও মঞ্চ হয়ে ওঠে কাব্যময়। শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পীদের নৃত্যের অনন্য পরিবেশনায় বেঙ্গল উৎসবের চতুর্থ রাত হয়ে ওঠে ঠিক তেমনই কাব্যময়। হিম শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন রাত সেই দৃশ্যকাব্যকে মোহনীয় করে তোলে হাজারো দর্শকশ্রোতার কাছে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় হিমেল হাওয়ার মধ্যে মঞ্চের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিল্পরসিকরা। সন্ধ্যা যতই গড়াতে থাকে সুর-ছন্দের আকাক্সক্ষা ততই বাড়তে থাকে। মঞ্চে শিল্পীদের নিমগ্নতা গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে। আর শিল্পীদের তাল লয় সুরে নূপুরের ঝংকারে শীতের হিমেল হাওয়াও উষ্ণ হতে থাকে।
গতকাল ছিল অন্যরকম একটা রাত। সুর আর ছন্দকে ছাপিয়ে যায় নূপুরের রিনিঝিনি। শাস্ত্রীয় নৃত্যের ব্যঞ্জনায় মোহনীয় হয়ে ওঠে হিমঝরা পৌষের রাত। মণিপুরি, ভরত নাট্যম ও কত্থক নৃত্যের চমকে বুঁদ হয়ে যান নৃত্যপ্রেমীরা। নৃত্যশিল্পী সুইটি দাস, অমিত চৌধুরী, স্নাতা শাহরিন, সুদেষ্ণা স্বয়মপ্রভা, মেহরাজ হক এবং জুয়াইরিয়াহ মৌলির অনন্য পরিবেশনা গোটা মঞ্চই হাজির হয় দৃশ্যকাব্য হিসেবে। নৃত্যের পর মঞ্চে সরোদ নিয়ে আসে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। অসাধারণ সুর-মাধুর্যে পূর্ণ সরোদের ঝংকার ছিল অনন্যসাধারণ। এ সুরের মায়াবি রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই খেয়ালে মুগ্ধতা ছড়ালেন ওস্তাদ রাশিদ খান, অন্যরকম সুরধ্বনিতে সরোদে প্রাণ ছুঁয়ে দিলেন পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। মহাকাব্যিক কান্নার সুর ছড়িয়ে দেয় বেহালা। বিদুষী ড. মাইশুর মঞ্জুনাথ বেহালার তারে তারে বিষণœতার সুর ছড়িয়ে দিলেন। খেয়াল পরিবেশন করেন পণ্ডিত যশরাজ। চেলোতো সংগীত পরিবেশন করেন সাসকিয়া রাও দ্য-হাস। সবশেষে ছিল পণ্ডিত বুদ্ধাদিত্য মুখার্জির সেতার পরিবেশনা। এ এক অসামান্য সুন্দর পরিবেশনা!
নৃত্য, খেয়াল, সরোদ, বেহালা ও সেতারের সুরে সুরে পার হয়ে যায় রাত। গোটা শহর তখন ঘুমের অতলে। শুধু আবাহনী মাঠ জেগে আছে পৌষের ক্ষীণ চাঁদের নিচে। সুরের আবেশে তখন দর্শকদের চোখে মুখে ঘুমের আহ্বান। ফিরতে হবে। আগামী রাতের সমাপনী সুরের আমন্ত্রণ নিয়ে একে একে ফিরে চলেন নিজ নিজ নীড়ে। মোহনীয় রাতের মঞ্চের আলো ক্ষীণ হয়ে আসে সকালের আলোর মিছিলে।