Menu

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব ২০১৬ ‘বোম্বে ঢুকলে সব শেষ’

গত রোববার বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের শেষ পরিবেশনা ছিল পাটিয়ালা ঘরানার পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর। সেদিনই দুপুরে গুলশানের একটি বাড়িতে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। উপস্থিত সবার সঙ্গে অনেক বিষয়ে কথা বলছিলেন গুণী এই কণ্ঠশিল্পী। পরে সে রাতেই আবার দেখা হয় তাঁর পরিবেশনার পর। সেই আলাপে যুক্ত হয় তাঁর পরিবারও

thumbnail

গুলশানের একটি বাড়িতে দুপুরে ছিল অজয় চক্রবর্তীর নিমন্ত্রণ। তিনি এলেন ১২টার দিকে। বাড়িতে জড়ো হওয়া সবাই তাঁকে দেখে শশব্যস্ত হয়ে উঠলেন। দুপুরের খাবার টেবিলে যাওয়ার আগে কত বিষয়েই না কথা বললেন তিনি!
নিজে থেকেই বললেন, ‘ঢাকায় গান করার খুব ভালো একটা পরিবেশ আছে। এখানে আমার মনে হয়, বোম্বের (মুম্বাই) ব্যাপারটা একটু কম। বোম্বে ঢুকলে সব শেষ।’

তিনি বললেন, ‘মন থেকে চাইলে সব পাওয়া যায়। আমার জীবনে এমন ঘটনা এক শরও বেশি। আমার বিশ্বাস, কেউ যদি মন থেকে চায়, তাহলে সেটা সে পায়।’
বাংলাদেশের মানুষের অতিথিপরায়ণতার কথা বলতে গিয়ে বললেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের এত আবেগ আর ভালোবাসা এবং তাদের অতিথিপরায়ণতা—এটা কিন্তু খুব অহংকারের জিনিস। মাস দুয়েক আগে আশাদির (আশা ভোসলে) কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমার সঙ্গে গান করতে চান। তো গান শোনাতে গেছি তাঁর কাছে, সাড়ে ১১টা নাগাদ। একটার দিকে বললাম, এবার তাহলে উঠি? বললেন, “নেহি নেহি! ক্যায়সে হো সাকতিহে!” (না না! তা কি করে হয়!) এরপর তিনি দুপুরে খাইয়ে, বিকেলে মুড়ি খাইয়ে আমাকে ছাড়লেন। এগুলো শিক্ষামূলক ব্যাপার।’
উঠল কাজী নজরুল ইসলামের কথাও। দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, ‘একমাত্র মানুষ কাজী সাহেব, যাঁর জন্য বঙ্গে রাগসংগীতের প্রচার ও প্রসার হয়েছে। আর কেউ না। সবাই বড়, কিন্তু রাগসংগীতের বন্দিশের যে চরিত্রগুলো, বাংলা ভাষায় তিনিই প্রথম প্রকাশ করেছেন। “মেঘমেদুর বরষায়”, “অঞ্জলি লহ মোর সংগীতে”, “সাজিয়াছ যোগী”—সব রাগের ওপর গান।’

বেঙ্গল উৎসবে সময়ের অভাবে কোনো রাগ বিস্তারের আগেই শেষ করে দিতে হয়, এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, ‘রাগের রূপ-রস-গন্ধ যুগে যুগে শিল্পীরা কম বুঝেছে। রাগকে বুঝতে গেলে একজন বাবাকে, মাকে বোঝা দরকার। যে মহিলার সঙ্গে আমি জীবনের প্রথম পঁচিশ বছর কাটিয়েছি, তিনি হচ্ছেন মা। কিন্তু একটা রাগের সঙ্গে আমরা কতক্ষণ সময় কাটাই? মায়ের চেয়ে প্রিয় তো কেউ নেই, রাগগুলো কেন এত প্রিয় হয় না? রাগের বহু বহু রাস্তা আছে, যে রাস্তা এখনো খোঁজা হয়নি। অহংকার করছি না, আমি রোজ পাই সে রাস্তা। সবাই নির্দিষ্ট রাস্তাটাই খোঁজে।
‘এখন মিষ্টি তৈরি হচ্ছে, তা দেখতে কেমন বাইরে থেকে, সেটাই আসল হয়ে যাচ্ছে। আগে একটা রসগোল্লা মুখে দিলে যে তৃপ্তি হতো, এখন দশটা মিষ্টিতেও সে তৃপ্তি হয় না। কারণ, অন্তঃকরণ দিয়ে কোনো জিনিস প্রেজেন্ট না করলে সেটা মানুষের অন্তঃকরণে যায় না।’

 

View Full Article