Menu

শুদ্ধসুরের প্রহর আজ থেকে

thumbnail

সমকাল প্রতিবেদক
কর্মব্যস্ত নাগরিকদের হৃদয়-মনকে আজ বৃহস্পতিবার থেকে পাঁচদিন সন্ধ্যা ৭টা হতে না হতেই দুই হাজার বছর আগের বৈদিক যুগের জীয়নকাঠি ছুঁইয়ে জাগিয়ে তুলবে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব। ভোর ৫টা পর্যন্ত শুদ্ধ গীতসুধারসে ভাসবেন শ্রোতারা। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত, স্কয়ার নিবেদিত ও ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগিতায় উৎসবের এ পঞ্চম আসর উৎসর্গ করা হয়েছে সদ্যপ্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে। উৎসবস্থল আর্মি স্টেডিয়ামে এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত আসরের মঞ্চ। বাংলাদেশ ও ভারতের আড়াই শতাধিক শিল্পী উপমহাদেশের

সবচেয়ে বড় শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের এ আসরে অংশ নেবেন। তাদের কণ্ঠে যেমন রাগ-রাগিণী খেলা করবে, তেমনি সেতার, সরোদ, সন্তুর, বাঁশি, বেহালা, ম্যান্ডোলিন, তবলার বোল জাগাবে অনুভূতিকে। সঙ্গে থাকছে ওডিশি, কত্থক আর মণিপুরি নৃত্যের ঝঙ্কার। এ আসরে রয়েছেন যেমন সাত বছর বয়সী কনিষ্ঠতম শিল্পী ইসরাত ফুলঝুরি খান, তেমনি রয়েছেন ৮৭ বছর বয়সী বিদুষী গিরিজা দেবী।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ উৎসব উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি হয়ে আসবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অতিথিদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সেলিম আর. এফ. হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।

পঞ্চম এ আসর সম্পর্কে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের সমকালকে বলেন, ‘সঙ্গীতের অন্তঃপ্রাণ শাস্ত্রীয়সঙ্গীত। সুর আর রাগরাগিণীর প্রকৃত আস্বাদ পাওয়া যায় এর মধ্য দিয়ে। এক সময় এ ধারার সঙ্গীত আমাদের দেশে সমৃদ্ধি ও উৎকর্ষতার শীর্ষে ওঠে। যদিও এর চর্চা ছিল খুবই কম। গত চার বছর ধরে নিয়মিত বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের আয়োজনের কারণে আবারও সেই ঐতিহ্যের পথে হাঁটছে দেশের মানুষ। এরই মধ্যে এই সঙ্গীত শোনার কান সৃষ্টি হয়েছে মানুষের মধ্যে। এসব শেখার আগ্রহও বেড়েছে। এ ধারার শিল্পী গড়ে উঠছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অনেক শিল্পী উৎসব মাতিয়ে তুলবেন। সে দিন আর বেশি দূরে নয়।’ এই আয়োজন নিয়ে বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

আজকের কর্মসূচি :আজ বৃহস্পতিবার প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নৃত্যনন্দন দলের ৬০ শিল্পীর দলগত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। এর পর ভারতের প্রবীণ গোদখিণ্ডির বাঁশি বাদনের সঙ্গে থাকছে রাতিশ টাগডের বেহালার যুগলবন্দি। এ সময় তবলায় থাকবেন রামদাস পালসুল। এর পর রয়েছেন বিদূষী গিরিজা দেবীর খেয়াল। তাকে তবলায় সঙ্গত করবেন গোপাল মিশ্র। সরোদ পরিবেশন করবেন ওস্তাদ আশীষ খান। ‘জাসরাঙ্গি’ শিরোনামে যুগলবন্দি পরিবেশন করবেন বিদুষী অশ্বিনী ভিদে দেশপাণ্ডে ও পণ্ডিত সঞ্জীব অভয়ঙ্কর। ড. এল সুব্রহ্ম্যণনের বেহালাবাদনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম দিনের আয়োজন।

