Menu

রাগ-রাগিণীতে বিদায়ের ছায়া

thumbnail

 

সমকাল প্রতিবেদক

এ যেন গতবারের সমাপ্তিরেখারই প্রতিবিম্ব। পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার মোহনবাঁশির হৃদয়গ্রাহী সুরে শেষ হয়েছিল গেলবারের উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব। এবারও তাই হবে। তার বাঁশির মূর্ছনাতেই আজ সোমবার পর্দা নামবে শুদ্ধসঙ্গীতের এ আয়োজনের। গতকাল রোববার উৎসবের চতুর্থ দিনে শুদ্ধস্বরের আবাহনে মিশে ছিল ওই যবনিকাপাতের বিষণ্নতা। কত্থক নৃত্যের ঝঙ্কারে মুগ্ধ হয়েও দর্শক-শ্রোতারা যেন ভুলতে পারছিলেন না, আর মাত্র একদিন চলবে এ উৎসব। এবারের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে। স্কয়ার নিবেদিত এ উৎসবে সহযোগিতা করছে ব্র্যাক ব্যাংক।

গতকালের আয়োজনের শুরুতেই মঞ্চে আসেন মুনমুন আহমেদ ও তার দল ‘রেওয়াজ’। তারা পরিবেশন করেন কত্থক নৃত্য। রাগ ভিন্ন ষড়জে গুরুবন্দনা দিয়ে শুরু তাদের পরিবেশনার। এর পর ছিল ত্রিতালে কত্থক, যার প্রথমাংশে বিলম্বিত লয়ে ঠাট, উঠান, আমাদ ও পরন-আমাদ। পরে মধ্য লয়ে তেজামদ, টুকরা, তেহাই, পরন, পারমিলু এবং লাড়ি পরিবেশন করেন তারা। দ্বিতীয় অংশে রাগ গৌড় মলহারে বিন্দাদিন মহারাজ রচিত ঠুমরি ‘মোরি গগরিয়া কাহেকো ফোড়ি রে শ্যাম’-এর সঙ্গে মুনমুন আহমেদ একক কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন। শেষ অংশে ছিল দ্রুতলয়ে দুটি পরন এবং যুগলবন্দি। পুরো পরিবেশনায় কণ্ঠ সহযোগিতায় ছিলেন তানজিলা করিম স্বরলিপি। তবলায় সুবীর ঠাকুর, সরোদে সুনন্দ মুখার্জি ও বাঁশিতে মনিরুজ্জামান।এর পর তবলা নিয়ে মঞ্চে আসেন পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকারের শিষ্য নীলেশ রণদেব। তিনি তবলায় তিনতাল বাজিয়ে মুগ্ধ করেন দর্শকদের। হারমোনিয়াম সহযোগিতায়

ছিলেন মিলিন্দ কুলকার্নি। এর পর খেয়াল পরিবেশন করেন ভারতের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে ‘ইয়াং মায়েস্ত্রো ইন মিউজিক’ পুরস্কার পাওয়া কিরানা ঘরানার কণ্ঠশিল্পী জয়তীর্থ মেউন্ডি। প্রথমেই তিনি পরিবেশন করেন রাগ কায়ানা। এর পর তার কণ্ঠে শোনা যায় আদানা। নাট্যগীত পরিবেশনের মধ্য তিনি নিজের পরিবেশনার সমাপ্তি টানেন। পরে মঞ্চে আসেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি ও পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। ত্রিতালে তাদের তবলার যুগলবন্দিতে মুগ্ধ হন দর্শক-শ্রোতারা।

কর্ণাটকি যুগলবন্দি কণ্ঠসঙ্গীত করেন দুই বোন রঞ্জনি বালসুব্রহ্মণ্যন ও গায়ত্রী বালসুব্রহ্মণ্যন। এর পর সরোদ নিয়ে মঞ্চে আসেন পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। স্বনামধন্য সরোদিয়া তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের গভীর সঙ্গীতজ্ঞান ও কৌশলগত দক্ষতা এবং ধ্রুপদ, তন্ত্রকারী ও বিভিন্ন গায়কীর উপাদানে সমুজ্জ্বল ছিল তার পরিবেশনা। তার সঙ্গে তবলায় সঙ্গত দেন আরেক কৃতী পণ্ডিত যোগেশ শামসি। তৃতীয় রজনীর শেষ পরিবেশনা ছিল পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর খেয়াল।

রোববারের মধ্যরাতের আয়োজন : গতকাল রোববার মধ্যরাতে মঞ্চে আসেন পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকার। প্রথমে তিনি আভোগী রাগে ধ্রুপদ পরিবেশন করেন। পরে দক্ষিণী রাগ বর্ধিনী পরিবেশন করেন। এ সময় তাকে পাখোয়াজ বাজিয়ে সঙ্গ দেন প্রতাপ আওয়াদ। তানপুরায় ছিলেন অভিজিৎ কুণ্ডু ও টিংকু কুমার শীল। পরে সেতারে রাগ সাহানা কানাড়া বাজান পণ্ডিত সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর পিলু জংলা পরিবেশন করে শেষ করেন তার পরিবেশনা। সেতারের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন পরিমল চক্রবর্তী। তানপুরায় ছিলেন এলভিন মজুমদার ও সামিন ইয়াসার। তৃতীয় দিনের সর্বশেষ পরিবেশনা ছিল ওস্তাদ রাশিদ খানের। শুরুতে তিনি রাগ ললিত পরিবেশন করেন। বিখ্যাত ঠুমরি ‘ইয়াদ পিয়া কি আয়ি’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে তিনি শেষ করেন পরিবেশনা। তার সঙ্গে তবলায় তাল দেন পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোকালে ছিলেন কৃষ্ণা বোগানে, হারমোনিয়াম অজয় যোগলেকার, সারেঙ্গিতে মুরাদ আলী খান এবং তানপুরায় এলভিন মজুমদার ও সামিন ইয়াসার।

আজকের আয়োজন : আজ সোমবার পঞ্চম ও সমাপনী দিনের অধিবেশনের শুরুতেই থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিল্পীদের দলীয় কণ্ঠসঙ্গীত। এরপর দলীয় সেতার পরিবেশন করবে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী শিল্পীরা। তাদের এই পরিবেশনার পর শুরু হবে সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। সমাপনী অনুষ্ঠান শেষ হতেই সন্তুর পরিবেশন করবেন শিল্পী শিবকুমার শর্মা। খেয়াল পরিবেশন করবেন কুমার মারদুক ও আরতি আঙ্কালিকর। পণ্ডিত কুশল দাশ পরিবেশন করবেন সেতার। পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশির সুরে শেষ হবে এবারকার উৎসব।

 

View Full Article