Menu

শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসব শেষ রজনীতে আজ বাঁশির জাদুকর

thumbnail বেঙ্গল শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসবের চতুর্থ দিনে মুনমুন আহমেদ ও তাঁর দলের নৃত্য। ছবি : লুৎফর রহমান

শুরুতেই সুরের ঝংকারে চোখধাঁধানো কত্থক নৃত্য। শেষ রাতে বিরল সংগীতপ্রতিভা পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর মোহময় খেয়াল।

মাঝখানে মনমাতানো তবলা ও হৃদয়ছোঁয়া কর্ণাটকি কণ্ঠসংগীতের যুগলবন্দি এবং স্নিগ্ধতা ছড়ানো সরোদ। জগেজাড়া খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পীদের অনবদ্য সব পরিবেশনায় সুমধুর সুরের আবহে কাটল আরেকটি রজনী। পাঁচ দিনের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের চতুর্থ রাত ছিল গতকাল রবিবার। তবে সব ছাপিয়ে আলোচনায় বাঁশির জাদুকর পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। আজ সোমবার উৎসবের শেষ রজনীতেই সব শেষ পরিবেশনা তাঁর। কিংবদন্তি বংশীবাদক পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার জাদুকরি বাঁশির সুরে শেষ হবে শুদ্ধ সংগীতের এ মহাসম্মেলন।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত এবং স্কয়ার নিবেদিত উৎসবের চতুর্থ দিনের পরিবেশনার শুরুতেই ঘুঙুরের শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে বিশাল আর্মি স্টেডিয়াম। আয়োজনের শুরুতেই মঞ্চে আসেন মুনমুন আহমেদ ও তাঁর দল ‘রেওয়াজ’। তাঁরা পরিবেশন করেন কত্থক নৃত্য।

রাগ ভিন্ন ষড়জে গুরুবন্দনা দিয়ে শুরু করেন নিজেদের পরিবেশনা। এরপর ছিল ত্রিতালে কত্থক, যার প্রথমাংশে বিলম্বিত লয়ে ঠাট, উঠান, আমাদ ও পরন-আমাদ। পরে মধ্য লয়ে তেজামদ, টুকরা, তেহাই, পরন, পারমিলু ও লাড়ি পরিবেশন করেন দলের নৃত্যশিল্পীরা। দ্বিতীয় অংশে রাগ গৌড় মল্্হারে বিন্দাদিন মহারাজ রচিত ঠুমরি ‘মোরি গগরিয়া কাহেকো ফোড়ি রে শ্যাম’-এর সঙ্গে মুনমুন আহমেদ একক কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন। শেষ অংশে দ্রুতলয়ে দুটি পরন চক্করে মাতিয়ে তোলে ২০ জনের নৃত্যশিল্পীর দল। নৃত্যের তালে সুরের ঝংকার তোলে তবলা, সরোদ, এসরাজ ও বাঁশি। তবলায় ছিলেন সুবীর ঠাকুর, সরোদে সুনন্দ মুখার্জি, বাঁশিতে মনিরুজ্জামান এবং পুরো পরিবেশনায় কণ্ঠ সহযোগিতায় ছিলেন তানজিলা করিম স্বরলিপি। পরিবেশনা শেষে তাঁদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন ইনাম আহমদ চৌধুরী।

এরপর তবলা নিয়ে মঞ্চে আসেন ভারতের নীলেশ রণদেব। পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকারের এই শিষ্য তবলায় তিনতাল বাজিয়ে মুগ্ধ করে রাখেন দর্শকদের।

এরপর খেয়াল পরিবেশন করেন কিরানা ঘরানার কৃতী কণ্ঠশিল্পী জয়তীর্থ মেউন্ডি। প্রথমেই তিনি পরিবেশন করেন রাগ কায়ানা। এরপর তাঁর কণ্ঠে শোনা যায় আদানা। নাট্যগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে তিনি নিজের পরিবেশনার সমাপ্তি টানেন। শিল্পীর অনায়াস গায়ন ও বৈচিত্র্যপূর্ণ তানকারীর পরিবেশনায় মুগ্ধ হন দর্শক-শ্রোতারা। ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ‘ইয়াং মায়েস্ত্রো ইন মিউজিক’ পুরস্কার গ্রহণ যে কতটা যথার্থ তা নিজস্ব পরিবেশনায় বুঝিয়ে দেন।

মধ্যরাতে ছিল এ রাতের অন্যতম আকর্ষণ তবলার যুগলবন্দি। প্রবাদপ্রতিম তবলিয়া ওস্তাদ আল্লারাখার শিষ্য যোগেশ শামসি ও পণ্ডিত শুভংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুগলবন্দি মাতিয়ে তোলে দর্শক-শ্রোতাদের। সিগ্ধ সুরের সরোদ নিয়ে মঞ্চে আসেন স্বনামধন্য সরোদিয়া পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। গভীর সংগীতজ্ঞান ও কৌশলগত দক্ষতা এবং ধ্রুপদ, তন্ত্রকারী ও বিভিন্ন গায়কীর উপাদানে সমুজ্জ্বল ছিল তাঁর পরিবেশনা। তাঁর সঙ্গে তবলায় সংগত দেন আরেক কৃতী পণ্ডিত যোগেশ শামসি।

বিরল সাংগীতিক প্রতিভা পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর মোহনীয় খেয়াল ছিল চতুর্থ রজনীর শেষ আকর্ষণ। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের প্রথম আসর থেকেই তিনি আসছেন। এ কারণে এ দেশে তাঁর ভক্ত অজস্র। কীর্তিমান এ শিল্পীর পরিবেশনায় মায়াবী সুরের আবেশ নিয়ে শ্রোতারা ফিরে যান নিজ নিজ গৃহে।

আজকের আয়োজন আজ সোমবার বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের সমাপনী রজনী। সমাপনী অধিবেশনের শুরুতেই থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিল্পীদের অংশগ্রহণে দলীয় কণ্ঠসংগীত। এরপর দলীয় সেতার পরিবেশন করবে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী শিল্পীরা। তাদের এই পরিবেশনার পর শুরু হবে সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। সমাপনী অনুষ্ঠান শেষ হতেই সন্তুর পরিবেশন করবেন শিল্পী শিবকুমার শর্মা। খেয়াল পরিবেশন করবেন কুমার মারদুর ও আরতি আঙ্কালিকার। পণ্ডিত কুশল দাশ পরিবেশন করবেন সেতার। পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশির সুরে শেষ হবে এবারের উৎসব।

View Full Article