Menu

শুদ্ধ সুরে অবগাহন

thumbnail

অক্টোবরের শেষের দিকে এসেছিল উৎসব না হওয়ার ঘোষণা। তবে মাস ঘুরতেই জানা গেল ছেদ পড়ছে না পাঁচ বছরের ধারাবাহিকতায়। রাজধানীতে বসেছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত আসর- বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের ষষ্ঠ আসর। পাঁচবারের উৎসবস্থল বনানীর বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামের পরিবর্তে এবার ধানমণ্ডির আবাহনী মাঠে। সেখানেও শুদ্ধ সুরের বৈভবময় যাত্রায় হাজির হন হাজারও মানুষ।

‘সঙ্গীত জাগায় প্রাণ’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে শিক্ষাবিদ-সংস্কৃতিজন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে। এবারের উৎসবের নিবেদক স্কয়ার গ্রুপ এবং সমর্থন করছে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড।

গতকাল রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আবাহনী লিমিটেডের সভাপতি সালমান এফ রহমান, ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সেলিম আর এফ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।

উদ্বোধন করে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘এ উৎসবের প্রতিটিতেই উপস্থিত থেকেছি, এটা আমার সৌভাগ্য। এ উৎসবে আমরা পাঁচদিন নৃত্যগীতের মধ্যে অবগাহন করব। আমরা সবার আগে মানুষ হতে চাই, নিজেদের রুচিকে উন্নত করতে চাই। এ উৎসব সে পথেই প্রেরণা জোগাবে।’

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, সঙ্গীত পরিশুদ্ধ করে আমাদের, চিত্তকে উদার করে, আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করে। সঙ্গীত আমাদের মুক্তচিন্তার অধিকারী করে অসাম্প্রদায়িক হওয়ার প্রেরণা জোগায়। এ উৎসবের মধ্য দিয়ে সে মূল্যবোধ, চেতনাকে ধারণ করতে চাই। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সঙ্গীত আমাদের শক্তি জোগাবে। উৎসব আমাদের মধ্যে সেই চেতনার বিকাশ ঘটায়।

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, এটি এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব। বিশ্বের অন্যতম ধ্রুপদী উৎসব বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে শিল্পীদের টেনে এনেছে। মহান শিল্পীদের সঙ্গীতে নিজেদের সমৃদ্ধ করব।

উৎসব মঞ্চে আবুল খায়ের ঘোষণা দেন, আগামী বছর উৎসব উৎসর্গ করা হবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে, ২০১৯ সালে ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদকে এবং ২০২০ সালে ছায়ানট সভাপতি সন্‌জীদা খাতুনকে।

গতকাল দিনের প্রথম পরিবেশনায় ছিল ভারতীয় প্রখ্যাত বেহালাবাদক ড. এল সুব্রহ্মণ্যনের নেতৃত্বে কাজাখস্তানের আসতানা সিম্ম্ফনি ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রার। প্রথমেই ব্যক্তিগত পরিবেশনায় ছিলেন ড. এল সুব্রহ্মণ্যন। তিনি বেহালায় আভোগী রাগ পরিবেশন করেন। তার সঙ্গে মৃদঙ্গমে সঙ্গত করেন রামামূর্তি ধুলিপালা, তবলায় ছিলেন পণ্ডিত তন্ময় বোস এবং মোরসিংয়ে ছিলেন সত্য সাঁই ঘণ্টশালা। এরপরেই অর্কেস্ট্রা পরিবেশন করতে মঞ্চে আসে উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ আসতানা সিম্ম্ফোনি ফিলহারমনিক। দলটি প্রথমে সিলেস কাজগালিব রচিত সিম্ম্ফোনির কিছু অংশ এবং পি আই চাইকভস্কির বিখ্যাত রচনা ‘সোয়ান লেক’-এর কিয়দংশ পরিবেশন করে। অর্কেস্ট্রা পরিচালনা করেন আসতানা সিম্ম্ফোনি ফিলহারমনিকের আর্টিস্টিক পরিচালক বেরিক বাত্যরখান। মঞ্চের পরিবেশনায় অংশ নেন কে পেন্ডারকি, ভি আশকেনাজি, আর গাটার, এ চাইকোভস্কি, আর কানেট্টি ও ডি ব্রোসরা।

