Menu

ভাঙল সুরের মিলনমেলা

thumbnail প্রথম দিনের ষষ্ঠ পরিবেশনায় অশ্বিনী ভিদে দেশপাণ্ডের খেয়াল মুগ্ধ করছে দর্শকদের

শেষ হলো পঞ্চরজনীর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের আয়োজন। দেশ-বিদেশের অনেক শিল্পীর সুরে শুদ্ধ সঙ্গীতের এই উৎসব মনে থাকবে অনেক দিন। এই উৎসবে অংশ নেয়া কয়েকজন শিল্পীর পরিবেশনা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন। লিখেছেন আলমগীর কবির
অশ্বিনী ভিদে দেশপাণ্ডে
প্রথম দিনের ষষ্ঠ পরিবেশনা ছিল অশ্বিনী ভিদে দেশপাণ্ডে খেয়াল যুগলবন্দী জাসরাঙ্গি। তার সাথে ছিলেন পণ্ডিত সঞ্জীব অভয়ঙ্করের সাথে। তিনি একজন ভারতীয় শাস্ত্রীয়সঙ্গীতবিশারদ। খেয়াল, ভজন, ঠুমরিতেও তিনি সমান পারদর্শী। তার জন্ম ভারতের মুম্বাইয়ের ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত পরিবারে ১৯৬০ সালের ৭ অক্টোবর। জয়পুর আত্রৌলি ঘরানার হলেও ভারতীয় শাস্ত্রীয়সঙ্গীত শিল্পী অশ্বিনী ভিদে দেশপাণ্ডে মেওয়াতি এবং পাতিয়ালা ঘরানার প্রতিও প্রভাবিত হন। তার সঙ্গীত শিা শুরু হয় পণ্ডিত নারায়ণরাও দাতারের তত্ত্বাবধানে। পরবর্তীকালে তিনি তার মা ও গুরু মানিক ভিদে এবং পণ্ডিত রতœাকর পাইয়ের কাছে অনুশীলন অব্যাহত রাখেন। তিনি ‘কবির ভজনও’ জানেন। তার নিজের অনেক বন্দেশি রয়েছে। তিনি সঙ্গীতের ওপরও এমএ লাভ করেন। শাস্ত্রীয়সঙ্গীত চর্চার পাশাপাশি তিনি লেখাপড়াও চালিয়ে যান। তিনি মাইক্রোবায়োলজিতে এমএ লাভ করেন। ভাভা অটোমিক রিসার্চ সেন্টার থেকে বায়োকেমিস্ট্রিতে ডক্টরেট লাভ করেন। তার প্রথম অ্যালবাম রেকর্ড হয় ১৯৮৫ সালে। ২০০৪ সালে শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের ওপর তার বই ‘রাগ রচনাঞ্জলী’ বের হয়। দ্বিতীয় বই ‘রাগ রচনাঞ্জলী-২’ বের হয়। ২০১০ সালে ৯৮টিরও বেশি বন্দেশি প্রকাশ হয়। সঙ্গীত শিক হিসেবেও তিনি পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। তার শিার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সানিয়া কুলকার্নি-পাটানকার, রেবতী কামাত, শ্রুতি আম্বেকার, সলিল ওক কল্যাণপুর, শিবানি হলদিপুর প্রমুখ।
ধ্রুপদী কণ্ঠসঙ্গীতে অবদানের জন্য বিভিন্ন পদকে ভূষিত হন। এসব পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে মহারাষ্ট্র সরকারের সাংস্কৃতিক পুরস্কার, সহযাত্রী দূরদর্শন সঙ্গীতরতœ পুরস্কার, পণ্ডিত যশরাজ গৌরব পুরস্কার এবং রাষ্ট্রীয় কুমার গান্ধর্ব সম্মান পুরস্কার।
ড. প্রভা আত্রে
