বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব শুরু ২৪ নভেম্বর
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে পাঁচদিনব্যাপী বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব ২০১৬। দর্শক-শ্রোতার সংখ্যার বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উচ্চাঙ্গসংগীত আসরের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত উৎসবটি এ বছর উৎসর্গ করা হয়েছে সব্যসাচ্য লেখক সৈয়দ শামসুল হককে। পঞ্চমবারের মতো স্বয়ার নিবেদিত এ উৎসবের আয়োজক বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। সহযোগিতায় রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
রাজধানীর একটি হোটেলে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিতব্য উৎসবের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। পাঁচদিনের উৎসবটির সূচনা হবে ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায়। চলবে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলবে সুর-তাল ও লয়ের খেলায় বৈচিত্র্যময় ধ্রুপদী পরিবেশনা। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে উৎসবে অংশগ্রহণের নিবন্ধন কার্যক্রম।
উৎসবের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের, উপদেষ্টা আবদুল মোমেন, মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী ও ব্র্যাংক ব্যাংকের হেড অব কমিউনিকেশন্স জারা মাহবুব।
আবুল খায়ের বলেন, এদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে নবজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে এ উৎসবের সূচনা। ইতোমধ্যে বিশাল পরিসরের এ সঙ্গীতানুষ্ঠানটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে। নানা পরিস্থিতির কারণে এ বছরের আয়োজন নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছিল। তবে সরকারি উদ্যোগ ও আগ্রহ বিভিন্ন মহলের অঙ্গীকার দূর করে দিয়েছে সেই শংকা। তিনি আরো বলেন, শুদ্ধ সঙ্গীতের ক্ষেত্রে ভালো লাগাটাই হচ্ছে বড় বিষয়। তাই উচ্চাঙ্গের এই সঙ্গীতধারায় সব কিছুই যে বুঝতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সঙ্গীতের মাধ্যমে চিত্তের বিকাশ ঘটিয়ে গড়ে তুলতে হবে আলোকিত মানুষ। আর আলোকিত মানুষ তৈরির মাধ্যমে মৌলবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়া সহজ হবে।
দেশের শিল্পীদের পরিবেশনা : উৎসবের অংশ নেবেন বাংলাদেশের ১৬৫ জন শিল্পী। উদ্বোধনী পর্বে নৃত্যশিক্ষক শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা ও নির্দেশনায় নৃত্যনন্দন দলের প্রায় ষাটজন শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূল গান ও ভাঙ্গা গানে মণিপুরী, ভরতনাট্য, ওড়িশি ও কত্থক রীতির রূপায়ণ পরিবেশন করবেন। উৎসবের চতুর্থদিনে কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবেন মুনমুন আহমদ ও তাঁর দল। উৎসবের শেষদিন প্রিয়াংকা গোপের একক কণ্ঠের খেয়ালের সঙ্গে থাকবে তাঁর নির্দেশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা। উৎসবের দ্বিতীয়দিন মোহাম্মদ শোয়েবের নির্দেশনায় তাঁর শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করবে নিরীক্ষামূলক রাগ সঙ্গীত। এছাড়া উৎসবের বিভিন্ন দিনে সেতার, সরোদ ও তবলায় যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করবে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এবারের উৎসবের অংশ নিচ্ছেন বেনারস ঘরানার পদ্মবিভূষণপ্রাপ্ত ৮৭ বছরের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী বিদুষী গিরিজা দেবী। উৎসবের