বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব ২০১৬ খেয়াল দিয়ে শুরু, দাদরা দিয়ে শেষ
গকোঁশে খেয়াল দিয়ে শুরু করলেন ৮৭ বছরের বিদুষী গিরিজা দেবী। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে গান করছেন সেনিয়া ও বেনারস ঘরানার প্রবাদপ্রতিম এই কণ্ঠশিল্পী। তিনি মঞ্চে এলেন। সচকিত শ্রোতারা। রাতভর গান শোনার প্রস্তুতি তাঁদের। প্রস্তুতির এ পর্বে চলে আসে মনোযোগ। রাত গভীর হতে শুরু করে মিশ্র খাম্বাজে ঠুমরির মধ্য দিয়ে। পরেই ছিল কাফি রাগে একটি পাঞ্জাবি টপ্পা। শেষ করেন জনপ্রিয় দাদরা ‘কেয়া জাদু ডালা’ দিয়ে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে পঞ্চম বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব ২০১৬। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই উৎসবে প্রতিবারই উপস্থিত থাকেন কবি সৈয়দ শামসুল হক। সশরীরে এবার নেই তিনি। উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে তাঁকে। দুদিন আগেই চলে গেছেন গত উৎসবে সংগীত পরিবেশন করা বালমুরালিকৃষ্ণ। তাঁকে এবং ওস্তাদ আলী আহমেদ হোসেনকে এই উৎসবে স্মরণ করা হলো শ্রদ্ধাভরে। শঙ্কার দোলাচল কাটিয়ে শুদ্ধ সংস্কৃতি দিয়েই সব অশুভকে জয় করার প্রত্যয়ে শুরু হলো কণ্ঠ ও যন্ত্রসংগীতে আবিষ্ট থাকার পঞ্চম বর্ষ।
এবারের উৎসব শুরু হয় দলীয় বর্ণিল নৃত্য ‘রবি-করোজ্জ্বল নৃত্যমালিকা’ দিয়ে; পরিবেশন করেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল ‘নৃত্যনন্দন’। এ দেশে মণিপুরি নৃত্যের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী তিনি। নৃত্যশৈলীর যে ধারাগুলো রবীন্দ্রনাথে এসে মিলেছিল, সেগুলোরই উৎস ও পরম্পরা নিয়ে গাঁথা ‘রবি-করোজ্জ্বল’ উজ্জ্বল করল উদ্বোধনী সন্ধ্যা, ছিল মণিপুরি নৃত্যও। বাঁশি ও বেহালায় রাগ মারু বিহাগ ও হংসধ্বনি পরিবেশন করেন প্রবীণ গোদখিন্দি ও রতিশ তাগড়ে। এই উৎসবে এবারই প্রথম যোগ দিলেন তাঁরা। সঙ্গে তবলায় রামদাস পালসুল। ২০১০ সালে আর্জেন্টিনায় বিশ্ব বাঁশি উৎসবে বাজিয়ে দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন প্রবীণ গোদখিন্দি। রতিশ তাগড়েও নানা পুরস্কারে ভূষিত বেহালাশিল্পী। আর তবলাশিল্পী রামদাস পালসুল পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকারের শিষ্য। পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পারফর্মিং আর্টসের অন্যতম গুরু তিনি।
তাঁদের পরিবেশনার পরেই ছিল উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। তাতে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিশেষ অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সেলিম আর এফ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ সংগীতের নির্যাস যার ভেতরে প্রবেশ করে, সে কোনো অশুভ কাজ করতে পারে না, অপরাধ করতে পারে না। আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে, এই উৎসবের আশি শতাংশ শ্রোতাই যুবক।’ আসাদুজ্জামান নূর নিহত ব্লগার, লেখক, ফারাজ ও হলি আর্টিজান, শোলাকিয়াসহ সাম্প্রদায়িক হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ করেন। আবৃত্তি করে শোনান কবি তারিক সুজাতের একটি কবিতা।
মাঝরাতের দিকে সরোদে যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর নাতি ওস্তাদ আশিস খাঁ, সঙ্গে খ্যাতিমান তবলাশিল্পী বিক্রম ঘোষ। খেয়ালে যুগলবন্দি ‘জাসরাঙ্গি’ শোনান বিদুষী অশ্বিনী ভিড়ে দেশপাণ্ডে ও পণ্ডিত সঞ্জীব অভ্যাঙ্কার।
আজকের পরিবেশনা: আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে ওডিশি নৃত্য পরিবেশন করবেন বিদুষী মাধবী মুদগাল, আরুতি মুদগাল, তবলায় বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীরা, খেয়াল গাইবেন প্রিয়াঙ্কা গোপ, সন্তুরে যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করবেন রাহুল শর্মা। থাকছে আরও অনেক পরিবেশনা।