মুগ্ধতা ছড়াল নৃত্যের ঝঙ্কার
মনের খোরাক মেটাতে যন্ত্রসংগীতের মহোৎসবে ভাসছে রাজধানী ঢাকার আর্মি স্টেডিয়াম। শুদ্ধসুরের মূর্ছনায় আত্মনিমগ্ন শহরের শ্রোতারা। ধ্রুপদীসংগীতের মোহময়তায় এ যেন আনন্দের উৎসব। শাস্ত্রীয় আঙ্গিকের নাচের মুদ্রা আর সুরের আবাহনে চলছে নির্মল আড্ডা। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের গতকাল চতুর্থ রাতের আসরের দৃশ্যপট ছিল এমন। গত তিন দিনের মতো গতকালও আয়োজনটি শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টায়। চলে ভোর ৫টা পর্যন্ত। এদিনের পরিবেশনার সূচনা হয় মুনমুন আহমেদ ও তার দল ‘রেওয়াজ’-এর দলীয় কত্থক নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। রাগ ‘ভন্ন ষড়জে’ গুরুবন্দনার মধ্য দিয়ে ধ্রুপদী নাচ শুরু করেন তারা। এর পর ত্রিতালে কত্থক পরিবেশন করেন, যার প্রথমাংশে ছিল বিলম্বিত লয়ে ঠাট, উঠান, আমাদ ও পরন-আমাদ। পরে মধ লয়ে তেজামদ, টুকরা, তেহাই, পরন, পারমিলু ও লাহিড়ি পরিবেশন করেন তারা এ পর্বে। দ্বিতীয় অংশে রাগ গৌ মলহারে ঠুমরির সঙ্গেও তারা নৃত্য পরিবেশন করেন। শেষ অংশে দ্রুত লয়ে দুটি পরন এবং যুগলবন্দি পরিবেশন করেন তারা। এ সময় বাঁশিতে ছিলেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, সরোদে সুনন্দ মুখার্জি, এস্রাজে অসিত বিশ্বাস, তবলায় সুবীর ঠাকুর এবং আবৃত্তিতে অপরাজিতা মুস্তফা ও অহিদুজ্জামান। পরিবেশনা শেষে শিল্পীদের হাতে উৎসবের স্মারক তুলে দেন প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী।
নৃত্যনন্দনের পর তবলায় পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন নীলেশ রণদেব। প-িত সুরেশ তালওয়ালকারের সযতœ তালিমে নীলেশ রণদেবের তবলাবাদনে বেজে ওঠে তিন তালের যন্ত্রীয় ঝড়। এ সময় হারমোনিয়াম সহযোগিতায় ছিলেন মিলিন্দ কুলকার্নি। পরিবেশনা শেষে শিল্পীর হাতে উৎসবের স্মারক তুলে দেন বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম।
এর পর খেয়াল পরিবেশন করতে মঞ্চে আসেন কিরানা ঘরানার কৃতী কণ্ঠশিল্পী জয়তীর্থ মেউন্ডি। তবলায় তাকে সঙ্গত করেন আজিঙ্কা যোশি। খেয়ালের রেশ কাটতে না কাটতেই তবলায় যুগলবন্দি হয়ে মঞ্চে আসেন প-িত যোগেশ শামসি ও প-িত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।
চতুর্থ রাতের অন্যতম আকর্ষণ ছিল কর্নাটকি কণ্ঠসংগীতশিল্পী দুই বোন রঞ্জনি বালসুব্রক্ষ্মণ্যন ও গায়ত্রী বালসুব্রক্ষ্মণ্যনের যুগল পরিবেশনা। শিল্পীদ্বয়ের স্বতন্ত্র গায়কী ছুঁয়ে যায় সংগীতপ্রেমীদের মন ভুবন। হৃদয়ে স্থাপন করে অনন্য এক অনুভূতি। মধ্যরাতের শেষ ভাগে সরোদ পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন প-িত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। স্বনামধন্য সরোদিয়া তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের কৌশলগত দক্ষতা এবং ধ্রুপদ, তন্ত্রকারী ও বিভিন্ন গায়কীর উপাদানে সমুজ্জ্বল ছিল তার পরিবেশনায়। যন্ত্র ও যন্ত্রী যেন মিশে একতাল। এ তালের আবাহনের আবরনে আবদ্ধ হয়ে পড়েন দর্শকশ্রোতা। এর রেশ কাটতে না কাটতেই চতুর্থ রজনীর শেষ খেয়াল পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন এ উচ্চাঙ্গসংগীত আসরের অনেকটাই নিয়মিত শিল্পী প-িত অজয় চক্রবর্তী।
বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের এবারের আসর নিবেদন করছে স্কয়ার। এবং সহযোগিতায় আছে ব্র্যাক ব্যাংক। পুরো আয়োজনটি সরাসরি সম্প্রচার করছে মাছরাঙা টেলিভিশন। গত চার বছর ধরে আয়োজিত ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব’ শিল্পী ও দর্শকের অংশগ্রহণের নিরিখে এরই মধ্যে এই উপমহাদেশ তথা বিশ্বে সর্বাধিক বড়পরিসরে উচ্চাঙ্গসংগীতের আসর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে। আজ এ উৎসবের পঞ্চম ও শেষ দিন।