তারপর এল সুব্রহ্মণ্যনের সঙ্গে যুগল পরিবেশনায় আসে সিম্ম্ফোনি অর্কেস্ট্রা। ‘শান্তিপ্রিয়া’ শিরোনামে পশ্চিমা সঙ্গীতের সঙ্গে ভারতীয় ক্ল্যাসিক্যালের স্টাফ নোটেশনে পুরো মাঠে তৈরি হয় সুরের ইন্দ্রজাল। ভারতীয় ক্ল্যাসিক্যালের সঙ্গে ওয়েস্টার্নের ফিউশনে কখনও বিরহ ব্যথা, কখনও আবার ছড়ালো উচ্ছ্বাসের বারতা।

এর পর রাগ-রাগিণীর খেলা ছিল বাংলাদেশে বসবাসরত ভারতীয় শিল্পী রাজরূপা চৌধুরীর সরোদে। তাকে তবলায় সঙ্গত করেন পণ্ডিত অভিজিৎ ব্যানার্জি। তিনি শুরুতেই তার গুরু সিদ্ধার্থ রায় চৌধুরীর সৃষ্ট অপ্রচলিত রাগ অনিল মধ্যম পরিবেশন করেন। রাজরূপা চৌধুরী মঞ্চ থেকে নামতেই মঞ্চে ভারতের গোয়ালিয়র, কিরানা এবং জয়পুর ঘরানায় কণ্ঠে খেয়াল পরিবেশন করেন ভারতের শিল্পী পদ্মা তালওয়ালকর। সেতার বাদনে অংশ নেন বাংলাদেশের শিল্পী ফিরোজ খান। এরপর মঞ্চে ওঠেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষানবিশ সুপ্রিয়া দাস। তার খেয়ালে মুগ্ধ হন মাঠভর্তি দর্শক-শ্রোতা। ভোররাতে দিনের শেষ পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন ভারতীয় বংশীবাদক রাকেশ চৌরাশিয়া ও সেতারবাদক পূর্বায়ন চট্টোপাধ্যায়।

আজ বুধবার কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবেন অদিতি মঙ্গলদাস ডান্স কোম্পানির নৃত্যশিল্পীরা। তবলা বাদনে অংশ নেবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এরপর সন্তুর নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হবেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা, খেয়াল পরিবেশন করবেন পণ্ডিত উলহাস কশলকর, সেতার বাদন করবেন ওস্তাদ শাহিদ পারভেজ খান এবং ধ্রুপদ পরিবেশন করবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী অভিজিৎ কুণ্ডু। সবশেষে পণ্ডিত রনু মজুমদার বাঁশি এবং পণ্ডিত দেবজ্যোতি বোস সরোদে যুগলবন্দি পরিবেশন করবেন।

আগামীকালের আয়োজন :আগামীকাল বৃহস্পতিবার উৎসবের তৃতীয় দিনের আয়োজন শুরু হবে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীদের সেতার বাদনের মধ্য দিয়ে। এরপর ঘাটম ও কঞ্জিরা বাদন করবেন বিদ্বান ভিক্ষু বিনায়ক রাম ও সেলভাগণেশ বিনায়ক রাম। খেয়াল পরিবেশন করবেন সরকারি সঙ্গীত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সরোদ বাদন করবেন আবির হোসেন, বাঁশি বাদন করবেন গাজী আবদুল হাকিম, ধ্রুপদ পরিবেশন করবেন পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকর এবং বেহালা বাদনে অংশ নেবেন বিদুষী কালা রামনাথ। সবশেষে খেয়াল পরিবেশন করবেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী।

 

View Full Article