তৃতীয় দিনের তৃতীয় পরিবেশনা ছিল ড. প্রভা আত্রের খেয়াল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম শাস্ত্রীয়সঙ্গীত পরিবেশন করলাম। ভিন্ন সংস্কৃতির শ্রোতার মাঝে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা আমার জন্য ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ; কিন্তু শ্রোতারা ধৈর্য ধরে উৎফুল্ল মনে আমার গান শুনেছেন। সত্যিই এ এক বিস্ময়কর অনুভূতি। আমার চিন্তা-ভাবনা, কর্মকাণ্ড সবই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজুড়ে। আমার পরিবার হৃদয়ে সঙ্গীত ধারণ করে। দিন-রাতের চব্বিশ ঘণ্টাই আমি সঙ্গীত অনুশীলন করি। এটা খুব সহজ নয়। এরপরও আমি সঙ্গীতচর্চা করি। কারণ এতে আনন্দ পাই। আমি বিজ্ঞান ও আইনের ছাত্রী। এক দিকে আমার পড়াশোনা অন্য দিকে শাস্ত্রীয়সঙ্গীত সাধনা। এর মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না; কিন্তু এটা সত্যি শ্রোতাদের মধ্যে যখন গান পরিবেশন করি তাদের মুগ্ধতা আমাকে ছুঁয়ে যায়। আমি তরুণ-যুবাদের শাস্ত্রীয়সঙ্গীত শোনার আমন্ত্রণ জানাইÑ বললেন ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের স্বনামধন্য শিল্পী ড. প্রভা আত্রে।
বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবে শাস্ত্রীয়সঙ্গীত পরিবেশন শেষে ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের স্বনামধন্য শিল্পী ড. প্রভা আত্রের সাথে কথোপকথনে উঠে আসে তার সঙ্গীত জীবনের নানা কথা। তিনি ঠুমরি, দাদরা, গজল ও নাট্যসঙ্গীতে সমান পারঙ্গম। জন্ম ১৯৩২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারতের পুনেতে। কিরানা ঘরানার সঙ্গীতশিল্পী ড. প্রভা আত্রের বাবা আবা সাহেব ও মা ইন্দিরা বাঈ আত্রে। শৈশবেই তারা দুই বোন প্রভা ও ঊষা সঙ্গীতের প্রতি অনুরক্ত হন। তার বয়স যখন আট বছর মায়ের শরীর ভালো যাচ্ছিল না। মায়ের বন্ধুরা তার মাকে শাস্ত্রীয়সঙ্গীত শোনার পরামর্শ দেন। কারণ এতে তিনি সুস্থ অনুভব করবেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রভার মা শাস্ত্রীয়সঙ্গীত শোনেন। প্রভাও শাস্ত্রীয়সঙ্গীত শুনতে শুনতে সঙ্গীতের প্রতি অনুপ্রাণিত হন।
তিনি সুরেশবাবু মানে ও তার বোন পদ্মভূষণ হীরাবাঈ বারোদেকারের কাছে প্রাথমিক তালিম নেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি খুবই ভাগ্যবতী সুরেশবাবু মানে কিরানা ঘরানার। তার কাছে তালিম নেয়ার সুযোগ আমি পেয়েছি। কারণ একজন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পীর জন্য শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের অনুশীলন ও প্রশিণ দরকার।
শ্রোতাদের মাঝে প্রথম শাস্ত্রীয়সঙ্গীত পরিবেশন সম্পর্কে ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের স্বনামধন্য শিল্পী ড. প্রভা আত্রে জানান, শ্রোতারা আমার গান মুগ্ধ হয়ে শোনেন। এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করে, মন থেকে সব ভয় দূর হয়ে যায়।
বিজয় কর্ণাধিকারের কাছেও তিনি শাস্ত্রীয়সঙ্গীতে তালিম নেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিার পাশাপাশি তিনি সঙ্গীতের ওপরও পড়াশোনা করেন। তিনি পুনে ইউনিভার্সিটির ফারগিউসন কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে বিএসসি এবং পুনে ইউনিভার্সিটির ল কলেজ থেকে আইন বিষয়ে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। গন্ধর্ভা মহাবিদ্যালয় মণ্ডল থেকে সঙ্গীত অলঙ্কার ডিগ্রি লাভ করেন। লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজ থেকে মিউজিক থিওরি গ্রেড-ফোর সম্পন্ন করেন। প্রভা আত্রে সঙ্গীতে পিএইচডি করেন। তার থিসিসের শিরোনাম ছিল ‘সরগাম’।
ড. প্রভা আত্রে প্রথমে রাগ শ্যাম কল্যাণে ধিন ধিন তা, তেরে নারে রেনা, এরপর রাগ মধুরোকোষে খেয়াল পরিবেশন করেন। মধুরোকোষ তার নিজস্ব সৃষ্টি। এরপর কানাড়া রাগে পরিবেশন করেন দাদরা নায়কি, বাসন্তী চুনারিয়া লাও মোরে সাইয়া ইত্যাদি।
বিদূষী গিরিজা দেবী
উৎসবের প্রথম দিনের চতুর্থ পরিবেশনা ছিল বিদূষী গিরিজা দেবী। দে রে না, না রে যোগকোশে খেয়াল দিয়ে শুরু করেন আটাশি বছরের এই শিল্পী। এরপর রাগ মিশ্র খাম্বাজে ঠুমরি, রাগ কাফিতে টপ্পা ও রাগ মিশ্রগৌরিতে দাদরা পরিবেশন করেন। জনপ্রিয় দাদরা তালে ‘কেয়া জাদু ঢালা’ দিয়ে শেষ করেন তার পরিবেশনা।
এবার নিয়ে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবে তৃতীয়বারের মতো সঙ্গীত পরিবেশন করলেন। বাংলাদেশে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করতে কেমন লাগে জানতে চাইলে বিদুষী গিরিজা দেবী বলেন, এই উৎসবে শাস্ত্রীয়সঙ্গীত শোনার জন্য হাজার হাজার শ্রোতা সমবেত হন। উনারা আমার সঙ্গীত মুগ্ধ হয়ে শোনেন। এমন বিমুগ্ধ শ্রোতাদের সামনে সঙ্গীত পরিবেশন করতে অনেক আনন্দ লাগে। এখানকার শ্রোতারা অনেক সমঝদার।
ঠুমরির সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত বিদূষী গিরিজা দেবী ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের চর্চা করছেন। সেনিয়া ও বেনারস ঘরানার প্রবাদপ্রতিম ভারতীয় শাস্ত্রীয়সঙ্গীত শিল্পী গিরিজা দেবীর জন্ম ১৯২৯ সালের ৮ মে ভারতের বেনারসে। বেনারসেই তার বেড়ে ওঠা। পরিবারে সঙ্গীতের আবহ না থাকলেও চার বছর বয়সেই তার বাবা তাকে পণ্ডিত সূর্যপ্রসাদ মিশ্রের কাছে তালিম দিতে নিয়ে যান। তিনি পণ্ডিত সূর্যপ্রসাদ মিশ্রের কাছে প্রথমে খেয়াল ও পরে টপ্পার তালিম নেন। খেয়াল আর টপ্পার পাশাপাশি কাজরি, চৈতি ও হোলিও গেয়েছেন তিনি। নয় বছর বয়সে তিনি ‘মুভি ইয়াদ রহে’ এবং সঙ্গীতশিল্পী ও সারেঙ্গিবাদক সরজুপ্রসাদ মিশ্রের কাছেও তালিম নেন। পরবর্তীকালে চাঁদ মিশ্রের কাছে বিভিন্ন সঙ্গীত রীতি রপ্ত করেন।
বিদূষী গিরিজা দেবীর মতে, বাবার অনুপ্রেরণা আর গুরু সূর্যপ্রসাদের অধীনে সঙ্গীতের কঠোর সাধনায় ব্রতী হই। ১৯৪৬ সালে ব্যবসায়ী মধুসূদন জৈনের সাথে তার বিয়ে হয়। স্বামীর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় তিনি পুরোপুরি নিজেকে সঙ্গীত সাধনায় নিবেদন করেন। এ প্রসঙ্গে বিদূষী গিরিজা দেবী বলেন, সঙ্গীত সাধনায় স্বামীর কাছ থেকেও পুরোপুরি সহযোগিতা