Menu

ফিরে এলো রাতজাগা ধ্রুপদী গানের আসর

thumbnail

বন্ধ ঘোষণার পরও ফিরে এলো সেই সম্মোহনী রাত। ফিরে এলো গানে গানে রাত জাগার ক্ষণ। ধানমন্ডির আবাহনী মাঠ সেজে উঠেছে বর্ণিল সাজে। সংগীতপ্রেমী মানুসের আনাগানোয় সংগীত গুণিনদের পরিবেশনায় ফিরে সুরের উষ্ণতার রাত। প্রথম দিনেই পাশ্চাত্যের অর্কেস্ট্রা ষষ্ঠ বেঙ্গল সংগীত উত্সবে খুলে দিল সুরের নতুন দিগন্ত। নতুন ভেন্যু, সুরের নতুন সংযোজন বেঙ্গল সংগীত উত্সবকে নিয়ে গেল নতুন উচ্চতায়। এ বছর উত্সব উত্সর্গ করা হয়েছে বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক ও সংস্কৃতিতাত্ত্বিক এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে।

গতকাল সন্ধ্যায় পণ্ডিত ড. এল সুব্রামানিয়ামের বেহালা বাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ষষ্ঠ বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উত্সব ২০১৭। তিনি বেহালায় রাগ আভোগী পরিবেশন করেন। এরপরেই মঞ্চে আসে কাজাখস্তানের আসতানা সিম্ফনি ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রা। ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল কম্পোজিশনটি উপস্থাপন করে ৫৬ সদস্যের দল। কাজাখস্তানের শিল্পীরা ওয়েস্টার্ন ক্ল্যাসিকাল মুগ্ধতা ছড়ায়। যার মধ্যে ছিল কাজাখস্তানের কম্পোজার তিলেস তাসগালিবের একটি কম্পোজিশন, চাইকোভস্কি সোয়ান লেকসহ বেশ কয়েকটি পরিবেশনা।

এরপরেই ছিল চমক। পণ্ডিত ড. এল সুব্রামানিয়ামের বেহালা আর ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রার যুগলবন্দি এক নতুন অভিজ্ঞতার সামনে নিয়ে গেল বাংলাদেশের শ্রোতাদের। এ এক অনবদ্য সুরের খেলা। পাশ্চাত্য আর প্রাচ্যের শাস্ত্রীয় সংগীতের অপূর্ব যুগলবন্দি মন মাতালো শ্রোতাদের। আর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সুরের এমন মোহনীয় আবহের মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উত্সব ২০১৭।

গত পাঁচ বছর ধরে আয়োজিত ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উত্সব’ শিল্পী ও দর্শকের অংশগ্রহণের নিরিখে এরই মধ্যে এই উপ-মহাদেশ তথা বিশ্বের সর্বাধিক বড় পরিসরের উচ্চাঙ্গ সংগীতের আসর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

রাত নয়টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এবারের উচ্চাঙ্গ সংগীত উত্সব। উত্সবের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও আবাহনী লিমিটেডের সভাপতি সালমান এফ রহমান, স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু। এবারের আয়োজনটি উত্সর্গ করা হয়েছে শিক্ষাবিদ এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত এবারের উত্সবের নিবেদক স্কয়ার গ্রুপ এবং সমর্থন করছে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড।

উদ্বোধনী পর্বের পরে মঞ্চে আসেন রাজরূপা চৌধুরী। সরোদে অসাধারণ পরিবেশনা উপহার দেন বৈবাহিক সূত্রে বাংলাদেশে বাস করা ভারতীয় এই শিল্পী। তার পরিবেশনার পর মঞ্চ মাতান ভারতের শিল্পী পদ্মা তালওয়ালকর। তিনি গোয়ালিয়র, কিরানা এবং জয়পুর ঘরানায় কণ্ঠে খেয়াল পরিবেশন করেন । এর পর সেতার বাদনে অংশ নেন বাংলাদেশের শিল্পী ফিরোজ খান। তারপরে মঞ্চে উঠেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষানবিশ সুপ্রিয়া দাস। তার খেয়ালে মুগ্ধ হন স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক-শ্রোতারা। ভোররাতে দিনের শেষ পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন ভারতীয় বংশীবাদক রাকেশ চৌরাশিয়া ও সেতারবাদক পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়। তাদের পরিবেশনার মধ্য দিয়েই ভোর হয়।

সংগীত উপভোগের পাশাপাশি খাবার ও পানীয়ের জন্য উত্সব প্রাঙ্গণে রয়েছে ফুডকোর্ট। পাশাপাশি উত্সব প্রাঙ্গণে আরো চলছে বাংলাদেশের সংগীত সাধক ও তাদের জীবনী নিয়ে একটি সচিত্র প্রদর্শনী এবং বেঙ্গল ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটলমেন্ট এর ‘সাধারণের জায়গা’ শীর্ষক প্রদর্শনী। এ ছাড়া উত্সব প্রাঙ্গণে স্টল স্থাপন করেছে বেঙ্গল ডিজিটাল, বেঙ্গল এক্সপ্রেস, বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়, অরণ্য, বেঙ্গল ভিজ্যুয়াল আর্টস প্রোগ্রাম, বেঙ্গল বই, ব্র্যাক ব্যাংক ও স্কয়ার গ্রুপ। আছে ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথ।

আজকের উত্সবসূচি : আজ বুধবার উত্সবের দ্বিতীয় দিনে কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবেন অদিতি মঙ্গলদাস ড্যান্স কোম্পানির নৃত্যশিল্পীরা। তবলা বাদনে অংশ নেবেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এরপর সন্তুর নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হবেন গত আসরগুলোয় শ্রোতাকে মুগ্ধ করা পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা। খেয়াল পরিবেশন করবেন পণ্ডিত উলহাস কশলকর, সেতার বাজিয়ে শোনাবেন ওস্তাদ শাহিদ পারভেজ খান। ধ্রুপদ পরিবেশন করবেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী অভিজিত কুণ্ডু। সব শেষে থাকবে পণ্ডিত রনু মজুমদার বাঁশি এবং পণ্ডিত দেবজ্যোতি বোস সরোদে যুগলবন্দি পরিবেশনা।

উত্সবের গানের শব্দে বিরক্ত এলাকার বাসিন্দারা

সংগীত আয়োজনে খানিকটা বেসুরো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে উত্সবের গানের শব্দ। আবাহনী মাঠের আশেপাশে এলাকার বাসিন্দারা এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে ফোন করেছেন পত্রিকা অফিসে। তারা বলছেন, রাতজুড়ে এ কনসার্ট তাদের দৈনন্দিন পরিবেশে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।

 

View Full Article