Menu

যন্ত্রসংগীতের মূর্ছনায় স্নাত রজনী

মামুন মিজানুর রহমান: প্রথম দু’দিনের তুলনায় গতকাল স্টেডিয়ামে শ্রোতা সমাগম কিছুটা কমই ছিল। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতের মতো নয় শনিবারের রাত। রাত পোহালেই সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস। রোববারের প্রভাবই পড়েছে কিছুটা স্টেডিয়ামে গতকালের আয়োজনে। শ্রোতাসংখ্যা কমেছে অনেক।

স্টেডিয়ামে গ্যালারি প্রায় শূন্য। আসন পূর্ণ হয়েছে বটে। খাবারের স্টলের দিকে প্রতিদিনের মতো গতকালও ভিড় ছিল বেশ। মাঠের এক প্রান্তে দেশীয় বাদ্যযন্ত্র নিয়ে যে প্রদর্শনী, সেখানেও ছিল উত্সুক দর্শনার্থীদের ভিড়। শ্রোতার ভিড় কম থাকায় স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা কম ছিল ভোগান্তি। অন্যান্য দিনের মতো লম্বা সারিতে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে হয়নি শ্রোতাদের। তাছাড়া শৌচাগার ব্যবহারের জন্যও ছিল না দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর ভোগান্তি। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উত্সবের
তৃতীয় রজনী ছিল গতকাল। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ও স্কয়ার নিবেদিত এই উত্সবের সহযোগিতায় রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। পঞ্চমবারের মতো আয়োজিত এই উত্সবটি উত্সর্গ করা হয়েছে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে।
সরোদের সুরে শুরু হয় গতকালের পরিবেশনা। সরোদের সুরের তালে তালে তবলায় উঠেছিল তুমুল বোল। এই সরোদ বাদন নিয়ে মঞ্চে আসে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের সাত নবীন শিক্ষার্থী। পরিবেশনায় অংশ নেয়-কামাল জহির শামীম, খন্দকার শামছুজোহা, ইলিয়াস খান, ইলহাম ফুলযুরী খান, ইশরা ফুলযুরী খান, শরীফ মুহাম্মদ আরিফিন রনি ও আল-জোনায়েদ দিদার। সম্মেলক এ পরিবেশনায় উপস্থাপিত হয় রাগ কাফি। শিক্ষার্থীদের এই পরিবেশনা দেখে মোটেও মনে হয়নি তারা শিখছে এখনও। বড়দের মতোই বাজিয়েছে তারা ওস্তাদি ঢংয়ে। তাদের বাদন শেষে মঞ্চে আসেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষক পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। তিনি শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা সম্পর্কে বলেন, ‘এই বাদক দলের জন্য আপনারা দোয়া করবেন। সাত মাস ধরে আমি তাদের শেখাচ্ছি। আশা করি, তাদের মধ্য থেকে দুয়েকজন বড় বাদক তৈরি করতে পারব।’
সরোদ বাদন শেষে কর্ণাটকি বাঁশি নিয়ে মঞ্চে আসেন শশাঙ্ক সুব্রহ্মণ্যন। বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় সংগীত উত্সবে অংশ নিয়েছেন এই শিল্পী। ২০০৯ সালে গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হন তিনি। তার সঙ্গে মৃদঙ্গমে সঙ্গত করেন পারুপল্লী ফাল্গুন ও তবলায় ছিলেন সত্যজিত্ তালওয়ালকার।
বংশীবাদন থামতেই শ্রোতাদের মোহাবিষ্ট করে খেয়ালের সুর। মঞ্চে আসেন ধ্রুপদী সংগীতের প্রখ্যাত শিল্পী ড. প্রভা আত্রে। কিরানা ঘরানার অগ্রজ এই শিল্পী খেয়াল, ঠুমরি, দাদরা, গজল ও নাট্যসংগীতে সমান পারঙ্গম। তার ঝুলিতে রয়েছে নানা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তার পরিবেশনায় তবলায় সঙ্গত করেন রোহিত মজুমদার।
অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে মঞ্চে আসেন ফরুখাবাদ ঘরানার অন্যতম তবলাবাদক পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। তার সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন অনুব্রত চট্টোপাধ্যায়। ধ্রুপদ পরিবেশন করেন পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকার। কুমার গান্ধর্ব সম্মাননাপ্রাপ্ত শিল্পী তিনি। এই পরিবেশনায় পাখোয়াজে সঙ্গত করেন প্রতাপ আওয়াদ।
পণ্ডিত সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় মিষ্টি সুরের লহরি ছড়িয়ে দেন সেতারে। তার সঙ্গে তবলায় ঝড় তোলেন পরিমল চক্রবর্তী। সঞ্জয় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক। পরিমলও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের অতিথি শিক্ষক।
রাত প্রায় শেষের দিকে। মঞ্চে আসেন গত রাতের অন্যতম আকর্ষণ ওস্তাদ রশিদ খান। তিনি ভারতের অন্যতম খেয়াল শিল্পী। শুধু তার গান শোনার আগ্রহে অনেকেই এসেছিলেন উত্সবে। এই শিল্পীর সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরিবেশনার মধ্য দিয়ে তৃতীয় রাতের আয়োজন শেষ হয়।
আজও সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে উত্সব। উত্সবের চতুর্থ দিনের আয়োজনের শুরুতেই কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবেন মুনমুন আহমেদ ও তার দল রেওয়াজ। তবলায় বোল তুলবেন নীলেশ রণদেব। খেয়াল পরিবেশন করবেন কিরানা ঘরানার শিল্পী জয়তীর্থ মেউন্ডি। তবলায় যুগলবন্দি পরিবেশন করবেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি ও পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। যুগলবন্দি কর্ণাটকি সংগীত পরিবেশন করবেন শিল্পী বেহালাবাদক রঞ্জনী ও গায়ত্রী। পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার পরিবেশন করবেন সরোদ। আজকের অনুষ্ঠান শেষ হবে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর খেয়াল পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।