Menu

শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসব মোহন বাঁশি, জাদুর সরোদ

thumbnail উৎসবের তৃতীয় রাতে মোহময় খেয়াল পরিবেশন করেন কিরানা ঘরানার অগ্রজ গায়ক ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতের স্বনামধন্য শিল্পী ড. প্রভা আত্রে। ছবি : লুৎফর রহমান

বাঁশির জাদুকরী সুরে শ্রোতাদের বিমোহিত করলেন শশাঙ্ক সুব্রহ্মণ্যন। পাঁচ দিনের বেঙ্গল শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসবের তৃতীয় রজনীর শুরুতেই তিনি সুরের ইন্দ্রজাল ছড়িয়ে বিমোহিত করেন শ্রোতাদের।

এর আগে মায়াবী সুরের আবেশ ছড়িয়ে দেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত এবং স্কয়ার নিবেদিত উৎসবের তৃতীয় দিনে আরো পরিবেশনা ছিল খেয়াল, তবলা ও সেতার। খ্যাতিমান শিল্পীদের একের পর এক অনবদ্য পরিবেশনায় বিনিদ্র রাত কাটান মুগ্ধ শ্রোতারা।তৃতীয় রাতের আয়োজনের শুরুতে মঞ্চে এসে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীরা সরোদে রাগ কাফি পরিবেশন করেন। এতে অংশ নেন কামাল জহির শামীম, খন্দকার শামছুজোহা, ইলিয়াস খান, ইলহাম ফুলঝুরি খান, ইশরা ফুলঝুরি খান, শরীফ মুহাম্মাদ আরিফিন রনি ও আল জোনায়েদ দিদার। তবলায় ছিলেন পিনু সেন দাস ও রতন কুমার দাস। পরিবেশনা শেষে এবারের আসরের সবচেয়ে খুদে শিল্পী ইশরা ফুলঝুরি খানের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী হাশেম খান।

এরপর কর্ণাটকি বাঁশি নিয়ে মঞ্চে এসে সুরের ইন্দ্রজাল তৈরি করেন শশাঙ্ক সুব্রহ্মণ্যন। বিশ্বের বিভিন্ন বড় সংগীত উৎসবে অংশ নেওয়া এ শিল্পীর বাঁশিতে সুর ওঠে রাগ পূরবী কল্যাণীর, যা উত্তর ভারতের পুরিয়া কল্যাণীর সঙ্গে অনেকটাই সামঞ্জস্য। বাঁশিতে তাঁর সঙ্গে সংগত করেন মৃদঙ্গমে পারুপল্লী ফাল্গুন ও তবলায় ছিলেন সত্যজিৎ তালওয়ালকার।

শশাঙ্ক সুব্রহ্মণ্যনের পর মঞ্চে এসে মোহময় খেয়াল পরিবেশন করেন ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতের স্বনামধন্য শিল্পী ড. প্রভা আত্রে। কিরানা ঘরানার তিনি অন্যতম অগ্রজ গায়ক। খেয়াল ছাড়াও আরো কিছু পরিবেশনার মাধ্যমে নিজের স্বতন্ত্র গায়নশৈলীর পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেন। প্রথমেই তিনি পরিবেশন করেন রাগ শ্যামকল্যাণ। এর পর নিজের সৃষ্টি রাগ মধুরোকোষে খেয়াল পরিবেশন করে মুগ্ধ করেন স্রোতাদের। এর পর তিনি পরিবেশন করেন রাগ কানাড়ায় দাদরানায়কি। রাগ ভৈরবীতে ভজন পরিবেশন করে নিজের পরিবেশনার ইতি টানেন। তাঁকে তবলায় সংগত করেন রোহিত মজুমদার।

এ ছাড়া খেয়াল পরিবেশন করেন ভারতের একজন অন্যতম খেয়ালিয়া রশিদ খান। প্রতিভাধর এ শিল্পী তাঁর কণ্ঠমাধুর্য ও গায়নশৈলী দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। তাঁকে তবলায় সংগত করেন পণ্ডিত শুভংকর বন্দ্যোপাধ্যায়।

তবলার অনুপম তাল-লয়-ছন্দে শ্রোতাদের আন্দোলিত করেন স্বনামধন্য তবলাবাদক পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। ফরুখাবাদ ঘরানার অন্যতম এই তবলাবাদকের সঙ্গে যুগলবন্ধী ছিলেন অনুব্রত চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের তিন তালে বিভিন্ন কম্পোজিশন যে স্রোতারা দারুণ উপভোগ করে তা তুমুল করতালি দিয়ে বুঝিয়ে দেয়। তিনি এই উৎসব আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, সারা পৃথিবীতে এ রকম আয়োজন দু-একটির বেশি দেখিনি।

সেতারের স্নিগ্ধ তরঙ্গে ভোর রাতকে উপভোগ্য করে তোলেন পণ্ডিত সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বাদনের স্বতঃস্ফূর্ততা শ্রোতারা উপভোগ করেন প্রাণভরে।

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের সনাতন ধারা ধ্রুপদ পরিবেশন করেন বিশিষ্ট শিল্পী উদয় ভাওয়ালকার। তাঁর সঙ্গে পাখোয়াজে ছিলেন প্রতাপ আওয়াদ।

আজকের আয়োজন : আজ রবিবার উৎসবের চতুর্থ দিনের আয়োজন শুরু হবে কত্থক নৃত্য পরিবেশনা দিয়ে। মুনমুন আহমেদ ও তাঁর দল রেওয়াজ নৃত্য পরিবেশন করবে। এরপর একক তবলায় বোল তুলবেন নীলেশ রণদেব। খেয়াল পরিবেশন করবেন কিরানা ঘরানার শিল্পী জয়তীর্থ মেউন্ডি। তবলায় যুগলবন্দি পরিবেশন করবেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি ও পণ্ডিত শুভংকর বন্দ্যোপাধ্যায়। যুগলবন্দি কর্ণাটকি সংগীত পরিবেশন করবেন শিল্পী বেহালাবাদক চুটি রঞ্জনী ও গায়ত্রী বালসুব্রহ্মণ্যন ভগ্নিদ্বয়। পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার পরিবেশন করবেন সরোদ। রজনীর শেষ পরিবেশনায় রয়েছে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর খেয়াল।

 

View Full Article