Menu

মঞ্চ মাতালেন দেশের শিল্পীরা আজ খেয়াল পরিবেশন করবেন ওস্তাদ রশীদ খান

thumbnail

 

ক্রিকেটের মতো বাংলাদেশের অনেক কিছুই শুক্রবার আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠছে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতও আন্তর্জাতিক মানকে ছুঁয়ে ফেলেছে। তার প্রমাণ মিললো গতকাল দেশের শিল্পীদের পরিবেশনায়। বাংলাদেশের শিল্পীদের পরিবেশনা ছিল চোখে পড়ার মতো। গতকাল উত্সবে বেঙ্গল পরম্পরার শিল্পীদের পরিবেশনা মন মাতালো শ্রোতা-দর্শকদের। কিশোর বয়সীদের তবলাবাদন যেমন ছিল তেমনি অনবদ্য ছিল প্রিয়াঙ্কা গোপের খেয়াল পরিবেশন। বেঙ্গল আয়োজিত উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উত্সব পাঁচ বছর পেরোচ্ছে।

সন্ধেটা ছিল বাংলাদেশের শিল্পীদের। যদিও দ্বিতীয় দিনের সূচনা হয় নাচের ছন্দে। নূপুরের নিক্বণে উঠে এসেছে রাধা কৃষ্ণের কথা। রাধা-কৃষ্ণের আখ্যানের আশ্রয়ে উঠে এসেছে সৃষ্টি ও স্রষ্টার কথা। ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করেন বিদুষী মাধবী মুডগাল ও আরুশি মুডগাল। শিল্পীদের পরিবেশনা ছিল অনবদ্য। সেটা সবার কাছে প্রত্যাশিতও ছিল। ওডিশি নৃত্যধারার খ্যাতিমান প্রবক্তা শিল্পী মাধবী মুডগাল। ভারত সরকারের পদ্মশ্রী খেতাব ও ফরাসি সরকারের পক্ষ থেকে ‘শেভালিয়ে দ্য লর্দ দেজার্ত এ দ্য লেত্র’ সম্মাননা অর্জন করা এই শিল্পী এদিন নৃত্য পরিবেশন করেন তার ভাইয়ের মেয়ে ও শিষ্যা আরুশি মুডগালের সঙ্গে। প্রথমেই মাধবী মুডগাল পরিবেশেন করেন নৃত্য নটরাজ।

এরপর পরপর বাংলাদেশের শিল্পীদের পরিবেশনা। বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ দলীয়ভাবে তবলা পরিবেশন করেন। চিন্ময় ভৌমিক, ফাহমিদা নাজনীন সুমাইয়া, এম জে জে ভুবন, নুসরাত-ই-জাহান খুসবু, পঞ্চম স্যানাল, প্রশান্ত ভৌমিক, সুপান্থ মজুমদারের তবলা পরিবেশনা মন ভরিয়েছে সবার।

খেয়াল শোনান বাংলাদেশের শিল্পী প্রিয়াঙ্কা গোপ। তবলায় তাকে সঙ্গত করেন ইফতেখার আলম প্রধান। প্রিয়াঙ্কা গোপ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তার পুরো পরিবেশনাতেই।