পেয়েছি। ১৯৪৯ সালে তিনি অল ইন্ডিয়া এলাহাবাদ জনসমে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তিনি অলানকার সঙ্গীত স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শিক। শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন ১৯৭২ সালে পদ্মশ্রী, ১৯৭৭ সালে সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার, ১৯৮৯ সালে পদ্মভূষণ, ২০১২ সালে মহাসঙ্গীত সম্মান অ্যাওয়ার্ড, গিমা অ্যাওয়ার্ড, তানারিরি পুরস্কার, ২০১৬ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কার এবং সঙ্গীত নাটক আকাদেমি ফেলোশিপ পান। পৃথিবীর সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদুষী গিরিজা দেবী পেয়েছেন সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি। তার জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র গিরিজা। লস অ্যাঞ্জেলেস ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছবিটি সেরা প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার পেয়েছে।
মাধবী মুডগাল
দ্বিতীয় দিনের প্রথম পরিবেশনা ছিল মাধবী মুডগালের। তার উপস্থাপনা শুরু হয়, ‘নটরাজ’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে ওডিশি নৃত্যধারায়। নৃত্যের তালে তালে তিনি আরাধনা করেন। তার দ্বিতীয় পরিবেশনা অষ্টপদী। কবি জয়দেবের গীতিকবিতা থেকে নেয়া। তিনি ওডিশি, ভরতনাট্যম, কত্থক নৃত্যে পারদর্শী। তার বাবা অধ্যাপক বিনয়চন্দ্র মুডগাল দিল্লিতে ১৯৯৫ সালে নৃত্য ও সঙ্গীত শিার জন্য গান্ধর্ব মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী মাধবী মুডগালের জন্ম ১৯৫১ সালের ৪ অক্টোবর উড়িষ্যায়। মাধবী প্রথমে গুরু হরিকৃষ্ণ বেহেরা ও পরে গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের কাছে তালিম নেন। নৃত্যপরিচালনা ও কোরিওগ্রাফিতে গভীর বোধসঞ্চার এবং নবীনদের শিাদানে অফুরান আগ্রহ মাধবী মুডগালকে বিশিষ্ট করে তুলেছে।
মাধবী মুডগাল বলেন, আমি শিশু বয়সে নাচের সাথে সম্পৃক্ত হই। সে সময়ে আমি ভরতনাট্যম, কত্থক শাস্ত্রীয় স্টাইলে নৃত্য পরিবেশন করতাম। কৈশোরে কত্থকের পাশাপাশি ভরতনাট্যম এবং ওডিশি শিা গ্রহণ করি।
মাধবী মুডগাল ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নৃত্য পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেন। তিনি ইউরোপের ইডেনবার্গ আন্তর্জাতিক ফেস্টিভাল, ভারতের প্রদেশ, মেক্সিকোর সারভেনটিনো ফেস্টিভাল, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা ডান্স ফেস্টিভাল, দণি আফ্রিকার ইন্ডিয়ান ডান্স ফেস্টিভাল, ব্রাজিলের ফেস্টিভাল অব ইন্ডিয়ান কালচারে অংশ নেন। এ ছাড়া হাঙ্গেরি, জাপান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামেও নৃত্য পরিবেশন করেন।
