শ্রোতার সরবতায় ঝলমলে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব
স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুরের স্রোতধারায় ধরা দিল আনন্দময় সময়। সন্ধ্যায় শুরু হওয়া সুরের যাত্রা শেষ হলো ভোরে। তাল ও লয়ের উদ্দীপনায় কেটে গেল সুররসিকদের বিনীদ্র রাত। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মাধুর্যে সিক্ত হলো শ্রোতার অন্তরাত্মা। বৃহস্পতিবার হেমন্তের সাজবেলা থেকে ভোরবেলা পর্যন্ত গান আর তালের মায়ায় মুগ্ধতার বীজ বুনে শুরু হলো বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে। পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত উৎসবের আয়োজক বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। স্কয়ার নিবেদিত উৎসবেসহযোগিতা করছে ব্র্যাক ব্যাংক।
শুরুতেই ছিল ‘রবি করোজ্জ্বল’ শিরোনামের শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশনা। নৃত্যশিক্ষক শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় নৃত্যনন্দন দলের প্রায় ষাটজন শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূল গান ও ভাঙ্গা গানে মণিপুরী, ভারতনাট্য, ওডিশি ও কত্থক রীতির রূপায়ন পরিবেশন করেন। নাচের মুদ্রার সঙ্গে বেজে ওঠে ‘বাসন্তী, হে ভুবনমোহিনী’, ‘বিপুল তরঙ্গ রে’, ‘ওই পোহাইলো তিমির রাতি’ গানের সুর। এছাড়াও ছিলো ব্রজবুলী ভাষার গান।
এরপর উৎসবে ভেসে বেড়ায় বাঁশি ও বেহালার যুগলবন্দি সুরমূর্ছনা। বিশে^র বিভিন্ন দেশের উৎসবে বাঁশি বাজিয়ে সুনাম কুড়ানো শিল্পী প্রবীণ গোডখিন্ডি। তার বাঁশির সঙ্গে যুগলবন্দিতে ছিলেন ভারতের মিউজিশিয়ান্স ফেডারেশনের সভাপতি রাতিশ তাগড়ের বেহালাবাদন। তবলায় সঙ্গত করেন রামদাস পালসুল।
যুগলবন্দি পরিবেশনা শেষে ছিল উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিমন্ত্র¬ী আসাদুজ্জামান নূর। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্যবর্ধন শ্রিংলা, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সেলিম আর এফ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার পর খেয়াল নিয়ে মঞ্চে আসেন ৮৭ বছর বয়সী বিদুষী গিরিজা দেবী। গাইলেন নিজের সবটুকু উজার করে। তাই তো অশীতির কণ্ঠেও খেলে গেল চমৎকার কারুকাজ। স্বরের চড়াই-উৎরাইয়ের মোহাবিষ্ট করে শুদ্ধ সঙ্গীতের অনুরাগীদের। প্রথমেই তিনি পরিবেশন করেন রাগ যোগকোষ। এরপর গেয়ে শোনান রাগ মিশ্র খাম্বাসে ঠুমরি। একটু থেমে টপ্পার পর আরেকটি রাগ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় তার পরিবেশনা। সেনিয়া ও বেনারস ঘরানার এই কণ্ঠশিল্পীর সঙ্গে তবলায় গোপাল মিশ্র ও সারাঙ্গিতে সঙ্গত করেন মুরাদ আলি খান।
গিরিজা দেবীর পরিবেশনা শেষে সরোদবাদন নিয়ে মঞ্চে আসেন আলাউদ্দিন খাঁর দৌহিত্র ও আলি আকবর খাঁর পুত্র ওস্তাদ আশিষ খাঁ। গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়ন পাওয়া এ শিল্পীর সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন প-িত বিক্রম ঘোষ।
‘জাসরাঙ্গি’ শিরোনামে খেয়াল যুগলবন্দি নিয়ে মঞ্চে আসেন জয়পুর আত্রৌলি ঘরনার অন্যতম শিল্পী বিদুষী অশি^নী ভিদে দেশপা-ে ও মেওয়াতি ঘরানার প্রখ্যাত শিল্পী প-িত সঞ্জীব অভয়ংকর। তাদের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন আজিঙ্কা যোশি ও রোহিত মজুমদার।
প্রথম দিনের আয়োজন শেষ হয় গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত ড. এল সুব্রহ্ম্যণনের বেহালাবাদনের মধ্য দিয়ে। বেহালার অপূর্ব সঙ্গীত মুর্ছনা সত্যিই মন ভোলানো। ড. এল সুব্রহ্ম্যণনের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন প-িত তন্ময় বসু।
আজকের পরিবেশনা : আজ শুক্রবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই ওড়িসি নৃত্য পরিবেশন করবেন বিদুষী মাধবী মুডগাল ও তার শিষ্য আরুশি মুডগাল। দলবেঁধে তবলার বোল শোনাবে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীশিল্পীরা। খেয়াল পরিবেশন করবেন বাংলাদেশের শিল্পী প্রিয়াঙ্কা গোপ। সন্তুরে সুর তুলবেন শিল্পী রাহুল শর্মা। কণ্ঠে দলীয় শাস্ত্র¬ীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন মোহাম্মদ শোয়েব ও তার দল। সেতার পরিবেশন করবেন পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়। খেয়াল পরিবেশন করবেন প-িত উলহাস কশলকার। উৎসবে নতুন যুক্ত হওয়া ম্যান্ডোলিন বাদনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় দিনের আয়োজন। সঙ্গে থাকবে বাঁশি। পরিবেশন করবেন বঁংশীবাদক প-িত রনু মজুমদার ও ম্যান্ডোলিনে ইউ রাজেশ।