Menu

বৈচিত্র্যময় পরিবেশনা মুগ্ধ সঙ্গীতপ্রেমীরা

একটি সঙ্গীত আসরের সার্থকতা তখনই যখন তাতে পরিবেশনায় বৈচিত্র্য থাকে এবং তা শ্রোতারা উপভোগ করেন। এনে দেয় ভিন্নতার স্বাদ। চলমান উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার অন্যতম একটি কারণ এর বৈচিত্র্যের গুণ। পুরো পাঁচদিনের আসরেই সেটা রয়েছে। শাস্ত্রীয় নৃত্য, কণ্ঠের খেলায় কখনও খেয়াল, কখনও ধ্রুপদী, যন্ত্রসঙ্গীতে সেতার, সরোদ, সন্তুর, ম্যান্ডোলিন, বেহালা, কখনোবা বাঁশি, তবলার আলাদা আলাদাভাবে দীর্ঘসময়ের পরিবেশনা শ্রোতারা উপভোগ করছেন। সন্ধ্যা হলেই তারা সুর-মূর্ছনায় মোহিত হতে ছুটে আসছেন বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে। ভোররাত পর্যন্ত বুঁদ হয়ে থাকছেন সুরের মায়াজালে। আসর ভাঙলে দেখা যায় প্রতিদিন বিশ-পঁচিশ হাজার মানুষ দলে দলে বাড়ি ফিরছেন। রাজধানী ঢাকার বুকে এমন দৃশ্য সত্যিই বিরল। আজ এ উৎসবের সমাপনী দিন। এদিনের অন্যতম আকর্ষণ পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশি। আরও আছে পণ্ডিত শিব কুমার শর্মার সন্তুর পরিবেশনা।
বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের চতুর্থদিন রোববার কর্নাটকী কণ্ঠসঙ্গীতের যুগলবন্দিতে মাত করেছেন রঞ্জনি বালাসুব্রক্ষ্মণ্যন ও গায়ত্রী বালাসুব্রক্ষ্মণ্যন। ছিল পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর খেয়াল পরিবেশনা। যোগেশ শামসি ও পণ্ডিত শুভঙ্করের তবলার যুগলবন্দি ছিল এক কথায় অপূর্ব। খেয়াল পরিবেশন করেন জয়তীর্থ মেউন্ডি। সরোদ পরিবেশন করেন পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। তবলা পরিবেশন করেন নীলেশ রণদেব।
রোববার আয়োজনের শুরুতেই মঞ্চে আসেন মুনমুন আহমেদ ও তার দল ‘রেওয়াজ’। তারা পরিবেশন করেন কত্থক নৃত্য। প্রথমেই রাগ ভিন্ন ষড়জে গুরুবন্দনা দিয়ে শুরু করেন পরিবেশনা। এরপর ছিল ত্রিতালে কত্থক, যার প্রথমাংশে বিলম্বিত লয়ে ঠাট, উঠান, আমাদ ও পরন-আমাদ। পরবর্তী সময় মধ্যলয়ে তেজামদ, টুকরা, তেহাই, পরন, পারমিলু এবং লাড়ি। দ্বিতীয় অংশে রাগ গৌড় মলহারে বিন্দাদিন মহারাজ রচিত ঠুমরি ‘মোরি গগরিয়া কাহেকো ফোড়ি রে শ্যাম’ এর সঙ্গে মুনমুন আহমেদ একক কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন। শেষ অংশে ছিল দ্রুতলয়ে দুটি পরন এবং যুগলবন্দি।
মুনমুন আহমেদ ও তার দলের পরিবেশনা শেষে তবলা নিয়ে মঞ্চে আসেন ভারতের নীলেশ রণদেব। তিনি তবলায় তিন তাল বাজিয়ে শোনান। হারমোনিয়াম সহযোগিতায় ছিলেন মিলিন্দ কুলকার্নি। পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকারের শিষ্য এ শিল্পী বিশ্বের বিভিন্ন সঙ্গীত উৎসবে তবলা পরিবেশন করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
খেয়াল পরিবেশন করেন কিরানা ঘরনার কণ্ঠশিল্পী জয়তীর্থ মেউন্ডি। তিনি প্রথমেই পরিবেশন করেন শুদ্ধ কল্যাণ। এরপর পরিবেশন করেন আদানা। নাট্যগীত পরিবেশনের মধ্যে তিনি তার পরিবেশনার সমাপ্তি টানেন। ভারতীয় রাষ্ট্রপতির হাত থেকে এই শিল্পী ‘ইয়াং মায়েস্ত্রো ইন মিউজিক’ পুরস্কার পেয়েছেন।
পণ্ডিত যোগেশ শামসি ও পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের তবলার যুগলবন্দি ছিল পরের পরিবেশনা। বেশ উপভোগ্য ছিল এ আয়োজন। তবলার বোলে রাতের নিস্তবদ্ধতা ভেঙে সৃষ্টি হয় সুরের দ্যোতনা। তারা ত্রিতাল পরিবেশন করেন। চতুর্থ রাতের অন্যতম আকর্ষণ ছিল কর্নাটকী কণ্ঠসঙ্গীত শিল্পী দুই বোন রঞ্জনি বালাসুব্রক্ষ্মণ্যন ও গায়ত্রী বালাসুব্রক্ষ্মণ্যনের যুগল পরিবেশনা। শিল্পীদ্বয়ের স্বতন্ত্র গায়কী ছুঁয়ে যায় সঙ্গীতপ্রেমীদের মন-প্রাণ।
সরোদ নিয়ে মঞ্চে আসেন পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। স্বনামধন্য এ সরোদিয়ার কৌশলগত দক্ষতা এবং ধ্রুপদ, তন্ত্রকারী ও বিভিন্ন গায়কীর উপাদানে সমুজ্জ্বল ছিল পরিবেশনাটি। চতুর্থ রজনীর শেষ পরিবেশনা ছিল এই উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত আসরের নিয়মিত শিল্পী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর খেয়াল। তার পরিবেশনার মধ্য দিয়েই শেষ হয় উচ্চাঙ্গসঙ্গীত আসরের চতুর্থ রাত। সুরেলা রেশ নিয়েই কিছুক্ষণ পর নেমে আসে ভোরের আলো।
বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের এবারের আসর নিবেদন করছে স্কয়ার এবং সহযোগিতায় আছে ব্র্যাক ব্যাংক। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে।
আজ সমাপনী দিনের আয়োজন : উৎসবে সমাপনী ও পঞ্চমদিন সোমবার দলীয় কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিল্পীরা। দলীয় সেতার বাজিয়ে শোনাবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। আবারও সন্তুরের মোহনীয় সুরে ভাসাবেন পণ্ডিত শিব কুমার শর্মা। কুমার মারদুর শোনাবেন খেয়াল। সেতার পরিবেশন করবেন পণ্ডিত কুশল দাস। খেয়াল পরিবেশন করবেন আরতী অঙ্কালিকার। পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার জাদুকরী বাঁশির সুরে সুরে শেষ হবে এ উৎসব। এদিন সন্ধ্যায় থাকবে সমাপনী আয়োজন। তাতে প্রধান অতিথি থাকবেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। বিশেষ অতিথি থাকবেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। সভাপতিত্ব করবেন প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান।