Menu

বেঙ্গল উৎসবে পল্লী গানের সুর তুলে ধরার আহ্বান

শেষ রাতের তারাগুলো তখনো ম্লান হয়নি। পৌষের পূর্ব আকাশে হালকা আভায় জানান দিচ্ছে রবির আগমনী বার্তা। রাজধানীর আবহানী মাঠে রসবোধসম্পন্ন সঙ্গীতশ্রোতার উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভর্তি। হালকা কুয়াশার চাদর ভেদ করে বাঁশিতে বিদায়ের কান্নার সুর যেন অনন্ত শূন্যে মিলিয়ে যাচ্ছে। আনন্দের সুরের মধ্যে কোমল নিখাঁদ নতুন দিনের আহ্বান জানাচ্ছে। পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশি থেকে ভেসে আসছে প্রভাতী রাগের সুর। মুহূর্তে যেন পুরো পরিবেশ হয়ে উঠল বিশাল কাজের তীর্থ ত্রে। শ্রোতাকুল নীরবে সুরের মায়াজালে সঁপে দিলেন নিজেদের। এরপর রাগ জৈৎ শোনান রূপক ও ত্রিতালে।
সবশেষে ছিল লোকগানের ধুন পরিবেশনা।
মঞ্চ থেকে বাঁশিতে ধ্রুপদী সুর ছড়িয়ে দিয়ে রাঙিয়ে তুললেন সমগ্র মাঠ এবং একই সাথে অগণিত ভক্তদের হৃদয়ে আলোড়ন তুললেন। দমে দমে সুর ছড়িয়ে দিয়ে আবেগিক এক পরিবেশ সৃষ্টি করলেন আবাহনী মাঠজুড়ে। রূপকথার হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্পকেও হার মানালেন এই বাঁশিওয়ালা। তা উপভোগ করেছেন এ দেশের হাজারো সঙ্গীতানুরাগী। মঞ্চে তিনি সুর তুললেন। সেই সুর প্রতিধ্বনিত হলো এ দেশের সুরপিয়াসীদের হৃদয়ের গহিনে। ভারত সরকারের পদ্মবিভূষণ, সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার ও ন্যাশনাল এমিনেন্স অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত কিংবদন্তি এ বংশীবাদকের সুরের খেলার মধ্য দিয়েই পাঁচ রাতের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব ২০১৭-এর পর্দা নামল।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ওড়িষি নৃত্যের মধ্য দিয়ে শেষ রাতের আসরের সূচনা। এ সময় বিদুষী সুজাতা মহাপাত্র মঞ্চ আলোকিত করেন ওড়িশি নৃত্যের শৈল্পিকতায়। অর্ধনারীশ্বর ও রামায়ন লঙ এ দুই পর্বে বিভক্ত ছিল নাচের পরিবেশনাটি। রাগমল্লিকা ও তালমল্লিকাভিত্তিক প্রথম পর্ব অর্ধনারীশ্বরের কোরিওগ্রাফি ও নৃত্য রচনায় ছিলেন পদ্মবিভূষণ গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র। সঙ্গীতে ছিলেন পদ্মশ্রী রঘুনাথ পানিগ্রাহী ও পণ্ডিত ভূবনেশ্বর মিশ্র। ওড়িশি রামায়ণ থেকে নেয়া দ্বিতীয় পর্ব ‘রামায়ণ-লঙে’র কোরিওগ্রাফিতে ছিলেন পদ্মবিভূষণ গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র। সঙ্গীতে ছিলেন পণ্ডিত ভূবনেশ্বর মিশ্র। নৃত্যনাট্যটিতে সুজাতা মহাপাত্রের সহশিল্পী ছিলেন সৌম্য বোস। বাঁশিতে ছিলেন সৌম্যরঞ্জন যোশি, রূপক কে পারিদা, বেহালায় রমেশ চন্দ্র দাস, পাখোয়াজে একলব্য মুদুলি এবং আলোক সঞ্চালনায় জয়দেব দাস। উদ্বোধনী এই পরিবেশনা শেষে শিল্পীদের হাতে উৎসবের সম্মাননা স্মারক তুলে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
এরপর অনুষ্ঠিত হয় সমাপনী অধিবেশন। এমেরিটাস প্রফেসর ড. আনিুসজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক স্যার ফজলে হাসান আবেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ছায়ানটের সভাপতি ড. সনজীদা খাতুন, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর এবং আবাহনী লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী নাবিল আহমেদের পে তার মা আমিনা আহমেদ।
সমাপনী অধিবেশনে স্বাগত বক্তৃতা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
সমাপনী আয়োজন শেষে আবারো শুরু হয় সুরের খেলা। পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভট্টের মোহন বীণার পরিবেশনার মধ্য দিয়েই শুরু হয় সমাপনী অনুষ্ঠান-পরবর্তী আয়োজন। এ সময় তিনি বিশ তারের হাওয়াইন গিটার-সদৃশ বাদ্যযন্ত্রে তোলেন সুরের আলোড়ন। ঘণ্ট্যা ব্যাপ্তি বাদনে সুরেলা শব্দের মোহময়তায় তন্ময় করে রাখেন শ্রোতাদের। শুরুতেই পরিবেশন করেন রাগ বেহাগী। ধুন পরিবেশনের মাধ্যমে শেষ হয় তার বাদন। খেয়াল পরিবেশন করেন ব্রজেশ্বর মুখার্জি। সেতার বাজান পণ্ডিত কুশল দাস ও কল্যাণজিত দাস। ফের খেয়ালের মুগ্ধতায় ইন্দ্রজাল ছড়ান পণ্ডিত কৈবল্যকুমার।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ উৎসবের নিবেদক স্কয়ার গ্রুপ। শিক্ষাবিদ এমেরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামানকে এবারের উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে।

 

View Full Article