শুরু হচ্ছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসব
কয়েক হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির গর্বিত জাতি বাঙালি। বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি হিসেবেও পরিচিত। আর এ কারণেই হয়তো একসময় শীত এলেই গ্রাম-বাংলার আনাচে-কানাচে রাতভর হতো যাত্রাপালা, গান-বাজনাসহ নানান ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন। সেই সব আয়োজন এখন আর তেমন দেখা মেলে না। সেসব আয়োজন এখন যেন শুধুই ইতিহাস-ঐতিহ্য। কিন্তু, গ্রামগঞ্জের পরিবর্তে বিগত কয়েক বছর ধরে যান্ত্রিক শহর ঢাকা’র আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসব’ যেন সেই ইতিহাস-ঐতিহ্যকে নতুন রূপে সবার মধ্যে ফিরিয়ে দিয়েছিল। উৎসবপ্রিয় বাঙালি রাতভর অনুষ্ঠিত শাস্ত্রীয় সংগীত বুঝুক আর না বুঝুক ভালোবেসে ছিল খুব। সেই ভালোবাসার টানে প্রতিবছরের মতো এবারও লক্ষ-লক্ষ সংগীতপ্রিয় বাঙালি অপেক্ষায় ছিল রাতভর শাস্ত্রীয় সংগীতের মোহনীয় আসরের। বছর ঘুরে সেই অপেক্ষা শেষের সময় এগিয়ে আসলে গত ২২ অক্টোবর উৎসব আয়োজক কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ সম্মেলনে ভেন্যু না পাওয়ায় এবারের উৎসব হচ্ছে না ঘোষণা দিলে সংগীতানুরাগীরা হতাশ এবং মারাত্মকভাবে ক্ষুব্ধ হয়।
শাস্ত্রীয় সংগীতের অনুরাগীদের ভালোলাগা আর ভালোবাসার কথা মাথায় রেখে কর্তৃপক্ষ বিকল্প ভেন্যু খুঁজতে শুরু করে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপে আবাহনীর মাঠটি তারা বরাদ্দ পায়। আর সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীতের এবারের আসর। আগামী ২৬ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধানমন্ডির আবাহনী মাঠে বসবে এই উৎসবের যষ্ঠ আসর। চলবে টানা ৫ রাত। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হয়ে পরদিন ভোর ৫টা পর্যন্ত উৎসব চলবে। রাত ১২টায় গেট বন্ধ হয়ে যাবে, বের হওয়া গেলেও আর প্রবেশ করা যাবে না। আবাহনী মাঠের পাশে আবাসিক এলাকা হওয়ায় বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে শব্দ ছড়ানো নিয়ন্ত্রণ করা হবে। থাকছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দেশের বরেণ্য গবেষক, চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামানকে উৎসর্গ করা হয়েছে এবারের এই উৎসবটি।
ঐদিন সন্ধ্যায় উদ্বোধনী আসরে প্রধান অতিথি থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, আবাহনী লিমিটেডের সভাপতি সালমান এফ রহমান, ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী।
গতকাল রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু, পরিচালক নুভা নাহিদ চৌধুরী, স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী ও ব্র্যাক ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অফ কমিউনিকেশনস জারা জাবীন মাহবুব।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের উৎসবে যোগ দিতে ঢাকায় আসছেন পদ্মবিভূষণ প-িত যশরাজ, গ্র্যামি বিজয়ী প-িত বিশ্বমোহন ভট্ট, বিদুষী কালা রামনাথ, গ্র্যামি জয়ী পদ্মভূষণ বিদ্বান ভিক্কু বিনায়করাম, বিশিষ্ট ওডিশি নৃত্যশিল্পী সুজাতা মহাপাত্র, সেতার বাদক প-িত বুধাদিত্য মুখার্জি, সাসকিয়া রাও, বিদূষী পদ্মা তলওয়ালকার, প-িত রনু মজুমদার, প-িত শিবকুমার শর্মা, হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, প-িত অজয় চক্রবর্তী, ?ওস্তাদ রশিদ খান, ওস্তাদ শাহিদ পারভেজ খান সহ বিশ্ব বিখ্যাত বহু শিল্পী প্রমুখ। বিদেশি শিল্পীদের পাশাপাশি থাকছে বাংলাদেশি শিল্পীদেরও পরিবেশনা।
প্রতিবছরের মতো অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে উৎসবের প্রবেশ পাস। আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম। বিনামূল্যে এই নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে সীমিত সময়ের জন্য। www.bengalclassicalmusicfest.com থেকে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। অনলাইনের বাইরে ধানমন্ডির ৭/এ সড়কের ৬০ নম্বর বাড়ির জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠ এবং এয়ারপোর্ট রোডের খিলক্ষেতের বেঙ্গল সেন্টারে সরাসরি নিবন্ধন করা যাবে। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিবারের ন্যায় এবারও থাকবে কিছু বিধি-নিষেধ। মাঠে ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের আনা যাবে না। মাঠে গাড়ি পার্কিংয়ের কোন ব্যবস্থা থাকবে না। মাঠে একাধিকবার প্রবেশ ও প্রস্থান করা যাবে না।