আগামী চারদিনের কর্মসূচি :আগামীকাল শুক্রবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই ওডিসি নৃত্য পরিবেশন করবেন বিদুষী মাধবী মুডগাল ও তার শিষ্য আরুশি মুডগাল। দলীয় তবলা পরিবেশন করবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীশিল্পীরা। খেয়াল পরিবেশন করবেন শিল্পী প্রিয়াঙ্কা গোপ। সন্তুরে ঝঙ্কার তুলবেন শিল্পী রাহুল শর্মা। কণ্ঠে দলীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন মোহাম্মদ শোয়েব ও তার দল। সেতারে সুর তুলবেন রাগসঙ্গীতের স্বতন্ত্র রূপকার পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়। খেয়াল পরিবেশন করবেন পণ্ডিত উলহাস কুশলকর। উৎসবে যুক্ত নতুন উপকরণ ম্যান্ডোলিন বাদনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় দিনের আয়োজন। এতে বাঁশি পরিবেশন করবেন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড নমিনি বংশীবাদক পণ্ডিত রণু মজুমদার ও ম্যান্ডোলিনের রূপকার প্রয়াত ইউ শ্রীনিবাসের ভাই ইউ রাজেশ।

শনিবার তৃতীয় দিনের অধিবেশনের শুরুতেই থাকছে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী শিল্পীদের দলীয় সরোদ বাদন। এরপর কর্নাটকি বাঁশি পরিবেশন করবেন কর্নাটকের বংশীবাদক শশাঙ্ক সুব্রহ্মণ্যন। কিরানা ঘরানার শিল্পী পদ্মভূষণ ড. প্রভা আত্রে পরিবেশন করবেন খেয়াল। একক তবলা পরিবেশন করবেন ফাররুকাবাদ ঘরানার তবলিয়া পণ্ডিত অনিন্দ্য গঙ্গোপাধ্যায়। ধ্রুপদ পরিবেশন করবেন পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকর। সেতার পরিবেশন করবেন পণ্ডিত সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। উৎসবের তৃতীয় রাতের শেষ আকর্ষণ ওস্তাদ রশিদ খান। তিনি পরিবেশন করবেন খেয়াল।

চতুর্থ দিন রোববারের আয়োজনের শুরুতেই কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবে মুনমুন আহমেদ ও তার দল রেওয়াজ। এরপর এক তবলায় বোল তুলবেন নীলেশ রণদেব। খেয়াল পরিবেশন করবেন কিরানা ঘরানার শিল্পী জয়তীর্থ মেউন্ডি। তবলায় যুগলবন্দি পরিবেশন করবেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি ও পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। যুগলবন্দি কর্নাটকি সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পী দুই বোন বেহালাবাদক চুটি রঞ্জনি ও গায়ত্রী বালসুব্রহ্মণ্যন। পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার পরিবেশন করবেন সরোদ। এ দিনের অনুষ্ঠান শেষ হবে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর খেয়াল পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।

সোমবার পঞ্চম ও সমাপনী দিনের অধিবেশনের শুরুতেই থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিল্পীদের অংশগ্রহণে দলীয় কণ্ঠসঙ্গীত। এর পর দলীয় সেতার পরিবেশন করবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী শিল্পীরা। এর পর শুরু হবে মূল সমাপনী অনুষ্ঠান। এদিন প্রধান অতিথি থাকবেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। সমাপনী অনুষ্ঠানের পর সন্তুর পরিবেশন করবেন শিল্পী শিবকুমার শর্মা। খেয়াল পরিবেশন করবেন কুমার মারদুক ও আরতি আঙ্কালিকর। পণ্ডিত কুশল দাশ শোনাবেন সেতার। এবারও পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশির সুরে শেষ হবে উৎসব।

অনলাইন নিবন্ধন করে যারা পাস সংগ্রহ করেছেন তারাই অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে পারবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে রাত ১টার পর সবরকম প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো সুবিধা ব্যবস্থা থাকছে না। বয়স্ক বা হাঁটাচলার যাদের অসুবিধা আছে, তাদের প্রধান ফটক থেকে হুইলচেয়ারে নিয়ে আসার ব্যবস্থা থাকবে। কাউকেই কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে উৎসবস্থলে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তবে নারীরা ৮ ইঞ্চি বাই ৬ ইঞ্চি সাইজের ছোট ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। এবারও উৎসবে যেতে ও ফিরে আসতে যানবাহনের ব্যবস্থা রেখেছেন আয়োজকরা।

View Full Article