বাংলাদেশের যোগ সবখানে
পাঁচ দিনব্যাপী বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব শুরু হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। পরিবেশনার আগে শিল্পীরা মুখোমুখি হয়েছিলেন সাংবাদিকদের। সকালে আসেন বাঁশিশিল্পী রনু মজুমদার, রাকেশ চৌরাসিয়া ও সেতারশিল্পী পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়। বিকেলে আসেন সরোদশিল্পী দেবজ্যোতি বসু ও কত্থকশিল্পী অদিতি মঙ্গলদাস।
ঘটনাচক্রে রনু, রাকেশ ও পূর্বায়ণ—তিনজনই সেনিয়া-মাইহার ঘরানার শিল্পী। পূর্বায়ণের বাবা পার্থপ্রতিম ছিলেন পণ্ডিত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিষ্য। রনু মজুমদারের গুরু ছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও পান্নালাল ঘোষ। কাকা পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার কাছে বাঁশি শিখেছেন রাকেশ। আর হরিপ্রসাদের গুরু হচ্ছেন অন্নপূর্ণা দেবী। অন্নপূর্ণা, নিখিল, রবিশঙ্কর, পান্নালাল—চারজনই ছিলেন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর শিষ্য। আর আলাউদ্দিন খাঁ মানে তো বাংলাদেশই।
রনু মজুমদার ও পূর্বায়ণের পূর্বপুরুষও এই বাংলার। রনু মজুমদার বলেন, এ কারণেই অনেক আবেগের সম্পর্ক এই উৎসব ঘিরে। এই উৎসব তাঁর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রনু এবার তৃতীয়বারের মতো এই উৎসবে এলেন, এর আগে দক্ষিণ ভারতীয় শিল্পী বালমুরালি কৃষ্ণ ও ইউ রাজেশের সঙ্গে বাঁশি বাজিয়েছেন। এবার বাজাবেন উত্তর ভারতের দেবজ্যোতি বসুর সঙ্গে।
বাংলাদেশে এর আগেও এসেছেন রাকেশ চৌরাসিয়া, তবে এই উৎসবে এবারই প্রথম। শুধু শাস্ত্রীয় সংগীত শোনার জন্য ৩০-৪০ হাজার মানুষ সারা রাত জেগে থাকেন, এটা তাঁর কাছে অবিশ্বাস্য ঘটনা। সেটারই প্রত্যক্ষ সাক্ষী হতে এসেছেন এবার। বাংলাদেশের খাবারও খুব পছন্দ করেন তিনি।
অদিতি মঙ্গলদাস ও দেবজ্যোতি বসুপূর্বায়ণ বলেন, বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বের মানুষের কাছে একটি সাংস্কৃতিক গন্তব্য। এখানে ফোক, জ্যাজ, সুফি ফেস্টিভ্যাল হয়। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের শাস্ত্রীয় সংগীতের এই উৎসব তো সারা পৃথিবীর কাছে একটি উদাহরণ। যে সম্মান এখানে শিল্পীদের দেওয়া হয়, সেটা অসাধারণ।
আজ উৎসবের প্রথম পরিবেশনা দেবেন অদিতি ও তাঁর নৃত্যদল। অদিতি বলেন, তিনি নাচ শিখেছেন শ্রীমতী কুমুদিনী লাখিয়া ও কত্থক-কিংবদন্তি বিরজু মহারাজের কাছে। নাচ নিয়ে দুজনের অভিব্যক্তি ভিন্ন রকম ছিল বলে তাঁর পক্ষে দুটি শৈলী নিয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ ছিল। কত্থকের ওপর ভিত্তি করে তিনি করেন কনটেমপোরারি নাচও।
বাঁশি ও সরোদ নিয়ে আজ সবশেষে মঞ্চে উঠবেন রনু ও দেবজ্যোতি। এবার প্রথম এলেন দেবজ্যোতি। সাড়ে ৯ বছর ধরে এই দুজনের যুগলবন্দী সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয় হয়েছে। শিবকুমার শর্মা ও হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার পর এমন একটি জুটি গড়ে ওঠার পেছনে হাত ছিল দেবজ্যোতির দাদা তবলার পণ্ডিত কুমার বসুর।
দেবজ্যোতিও বললেন, কেন যে হিন্দুস্তানি বা ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত বলা হয়, তিনি তা বোঝেন না। কারণ, প্রায় ৬০ শতাংশ সংগীতগুরুরই মূল শিকড় বাংলাদেশে।
আজকের পরিবেশনা
কত্থক
অদিতি মঙ্গলদাস ড্যান্স কোম্পানি
তবলা
বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়
সন্তুর
পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা
খেয়াল
পণ্ডিত উলহাস কাশালকার
সেতার
ওস্তাদ শহিদ পারভেজ খান
ধ্রুপদ
অভিজিৎ কুণ্ডু, বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়
বাঁশি ও সরোদ
পণ্ডিত রনু মজুমদার ও পণ্ডিত দেবজ্যোতি বসু