Menu

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব বাঁশির সুরে ভাঙল রাতজাগানিয়া মিলনমেলা

বাঁশির জাদুকর প-িত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার জাদুকরী বাঁশির সুরতরঙ্গের মধ্য দিয়ে বাজল বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের পঞ্চম আসরের বিদায়ী সুর। ভাঙল পাঁচদিনের সুরের মিলনমেলা। উৎসবের সমাপনী রাতে বনানীর আর্মি স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সংগীতপ্রেমী দর্শক-শ্রোতার ভিড়ে। রাতভর বিভিন্ন শিল্পীর পরিবেশনা শেষে অপেমাণ হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতার করতালির মধ্য দিয়ে মঞ্চে আসেন প-িত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। কিংবদন্তি এই শিল্পীর বাঁশির সুরে উপস্থিত হাজারো দর্শক যেন মুহূর্তেই বুঁদ হয়ে যান সুরের মায়ায়। লিখেছেনÑচপল মাহমুদ

সুরের ইন্দ্রজালের মায়াবী পরিবেশনার মধ্য দিয়ে ২৪ নভেম্বর শুরু হয় বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব। প্রথম পরিবেশনা ছিল নৃত্যনন্দনের শিল্পীদের। স্বনামধন্য নৃত্যশিক শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা ও নির্দেশনায় দলীয় নৃত্য ‘রবি করোজ্জ্বল’ পরিবেশন করেন প্রায় ষাটজন শিল্পী। প্রবীণ গোডখি-ির বাঁশির সঙ্গে বেহালায় ইন্দ্রজাল ছড়ান ভারতের মিউজিশিয়ানস ফেডারেশনের সভাপতি রাতিশ তাগড়। খেয়াল পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চ ওঠেন বিদুষী গিরিজা দেবী। সরোদ পরিবেশনা নিয়ে আসেন ওস্তাদ আশিষ খান। গভীর রাতে শীতল আবহ মেখে খেয়াল পরিবেশনায় যুগলবন্দি হন বিদুষী অশ্বিনী ভিদে দেশপা-ে ও প-িত সঞ্জীব অভয়ংকর। প্রথম দিনের সবশেষ বেহালা পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে ওঠেন ড. এল সুব্রহ্ম্যণন।

thumbnail

উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল শুক্রবার। ছুটির দিন থাকায় উৎসব প্রাঙ্গণে ছিল সংগীতপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়। এদিন প্রথম পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন শিল্পী বিদুষী মাধবী মুডগাল ও আরুশি মুডগাল। খেয়াল পরিবেশন করতে মঞ্চে আসেন প্রিয়াঙ্কা গোপ। এদিন রজনীর অন্যতম আকর্ষণ ছিল রাহুল শর্মার সন্তুর পরিবেশনা। অনুষ্ঠানের দলীয় কণ্ঠসংগীত পরিবেশন করেন মোহাম্মদ শোয়েব ও অন্যরা। আরও ছিল প-িত রনু মজুমদারের বাঁশি ও ইউ রাজেশের ম্যান্ডোলিনের যুগলবন্দি পরিবেশনা। মাইহার ঘরানার এই বাদ্যশিল্পী আর্ট অব লিভিং অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে ৫,৩৭৮ জন বংশীবাদককে উপস্থাপন করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিষয়টি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে।

তৃতীয় দিনও উৎসব প্রাঙ্গণে ছিল সংগীতপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়। এদিন সূচনা ঘটে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীদের দলীয় সরোদ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। সরোদ পরিবেশনার পর বাঁশির সুরে ধ্রুপদীর চেতনায় শান দিয়ে দেন কর্নাটকি সংগীত রীতির বংশীবাদক শশাঙ্ক সুব্রহ্ম্যণন। বাঁশির জাদুর রেশ কাটতে না কাটতেই খেয়াল নিয়ে মঞ্চে আসেন ভারতীয় কাসিক্যাল মিউজিকের স্বনামধন্য শিল্পী ড. প্রভা আত্রে। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ফরুখাবাদ বাদনরীতির একজন অন্যতম ধারক ও বাহক। তার তবলার জাদুকরী পরিবেশনার পর ধ্রুপদ নিয়ে মঞ্চে আসেন শাস্ত্রীয়সংগীতের সনাতন ধারা ধ্রুপদের বিশিষ্ট শিল্পী প-িত উদয় ভাওয়ালকার। শেষ প্রহরে বিশেষ চমক হিসেবে ছিলেন ওস্তাদ রশিদ খানের খেয়াল।

উৎসবের চতুর্থ রাতের সূচনা হয় মুনমুন আহমেদ ও তার দল ‘রেওয়াজ’-এর দলীয় কত্থক নৃত্যে পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। এর পর খেয়াল পরিবেশন করতে মঞ্চে আসেন কিরানা ঘরানার কৃতী কণ্ঠশিল্পী জয়তীর্থ মেউন্ডি। খেয়ালের রেশ কাটতে না কাটতেই তবলায় যুগলবন্দি হয়ে মঞ্চে আসেন প-িত যোগেশ শামসি ও প-িত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। চতুর্থ রাতের অন্যতম আকর্ষণ ছিল কর্নাটকি কণ্ঠসংগীত শিল্পী দুই বোন রঞ্জনি বালসুব্রহ্মণ্যন ও গায়ত্রী বালসুব্রহ্মণ্যনের যুগল পরিবেশনা। মধ্যরাতের শেষ ভাগে সরোদ পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন প-িত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার।

২৮ নভেম্বর পর্দা নামল পঞ্চম এ ধ্রুপদী সংগীত আসরের। সমাপনী দিনে সন্ধ্যা ৭টা থেকে শেষ রাত অবধি সংগীতপ্রেমীদের জাগিয়ে রাখেন উপমহাদেশীয় শিল্পীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগের দলীয় কণ্ঠসংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাপনী রজনীর প্রথম পরিবেশনা। তবলায় ছিলেন মোহাম্মদ জাকির হোসেন। সেতার নিয়ে মঞ্চে আসেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর পর ছিল উৎসবের সমাপনী আয়োজনের আনুষ্ঠিকতা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। সমাপনী আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান। সমাপনী আয়োজনের শেষে মঞ্চে আসেন এবারের উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ প-িত শিব কুমার শর্মা। এর পর খেয়ালের সুরে ভাসাতে মঞ্চে আসেন কুমার মারদুর। খেয়ালের সুরের ভাব কাটতে না কাটতেই সেতার পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন প-িত কুশল দাস ও প-িত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। সেতারের পরিবেশনার পর আবার খেয়াল পরিবেশন করতে মধ্যরাতের শেষ ভাগে মঞ্চে আসেন আরতি আঙ্কলিকার। তবলায় তাকে সঙ্গত করেন রোহিত মজুমদার। আসরের সবশেষ পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে ওঠেন প-িত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার। তার বাঁশির সুরে রাতজাগা উত্তাল জনসমুদ্রে বেজে ওঠে বিদায়ী সুর। পর্দা নামে ধ্রুপদী সংগীতের এই মহা উৎসবের।

উৎসবের এবারের আসর নিবেদন করছে স্কয়ার এবং সহযোগিতায় আছে ব্র্যাক ব্যাংক। পুরো আয়োজনটি সরাসরি সম্প্রচার করছে মাছরাঙা টেলিভিশিন। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে।

View Full Article