তিনি আর্কিটেকচারে ডিপ্লোমা করেন। সুলেখক হিসেবেও তার সমান পরিচিতি। অনেক স্বনামধন্য ম্যাগাজিন ও বইয়ে তার লেখা প্রকাশ হয়েছে।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে লাভ করেছেন ১৯৮৪ সালে সংস্কৃতি পদক, ১৯৯০ সালে ভারত সরকারের পদ্মশ্রী খেতাব, ১৯৯৬ সালে উড়িষ্যা প্রদেশ সঙ্গীত নাটক আকাদেমি অ্যাওয়ার্ড, ১৯৯৭ সালে ফ্রান্সের প্যারিসের ‘গ্রন্দ মেদাই দ্য লা ভি লে’ সম্মাননা, ২০০০ সালে কেন্দ্রীয় সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পদক, ২০০২ সালে দিল্লি সরকারের পরিষদ সম্মান, ২০০৪ সালে নৃত্যচূড়ামণি এবং ফরাসি সরকারের প থেকে ‘শেভালিয়ে দ্য লর্দ দেজার্ত এ দ্য লেত্র’ সম্মাননা অর্জন করেন।
আরুশি মুডগাল
দ্বিতীয় দিনের প্রথম পরিবেশনা ছিল আরুশি মুডগালের। রাগ সাহানায় আহাদ পরিবেশন করেন এই ওডিশি নৃত্যশিল্পী। এরপর রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘হেমন্তে কোন বসন্তেরই বাণী’ গানে নৃত্য পরিবেশন করেন। পিসী মাধবী মুডগালের সাথে যুগলবন্দী ভৈরবী পল্লবী পরিবেশন করেন। আরুশি মুডগাল ওডিশি নৃত্যধারার একজন প্রতিভাবান শিল্পী। কৌশলগত উৎকর্ষ ও মূলধারার নৃত্যে নতুন মাত্রা সংযোজনের জন্য সুনাম অর্জন করেছেন তিনি। পাঁচ বছর বয়সে আরুশির পিসী ও গুরু মাধবী মুডগালের কাছে ওডিশি নৃত্যে হাতেখড়ি হয়। এ ছাড়া তিনি বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী মাধবী মুডগালের ভ্রাতুষ্পুত্রী ও শিষ্যা। মাধবী মুডগাল ছাড়াও গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র ও বিদূষী লীলা স্যামসানের কাছে তিনি তালিম নেন। ২০০৭ সালে তিনি ওডিশি নৃত্যে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন।
দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আরুশি অংশ নেন এবং প্রশিণ কর্মশালা পরিচালনা করেন। ২০০৮ সালে বিখ্যাত নৃত্যে শিল্পী চোরেগ্রাফার পিনা বাউসচ তাকে জার্মানির ডুসেলডরফ তানজ ফেস্টিভালে আমন্ত্রণ জানান। এ ছাড়া তিনি প্যারিসের মিউসি গিউমেট ফেস্টিভাল, মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক ফেস্টিভাল, মুম্বাইয়ের উমাং ফেস্টিভাল, চেন্নাইয়ের মিউজিক একাডেমি ডান্স ফেস্টিভালে অংশ নেন। আমেরিকার নিউ ইয়র্কের জন উইল ডান্স সেন্টারে নৃত্য পরিবেশন করেন। তিনি আইসিসিআরের একজন নিবন্ধিত শিল্পী।
আরুশি মুডগাল কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন দিল্লির সঙ্গীত নাটক আকাদেমি জাতীয় পুরস্কার, ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান যুব পুরস্কার, ভারতীয় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ প্রদত্ত যুব মহিলা কৃতী পুরস্কার, ভারতীয় রাষ্ট্রপতির বালশ্রী পুরস্কার, চিত্রাকলাসঙ্গম সম্মান, সনাতন নৃত্য পুরস্কার, দ্য অরিজিনাল মাইন্ড অ্যাওয়ার্ড এবং যুক্তরাজ্যের মিলাপফেস্টের ট্যুরিং ফেলোশিপ লাভ করেছেন।

View Full Article