দ্বিতীয় রাতের অন্যতম আকর্ষণ ছিল পণ্ডিত রনু মজুমদারের বাঁশি ও ইউ রাজেশের ম্যান্ডোলিনের যুগলবন্দি পরিবেশনা। গতকালের সর্বশেষ পরিবেশনা ছিল তাদের। রনু মজুমদার ভারতের একজন প্রতিষ্ঠিত বংশীবাদক। তার প্রকৃত নাম রনেন্দ্রনাথ মজুমদার তবে রনু মজুমদার নামেই তিনি বেশি পরিচিত। মাইহার ঘরানার এই বাদ্যশিল্পী আর্ট অব লিভিং অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে ৫,৩৭৮ জন বংশীবাদককে উপস্থাপন করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিষয়টি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে। আর ইউ রাজেশ ভারতের একজন বিশিষ্ট ম্যান্ডোলিন শিল্পী। ম্যান্ডোলিনের স্বনামধন্য শিল্পী ইউ শ্রীনিবাসের ভ্রাতা ইউ রাজেশ তার বাবা ও ভাইয়ের কাছে তালিম নেন। জন ম্যাকলফিলনের অ্যালবাম ‘ফ্লোটিং পয়েন্টে’ ম্যান্ডোলিন বাদনের জন্য গ্র্যামি পদকের জন্য তিনি মনোনয়ন লাভ করেছিলেন। এভাবে ম্যান্ডোলিন আর বাঁশির মধুর পরিবেশনার মধ্য দিয়েই শেষ হয় বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উত্সবের দ্বিতীয় রজনীর পরিবেশনা। একটু পরেই রাজধানীর বুকে নেমে আসে ভোর।

দ্বিতীয় দিনের আরেক আকর্ষণ রাহুল শর্মার সন্তুর পরিবেশনা। গতবারের ধারাবাহিকতায় সন্তুরের শ্রুতিমধুর সুর এবার যেন আরো এক ধাপ ছাপিয়ে যায় শিল্পীর অনবদ্য পরিবেশনায়। কণ্ঠসঙ্গীত ও সন্তুর বাদনে রাহুল শর্মার হাতেখড়ি তার পিতা প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতবেত্তা পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার কাছে। রাহুল শর্মাকে তবলায় সঙ্গত করেন আরেক জনপ্রিয় তবলিয়া সত্যজিত্ তালওয়ালকার।

দলীয় কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করেন মোহাম্মদ শোয়েব ও অন্যরা। তার সঙ্গে তবলায় ছিলেন ইফতেখার আলম প্রধান, পাখওয়াজে সুষেন কুমার রায়। সেতার পরিবেশন করেন পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়। ভারতের প্রখ্যাত এই সেতারবাদক সেনিয়া মাইহার ঘরানায় আবহে কিংবদন্তি শিল্পী ওস্তাদ আলী আকবর খাঁর কাছে শিক্ষাগ্রহণ করেন।

এই উত্সবের অনেকটাই নিয়মিত শিল্পী পণ্ডিত উলহাস কশলকর। তিনি খেয়াল পরিবেশন করেন। তাকে তবলায় সঙ্গত করেন সুরেশ তালওয়ালকার। বর্তমানে গোয়ালিয়র, জয়পুর এবং আগ্রা ঘরানার একজন ধারক ও বাহক হিসেবে তাকে গণ্য করা হয়। উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে অবদানের জন্য উল্লাস কশলকার পদ্মশ্রী, যদু ভট্ট পুরস্কার, স্বররত্ন পুরস্কার ও সঙ্গীত নাটক আকাদেমি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন।

আজ তৃতীয় দিন শনিবারের পরিবেশনা

উত্সবে তৃতীয় দিন অর্থাত্ শনিবারের পরিবেশনা শুরু হবে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীদের দলীয় সরোদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। বাঁশি বাজিয়ে শোনাবেন শশাঙ্ক সুব্রহ্ম্যণন। তার সঙ্গে মৃদঙ্গে থাকবেন পারুপল্লী ফাল্পুন, তবলায় সত্যজিত্ তালওয়ালকার। খেয়াল পরিবেশন করবেন ড. প্রভা আত্রে। তার সঙ্গে তবলায় থাকবেন রোহিত মজুমদার। তবলা বোলে মাত করবেন পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকার পরিবেশন করবেন ধ্রুপদ। সেতার বাজিয়ে শোনাবেন পণ্ডিত সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তবলায় থাকবেন পরিমল চক্রবর্তী। ওস্তাদ রশিদ খানের খেয়াল পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তৃতীয় দিনের পরিবেশনা। তার সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করবেন পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।

View Full Article