Menu

রাতভর সুরের সঙ্গে মিতালি

রাত জেগে ভোর অবধি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুধা পান করেন হাজার হাজার শ্রোতা। ঘুমকে বিদায় জানিয়ে সুরের সঙ্গে মিতালি করেন তারা। আর এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ বিশ্বের নানা দেশের সাধকরা বাংলাদেশে এসে পরিবেশন করছেন তাদের সঙ্গীত। এ সুযোগ হেলায় হারাতে চাননি সঙ্গীতপ্রেমীরা। তাই তো শুক্রবার ছুটির দিন উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব পায় ভিন্ন রং। সন্ধ্যা থেকেই মাঠে মানুষের আগমন। এরপর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অংশগ্রহণও বাড়তে থাকে।

শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় চতুর্থ দিনের উৎসব। যশরাজ ও ওস্তাদ রাশিদ খানের খেয়াল মুগ্ধতা ছড়িয়েছে এ রাতে। আরও ছিল সেতার, সরোদ আর চেলোর পরিবেশনা। ষষ্ঠবারের মতো এ উৎসবের আয়োজন করেছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। এবারের উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে।

শুক্রবার শুরুতেই ছিল ‘নৃত্য চিরন্তন’ শীর্ষক নৃত্য পরিবেশনা। মনিপুরি, ভরতনাট্যম ও কত্থক নৃত্যের যৌথ পরিবেশনায় অংশ নেন দেশের প্রতিশ্রুতিশীল নৃত্যশিল্পী সুইটি দাস, অমিত চৌধুরী, স্নাতা শাহরিন, সুদেষ্ণা স্বয়মপ্রভা, মেহরাজ হক এবং জুয়াইরিয়াহ মৌলি। পরিবেশনাটির সার্বিক তত্ত্বাবধান ও পরিচালনায় ছিলেন নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনিপুরি, ভরতনাট্যম ও কত্থকের পরিবেশনাগুলোর মধ্যে ছিল বিম্বাবতী দেবী, গুরু বিপিন সিং, কীর্তি রাম গোপাল ও শিবলী মহম্মদের কম্পোজিশন। শিল্পীদের সম্মিলিত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় নৃত্যের পরিবেশনা। এরপর সরোদের পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদারের পরিচালনায় সরোদ পরিবেশন করেন ইলহাম ফুলঝুরি খান, ইশরা ফুলঝরি খান, আম্ববারিশ দাস ও সাদ্দাম হুসেন।

এর পর খেয়াল পরিবেশন করেন ওস্তাদ রাশিদ খান। ভারতের রামপুর-সাহাশন ঘরানার অন্যতম ধারক তিনি। ওস্তাদ এনায়াত হুসাইন খান এবং তার ভাগ্নে ওস্তাদ গোলাম মোস্তফা খানের পর তিনি এ ঘরানার প্রচার ও প্রসারে কাজ করছেন। সারগাম এবং সারগাম তানকারির সঙ্গে বিলম্বিত খেয়াল পরিবেশনের জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন তিনি।

রাশিদ খানের খেয়ালের পর সরোদ পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন মাহির ঘরানার পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। মাইহার ঘরানার সরোদ পরিবেশন ও কারিগরি দক্ষতার জন্য খ্যাতি অর্জন করেন মজুমদার। ধ্রুপদ তন্ত্রকারী এবং গায়কী ঘরানায় তার সরোদ বাদন মুগ্ধতা ছড়ায় উৎসবে। বেহালার পরিবেশনা নিয়ে ভারতের প্রখ্যাত বেহালা বাদক ড. মাইশুর মঞ্জুনাথ মঞ্চে আসেন।

হিন্দুস্থানি খেয়ালে একজন জীবন্ত দিকপাল পণ্ডিত যশরাজ। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের খ্যাতিমান এই শিল্পী প্রথমবারের মতো শুক্রবার বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের মঞ্চে খেয়াল পরিবেশন করেন।

এরপর চেলো পরিবেশন করেন সাসকিয়া রাও দ্য-হাস। তিনি পাশ্চাত্য ঘরানার সঙ্গীতশিল্পী হলেও ১৯৯৩ সালে এক কনসার্টে অংশ নিতে ভারতে আসার পর সঙ্গীতের এক নতুন ভুবন আবিষ্কার করেন। তিনি একই সঙ্গে তিবর দে মাচোলার কাছে চেলো শেখার পাশাপাশি ভারতের কৌস্তভ রায় এবং পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার কাছে তালিম নেন।

চতুর্থ দিনের শেষ পরিবেশনা নিয়ে ভোররাতে মঞ্চে আসেন পণ্ডিত বুদ্ধাদিত্য মুখার্জি। তিনি ইমদাদখানি ঘরানার অন্যতম শিল্পী। তার বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবেশনা মোহিত করে সবাইকে।

আজ উৎসবের শেষ দিনের আয়োজন: আজ শনিবার বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের শেষ দিন। আজকের আয়োজনের শুরুতেই রয়েছে বিদুষী সুজাতা মহাপাত্রের ওড়িশি নৃত্যের পরিবেশনা। মোহন বীণা পরিবেশন করবেন বিশ্বমোহন ভট্ট, খেয়াল পরিবেশন করবেন ব্রজেশ্বর মুখার্জি, যৌথভাবে সেতার বাদনে অংশ নেবেন কুশল দাস ও কল্যাণজিত দাস, সেতার বাজিয়ে শোনাবেন কৈবল্যকুমার। অন্যবারের মতো এবারও হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশিবাদনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে উৎসব।

স্কয়ার নিবেদিত এ উৎসবে সহযোগিতা করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।

 

View Full Article