Menu

‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসব-২০১৬’ শুরু হলো শুদ্ধ সুরের অবগাহনে ভেসে যাওয়া

প্রকৃতিতে হেমন্তের অনুপম পরিবেশ। উৎসবের সাজে সজ্জিত ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামের চারিধার-পরিছন্ন। শীত আসতে এখনও অনেক বাকি থাকলেও অনেকটা শীতের আবহের সন্ধ্যা। সন্ধ্যার আবছায়া আলো-অাঁধারিতে স্টেডিয়ামের চারপাশে জ্বলে উঠেছে নানা রঙের আলো। নানা রঙের এই আলোকজ্জ্বল পরিবেশ পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই সাজ-সজ্জার আরেক অনুপম দৃশ্য। মাঠের হাজার হাজার মানুষ এদিক ওদিকে ঘোরাঘুরি করছে। সময় গড়িয়ে স্টেডিয়ামের প্রাকৃতিক পরিবেশে নেমে এলো হেমন্তের অগ্রহায়নের হালকা শিশির স্নাৎ সন্ধ্যা। এমন সময় বিশাল মাঠের এক পাশে আলোহীন সুসজ্জিত মঞ্চে হঠাৎ জ্বলে উঠল আলো; বাদ্যযন্ত্রের ছন্দময় বোল ; তার সাথে সাথে শুরু হলো বাংলাদেশের নৃত্যগুরু শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালনায় নৃত্যসংগঠন ‘নৃত্যনন্দন’-এর ৬০ জন শিল্পীর দলীয় নৃত্য। ‘রবি করোজ্জ্বাল’ শিরোনামের এই দলীয় নৃত্য পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে ‘বেঙ্গল ফাউন্ডেশন’-এর আয়োজনে পঞ্চমবারের মতো শুরু হলো পাঁচ দিনব্যাপী ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসব-২০১৬’। যার মাধ্যমে দেশের সংগীতপ্রিয় মানুষের যেমন প্রায় এক বছরের প্রতীক্ষার অবসান হলো তেমনই শুরু হলো শাস্ত্রীয় সংগীতের শুদ্ধ সুরের অবগাহনে ভেসে যাবার দিন।
দেশের বহুমাত্রিক লেখক সৈয়দ শামসুল হক’কে উৎসর্গ করা এবারের এই উৎসবের এই সূচনা আয়োজনের দেশের ‘নৃত্যনন্দন’-এর শিল্পীদের সম্মেলক নৃত্যে রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা উপস্থাপিত হয়। মণিপুরী নৃত্যশৈলীর এ পরিবেশনা মুগ্ধ করে দর্শকদের। নৃত্যের সঙ্গে পরিবেশিত গানগুলোর মধ্যে ছিল ‘বাসন্তী, হে ভুবনমোহিনী’, ‘বিপুল তরঙ্গ রে’, ‘ওই পোহাইলো তিমির রাতি’। এছাড়াও ছিল ব্রজবুলী ভাষার গান।
দেশে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের চর্চা এবং প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্য পঞ্চমবারের শুরু হওয়া এই শাস্ত্রীয় সংগীতের মহাযজ্ঞটি নিবেদন করছে ‘স্কয়ার গ্রুপ’। বাংলাদেশ ও ভারতের আড়াই শতাধিক সঙ্গীতজ্ঞ এই উৎসবে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের শিল্পী ১৬৫ জন। শিল্পী ও দর্শকের অশগ্রহণ এবং ব্যাপ্তির বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উচাঙ্গসঙ্গীতাসরে পরিণত হওয়া বৃহৎ এ আয়োজনটিও সাজানো হয়েছে দেশের নবীন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পীদের সঙ্গে শ্রোতার মন উচাটন করা উপমহাদেশের ওস্তাদ, পন্ডিত. গুরু ও বিদুষীদের অনবদ্য শাস্ত্রীয় সংগীতের নানামাত্রিক পরিবেশনা দিয়ে। প্রথমদিনের এই আয়োজনে এরপরেই ‘বাঁশি ও বেহালা’র যুগলবন্দী নিয়ে মঞ্চে আসেন শিল্পী প্রবীণ গোধকিন্ডি (বাঁশি) ও রাতিশ টাগড(বেহালা)। তাদের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন রামদাস পালসুল।
