বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব ২০১৬ নিজের রাগে প্রভার খেয়াল
শাড়ি পরিহিত এক বিদেশিনীকে দেখা যায় গ্যালারির দক্ষিণ প্রান্তের একেবারে ওপরে। হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার ছবির কাছেই বসে ছিলেন তিনি। সঙ্গী ভিনদেশি পুরুষটির পরনে পাঞ্জাবি। এদেশীয় সাজপোশাকে তাঁরা এসেছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীত উপভোগ করতে। পরিবার নিয়ে আসেন অনেকেই। গ্যালারিজুড়ে বন্ধুদের নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় তরুণদের। শুক্রবার রাতে উলহাস কাশালকারের রাগ খাম্বাজে ঠুমরির সময় তাঁদেরই একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘একটা রোমান্টিক গানের সঙ্গে রাগটা মিলে যাচ্ছে না?’
গতকাল শনিবার ছিল শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসবের তৃতীয় রাত। এ রাতের তৃতীয় পরিবেশনাটি ছিল প্রভা আত্রের। রাগ শ্যাম কল্যাণে ও পরে নিজের সৃষ্টি রাগ মধুকোঁশে খেয়াল গেয়ে শোনান এই শিল্পী। পরে কানাড়া রাগে দাদরা নায়কি ও সব শেষে রাগ ভৈরবীতে ভজন গেয়ে শোনান তিনি।
দ্বিতীয় পরিবেশনায় বাঁশিতে রাগ পূরবী কল্যাণী বাজিয়ে শোনান গ্র্যামিতে মনোনয়ন পাওয়া বাঁশিশিল্পী শশাঙ্ক সুব্রামানিয়াম। তাঁর সঙ্গে মৃদঙ্গমে ছিলেন পারুপল্লী ফাল্গুন, তবলায় সত্যজিৎ তালওয়ালকার। সন্ধ্যায় তাঁর এ পরিবেশনা শ্রোতাদের মনোযোগ কেড়ে নেয়। শেষে একটি ঐতিহ্যবাহী সুরবন্ধ দিয়ে পরিবেশনায় ইতি টানেন এই শিল্পী। করতালি দিয়ে তাঁকে অভিবাদন জানান শ্রোতারা। এ রাতের শুরুতে সরোদে রাগ কাফি পরিবেশন করেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। অংশ নেন কামাল জহির, খন্দকার শামছুজ্জোহা, মো. ইলিয়াস খান, ইলহাম ফুলঝুরি খান, ইশরা ফুলঝুরি খান, শরীফ মুহাম্মাদ আরিফিন ও আল জোনায়েদ।
গত রাতের শিল্পীদের তালিকায় আরও ছিলেন স্বনামধন্য তবলাশিল্পী অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ছেলে অনুব্রত চট্টোপাধ্যায়। ধ্রুপদে উদয় ভাওয়ালকর, সঙ্গে পাখওয়াজে প্রতাপ আওয়াদ। সেতারে সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, সঙ্গে তবলায় পরিমল চক্রবর্তী। সব শেষে পরিবেশিত হয় রশিদ খাঁর খেয়াল।
শুক্রবার মাঝরাতের পর সেতারে রাগ হেমললিতে আলাপ জোড় ঝালা এবং গৎ বাজিয়ে শ্রোতাদের জাগিয়ে রেখেছিলেন তরুণ শিল্পী পূর্বায়ন চট্টোপাধ্যায়, সঙ্গে তবলায় অনুব্রত চট্টোপাধ্যায় ও তানপুরায় মুশফিকুল ইসলাম। রাগ বসন্ত বাহারে খেয়াল শোনান উলহাস কাশালকার, পরে রাগ সোহনি ও অন্যান্য। তাঁকে তবলায় সংগত করেন সুরেশ তালওয়ালকার, হারমোনিয়ামে মিলিন্দ কুলকার্নি ও তানপুরায় অভিজিৎ কুণ্ডু ও উজ্জ্বল কুমার মালাকার। শেষ পরিবেশনায় রনু মজুমদার বাঁশিতে মঙ্গল ভৈরব ও ইউ রাজেশ ম্যান্ডোলিনে রাগ অমৃতবর্ষিণী বাজিয়ে শোনান। দুজনে একত্রে পরিবেশন করেন রাগ নট ভৈরব। দর্শকদের অনুরোধে ভোরের ঠিক আগে বাঁশি ও ম্যান্ডোলিনে ছিল তাঁদের ভাওয়াইয়া। তাঁদের মৃদঙ্গে সহায়তা করেন এস ভি রামানি ও তবলায় অভিজিৎ ব্যানার্জি।
মাঠজুড়ে প্রদর্শনী: শুধু যন্ত্রসংগীতেই শেষ নয়, মাঠে ঘুরে ঘুরে দেখা যাবে বাংলার চিরায়ত সব বাদ্যযন্ত্র। আছে বুলবুল তরঙ্গ, অ্যাকোর্ডিয়ান, সারেঙ্গী, কর্নেট, সুরমণ্ডল, একতারা, দোতারা, তিনতারা থেকে সবই। জেনে নেওয়া যাবে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। আগামীর ঢাকা কেমন হতে পারে, তেমন এক স্বপ্নের প্রদর্শনী সাজিয়েছে বেঙ্গল ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক জানালেন, এ মাসেই শুরু হয়েছে প্রদর্শনী।
আজকের আয়োজন: আজ রোববার উৎসবের চতুর্থ রাতে থাকবে মুনমুন আহমেদ ও তাঁর দল রেওয়াজ পারফরমার্স স্কুলের ঝলমলে কত্থক নৃত্য, নীলেশ রণদেবের তবলা, জয়তীর্থ মেউন্ডির খেয়াল, তবলায় যুগলবন্দী পরিবেশন করবেন যোগেশ শামসি ও শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। আকর্ষণীয় যুগলবন্দী কর্ণাটকি সংগীত পরিবেশন করবেন দুই বোন ও বেহালাবাদক জুটি রঞ্জনি ও গায়ত্রী বালাসুব্রামানিয়াম, তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের সরোদ ও অজয় চক্রবর্তীর খেয়াল।