Menu

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের শেষ দিন আজ রাতজাগানিয়া বাঁশির সুরের অপেক্ষা

ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে চলছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের পঞ্চম আসর। আজ উৎসবের শেষ দিন। সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু শেষ রাত অবধি সংগীতপ্রেমীদের জাগিয়ে রাখবেন উপমহাদেশীয় শিল্পীরা। শাস্ত্রীয় সুরের আহ্বানে সাড়া দিতে সংগীতপিপাসু হাজার হাজার শ্রোতা মন ভেজাবেন রাগাশ্রয়ী সুরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগের দলীয় কণ্ঠসংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হবে আজকের আয়োজন। তারপর তবলা বাজাবেন বাংলাদেশের কৃতী তবলাশিল্পী মোহাম্মদ জাকির হোসেন এবং ওস্তাদ মোজাম্মেল হোসেনের দৌহিত্র স্বরূপ হোসেন। এরপর দলীয় সেতার নিয়ে মঞ্চে উঠবে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ দলে আছেন নিশিত দে, সাম্মো দে, আশিশ নারায়ণ সরকার, প্রসেনজিৎ মণ্ডল, আহম্মেদ ইমতিয়াজ হুমায়ুন, টিএম সেলিম রেজা, খন্দকার নজমুস সাকিব, রিংকু চন্দ্র দাস, মেহরিন আলম, জ্যোতি ব্যানার্জী, জাহাঙ্গির আলম শ্রাবণ, মোহাম্মদ কাওছার প্রমুখ। সন্তুর নিয়ে দর্শক মাতাতে মঞ্চে আসবেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা। তবলায় তাকে সঙ্গত করবেন যোগেশ শামসি। খেয়ালের সুরে ভাসাতে আসবেন কুমার মাদুর। তবলায় সঙ্গত করবেন আজিঙ্কা যোশি। সেতার বাজাবেন পণ্ডিত কুশল দাস ও পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। খেয়াল পরিবেশন করতে আসবেন আরতি আঙ্কলিকার। তবলায় তাকে সঙ্গত করবেন রোহিত মজুমদার। সবশেষে থাকছে এবারের আসরের সবচেয়ে বড় চমক প-িত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশির জাদু। তবলায় তাকে সঙ্গত করবেন পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।

thumbnail

হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া
বাঁশির জাদুকর পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। পনেরো বছর বয়স পর্যন্ত বেনারসের পণ্ডিত রাজা রামের কাছে কণ্ঠসংগীতে তালিম নেন। পরে পণ্ডিত ভোলানাথের বাঁশি শুনে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, বাঁশিবাদন শিখবেন। পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া সবার শ্রদ্ধাভাজন, ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীতজ্ঞ। তার অর্জন ও সম্মাননার তালিকা বেশ দীর্ঘ। ভারত সরকার তাকে পদ্মবিভূষণ, সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার ও ন্যাশনাল এমিনেন্স অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করেছে। ডাচ রাজপরিবারের পক্ষ থেকে ‘অফিসার ইন দ্য অর্ডার অফ ওরাঞ্জ ন্যাসো’ খেতাব এবং ফরাসি সরকারের পক্ষ থেকে নাইট উপাধি লাভ করেছেন তিনি।

শিবকুমার শর্মা
সংগীতজগতে সন্তুর শব্দটির সঙ্গে পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার নাম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। নানা বাধা উপেক্ষা করে বাবার অনুপ্রেরণাতে কাশ্মীরি লোকসংগীতে ব্যবহৃত সন্তুরকে মার্গসংগীতের মঞ্চে উপস্থাপন করেন তিনি। একনিষ্ঠ অধ্যবসায়, কান্তিহীন গবেষণা ও পুনঃপুনঃ বিনির্মাণের মাধ্যমে সন্তুরবাদনে তিনি নতুন মাত্রা সংযোজন করেন এবং তা তাকে এনে দেয় অভাবনীয় সাফল্য। যা বোঝা যায় তার অর্জনের তালিকা দেখেই। পদ্মবিভূষণ, পদ্মশ্রী, তানসেন সম্মান, মাস্টার দীনানাথ মঙ্গেশকার পদক, আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি পদক, ইন্দিরা গান্ধী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লেটারস, সংগীত নাটক আকাদেমি ফেলোশিপসহ অসংখ্য সম্মাননা অর্জন করেছেন তিনি।

মোহাম্মদ জাকির হোসেন
মোহাম্মদ জাকির হোসেন বাংলাদেশের একজন কৃতী তবলাশিল্পী। তিনি শিক্ষালাভ করেছেন ওস্তাদ আকরাম খান, ওস্তাদ হাসমত আলী খান ও দিল্লির বীরেন্দ্র মলভিয়ার কাছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি পারদর্শিতার সঙ্গে তবলা পরিবেশন করেছেন। বর্তমানে জাকির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ, ওয়াহিদ সংগীত একাডেমি ও ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনে শিক্ষকতা করছেন।

কুশল দাস
কুশল দাস ভারতের একজন বিশিষ্ট সেতার ও সুরবাহার শিল্পী। কলকাতার এক সাংগীতিক পরিবারে তার জন্ম। পিতামহ বিমলচন্দ্র দাস এস্রাজ বাদনে এবং পিতা শৈলেন দাস ও পিতৃব্য শান্তনু দাস সেতার বাদনে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। পিতা ও পিতৃব্যের কাছেই কুশল দাস দীা নেন। পরবর্তীকালে পণ্ডিত অজয় সিংহ রায়, পণ্ডিত মানস চক্রবর্তী, পণ্ডিত রামকৃষ্ণ বসু এবং পণ্ডিত সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তালিম নেন। রাগদারিতে গভীর প্রজ্ঞার জন্য চ-ীগড়ের প্রাচীন কলাকেন্দ্র থেকে সংগীত বিশারদ স্বর্ণপদক এবং মুম্বাইয়ের সুরসংগীত সংসদ থেকে সুরমণি খেতাব অর্জন করেন। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে বাদ্য পরিবেশন করেছেন কুশল দাস। ঢাকায় বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের তিনি অন্যতম গুরু।

আরতি আঙ্কলিকার
আরতি আঙ্কলিকার ভারতের একজন বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী। তিনি আগ্রা গোয়ালিয়র ঘরানার পণ্ডিত বসন্তরাও কুলকার্নি এবং জয়পুর আত্রৌলি ঘরানার কিশোরী আমানকারের কাছে সংগীতে তালিম নেন। সুকণ্ঠী এই গায়িকার তাল ও সুরের ওপর চমৎকার দখল। তার পরিবেশনাকে করে তোলে মোহনীয়। আরতি ১৯৮৩ এবং ১৯৮৪ সালে অল-ইন্ডিয়া রেডিও প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। প্রাপ্ত স্বীকৃতির মধ্যে মেয়র পদক, পণ্ডিত কুমার গান্ধর্ব সম্মান ও পণ্ডিত যশরাজ পদক অন্যতম। ‘সংহিতা’ ছায়াছবিতে কণ্ঠ দিয়ে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন। ভারতে ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে তিনি সুনাম অর্জন করেছেন।

View Full Article