বাঁশি ও বেহালার এ যুগলবন্দি শেষে শুরু হয় উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। এই আয়োজন উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় এ উদ্বোধনী আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এছাড়াও এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্যবর্ধন শ্রিংলা, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সেলিম আর এফ হোসেন। এর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে খেয়াল পরিবেশন করে এ উৎসব রাঙিয়ে তোলেন বিদুষী গিরিজা দেবী। সেনিয়া ও বেনারস ঘরানার প্রবাদপ্রতিম কণ্ঠশিল্পী গিরিজা দেবীর কণ্ঠে মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে পুরো আর্মি স্টেডিয়ামজুড়ে। তার সঙ্গে তবলায় গোপাল মিশ্র ও সারাঙ্গিতে সঙ্গত করেন মুরাদ আলি খান। এরপর, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ছেলে বিশ্ববিখ্যাত সরোদিয়া ওস্তাদ আলি আকবর খাঁয়ের নাতি ওস্তাদ আশিষ খাঁ পরিবেশন করেন ‘সরোদ’। গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পাওয়া এ শিল্পীর সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন পন্ডিত বিক্রম ঘোষ।
‘জাসরাঙ্গি’ শিরোনামে খেয়াল যুগলবন্দি নিয়ে এর পর মঞ্চে আসেন জয়পুর আত্রৌলি ঘরনার অন্যতম শিল্পী বিদুষী অশ্বিনী ভিদে দেশপা-ে ও মেওয়াতি ঘরানার প্রখ্যাত শিল্পী পন্ডিত সঞ্জীব অভয়ংকর। তাদের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন আজিঙ্কা যোশি ও রোহিত মজুমদার।
গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত ড. এল সুব্রহ্ম্যণনের বেহালাবাদনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের আয়োজন। বেহলার সুরে রাজধানীতে নেমে আসে নতুন এক ভোর। সে স্নিগ্ধতাকে সঙ্গী করে ঘরে ফেরেন আর্মি স্টেডিয়ামে আগতরা। সে সঙ্গে পরের দিন আসার ইচ্ছাকে করে তোলেন আরও তীব্র। ড. এল সুব্রহ্ম্যণনের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন পন্ডিত তন্ময় বসু।
আজকের আয়োজন : আজ উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এদিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়। শুরুতেই ওডিশি নৃত্য পরিবেশন করবেন বিদুষী মাধবী মুডগাল ও আরুশি মুডগাল। এরপর, দলীয় তবলা পরিবেশন করবে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীশিল্পীরা। খেয়াল পরিবেশন করবেন বাংলাদেশের শিল্পী প্রিয়াঙ্কা গোপ। সন্তুরে ঝংকার তুলবেন শিল্পী রাহুল শর্মা। কণ্ঠে দলীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন মোহাম্মদ শোয়েব ও তার দল। সেতার সুর তুলবেন সেতারে রাগসঙ্গীতের স্বতন্ত্র রুপকার পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়। খেয়াল পরিবেশন করবেন পন্ডিত উলহাস কশলকার। এরপরেই এ অনুষ্ঠানে নতুন যোগ হওয়া ‘বাঁশি’ সাথে ‘ম্যান্ডোলিন’ এর যুগলবন্দী। এতে বাঁশি বাজাবেন গ্রামি অ্যাওয়ার্ড মনোনয়নপ্রাপ্ত বঁংশীবাদক পন্ডিত রনু মজুমদার এবং ম্যান্ডোলিন বাঁজিয়ে শোনাবেন ম্যান্ডোলিনের রুপকার প্রয়াত ইউ শ্রীনিবাসের ভাই-ইউ রাজেশ। তাদের এ বাঁশি ও ম্যান্ডোলিনের যুগলবন্দি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় দিনের পরিবেশনা।