প্রবীণতম এই শিল্পী খেয়াল, ঠুমরি ও টপ্পার পরিবেশনায় ছড়াবেন পূরব অঙ্গের রূপ-রস। প্রথমদিনের পরিবেশনায় অংশ নেবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেওয়া কিংবদন্তি শিল্পী আলাউদ্দিন খাঁর বংশধর ওস্তাদ আশিষ খাঁ। এবারের উৎসবে প্রাধান্য পাবে নবীন শিল্পীদের উপস্থিতি ও একাধিক যৌথ পরিবেশনা। পুরুষ ও নারীকণ্ঠের ভিন্ন স্তরের রাগে পরিবেশিত জাসরাঙ্গি শীর্ষক যুগলবন্দি পরিবেশনায় অংশ নেবেন জয়পুর আত্রোলির বিদূষী অশ্বিনী ভিদে ও মেওয়াতি ঘরানার পণ্ডিত সমঞ্জীব অভয়ঙ্কর। উৎসবের প্রথমদিনে পশ্চিমা ও ঢংয়ে বেহালা বাজিয়ে শোনাবেন পদ্মভূষণপ্রাপ্ত ড. এল সুব্রহ্মণ্যন। প্রেরণাসঞ্চারী ওড়িশি নৃত্যের আশ্রয়ে মঞ্চ আলোকিত করবেন বিদুষী মাধবী মুডগাল ও তাঁর শিষ্যা আরুশি মুডগাল। এ উৎসবের প্রথমবারের মতো শোনা যাবে ম্যান্ডোলিনের সুর। বাঁশি ও ম্যান্ডোলিনের যুগলবন্দি পরিবেশন করবেন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত শিল্পী বংশীবাদক রনু মজুমদার ও ইউ রাজেশ।
বিগত বছরের মতো এবারও অনন্য এই সঙ্গীতায়োজনে অংশ নেবেন প্রবাদপ্রতিম বাঁশরিয়া পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। শোনা যাবে পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার মোহনীয় সন্তুরের সুর। কণ্ঠসঙ্গীত ও বাদ্যের নানা পরিবেশনা নিয়ে হাজির হবেন পণ্ডিত অজয় চক্রবতী, পণ্ডিত উলহাস কশলকর, ওস্তাদ রশিদ খান, পণ্ডিত কুশল দাস, পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার ও পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকার। শোনা যাবে বিশিষ্ট সেতারির পণ্ডিত সঞ্জয় বন্দ্যোপায়েরর মিষ্টি-মধুর সেতারের বাজনা। থাকবে পদ্মভূষণপ্রাপ্ত কিরানা ঘরানার কোকিলকণ্ঠী শিল্পী ড. প্রভা আত্রে এবং ফরুকাবাদা ঘরানার খ্যাতিমান তবলিয়া পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ছেলে অনুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পরিবেশনা। বাঁশি ও বেহালার যুগলবন্দি পরিবেশনায় রং ছড়াবেন প্রবীণ গোধকিন্ডি ও রাতিশ টাগডের। যৌথ তবলাবাদনে অংশ নেবেন পণ্ডিত যোগেশ শামসী ও পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া বিভিন্ন মেজাজের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত উপস্থাপন করবেন সেতারে রাগসঙ্গীতের নন্দিতশিল্পী পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়, কর্ণাটকি সঙ্গীতে পারদর্শী ভগ্নিদ্বয় রঞ্জনী ও গায়ত্রী, কর্ণাটকি বংশীবাদক শশাঙ্ক সুব্রহ্মণ্যন, খেয়ালিয়া আরবতহী আঙ্কালিকার, জয়তীর্থ মেউন্ডি ও কুমার মারদুর।
কনিষ্ঠতম শিল্পী হিসেবে উৎসবে অংশ নেবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী ইসরাত ফুলঝুরি খান। সাত বছরের এই শিল্পী সেতার বাজিয়ে শোনাবেন।
উৎসবে অংশগ্রহণের নিয়ম-নীতি : প্রতিবছরের মতো অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে প্রবেশ পাশ। নভেম্বরের শুরু থেকে সীমিত সময়ের জন্য চলবে এই নিবন্ধন কার্যক্রম। অনলাইনের বাইরে ধানমন্ডির ৭/এ সড়কের ৬০ নম্বর বাড়ির জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠ এবং এয়ারপোর্ট রোডের খিলক্ষেতের বেঙ্গল সেন্টারে সরাসরি নিবন্ধন করা যাবে। কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না উৎসব আঙিনায় এবং থাকবে না গাড়ি পার্কিয়ের সুবিধা। উৎসব শুরুর প্রথম দুই দিন পর্যন্ত অফ-সাইট নিবন্ধন চললেও তৃতীয় দিন থেকে এ সুযোগ থাকবে না। প্রতিদিন রাত ১টায় বন্ধ হয়ে যাবে উৎসবের প্রবেশ পথ। ভোরে আর্মি স্টেডিয়াম থেকে ফেরার জন্য বাস থাকবে নির্দিষ্ট রুটে।