Menu

সঙ্গীতের সৌন্দর্য বোঝালেন শিব কুমার

thumbnail এটাই বোধ হয় বিশুদ্ধ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সৌন্দর্য। শিল্পী বাজাবেন, আর দর্শক মনোযোগী শ্রোতা হয়ে তার মধ্যে ডুব দেবেন। উপমহাদেশের প্রখ্যাত পণ্ডিত শিব কুমার শর্মার সন্তুরের সুরে মধ্য-রাতে সেই আবহ ফুটে উঠেছিল ধানমন্ডির আবাহনী মাঠে। যশস্বী এই পণ্ডিতের সুর মোহাবিষ্ট করে রাখে হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতাকে। উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের প্রবাহ আর পৌষের কুয়াশায় ভেজা শিশির মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। বাদনের শৈল্পিকতায় যেন অচিনপুরে হারিয়ে যায় অগণিত সুরপিয়াসী। স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যে সাধনায় আসরেই পরিণত হয় বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের দ্বিতীয় রাতের আসর। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব ২০১৭’-এর দ্বিতীয় রাতের মূল আকর্ষণ পণ্ডিত শিব কুমার শর্মার ‘সন্তুর’-এর পরিবেশনার ধরনটি ছিল এমনই। শুদ্ধ সঙ্গীতে নিমজ্জিত শ্রোতারা শুধু শ্রবণে নয় যেন ধ্যানেই মগ্ন হলেন। মঞ্চে এলেন, নিজে বাজালেন আর অগণিত সঙ্গীতানুরাগীর হৃদয়ের তানপুরাতে সুরের আলোড়ন সৃষ্টি করেই মঞ্চ ছাড়লেন শিব কুমার শর্মা। রাগ ঝিঁঝোটিতে আলাপ, জোড়, ঝালা ও গৎ পরিবেশন করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত এ সন্তুর শিল্পী। এ সময় শিল্পীকে তবলায় সঙ্গত করেন যোগেশ শামসি ও তানপুরায় তাকাহিরো আড়াই। পরিবেশনা শেষে শিব কুমার শর্মার হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ভারতের প্রখ্যাত কত্থক নৃত্যশিল্পী অদিতি মঙ্গলদাস তার দল ড্যান্স কোম্পানির নৃত্যের মধ্য দিয়েই উৎসবের দ্বিতীয় রাতের আসরের পর্দা ওঠে। উৎসব, প্রিয়তমের খোঁজে এবং তারানা নামে এই তিনটি ঘরানায় এই দলটি শাস্ত্রীয় কত্থক নাচের মুগ্ধতায় অনুষ্ঠানের পরিবেশে শৈল্পিকতা ছড়িয়ে দেয়। ‘দৃষ্টিকোণ ড্যান্স ফাউন্ডেশন’ নামে এই দলটির নৃত্যাংশে ছিলেন অদিতি মঙ্গলদাস, গৌরী দিবাকর, মিনহাজ, আম্রপালি ভান্ডারী, অঞ্জনা কুমারী, মনোজ কুমার ও সানি শিশোদিয়া। এ পরিবেশনায় ছিলেন ফারাজ খান, তবলা ও পাঢ়ান্তে মোহিত গাঙ্গানি, পাখোয়াজ ও পাঢ়ান্তে ছিলেন আশীস গাঙ্গানি, বাঁশিতে রোহিত প্রসন্ন। পুরো পরিবেশনাটির মূলধারণা, কোরিওগ্রাফি ও পোশাক পরিকল্পনায় ছিলেন অদিতি।
উৎসব পর্বের মূল পারকাশন রচনা করেছেন গোবিন্দ চক্রবর্তী এবং শ্লোক লিখেছেন সামিউল্লাহ খান। ‘প্রিয়তমের খোঁজে পর্বে ওস্তাদ আমির খসরুর সঙ্গীত ভাষ্যে সঙ্গীত রচনা করেছেন সামিউল্লাহ খান। ‘তারানা’ পর্বের সঙ্গীত রচনা করেছেন শুভা মুদগাল ও আনীশ প্রধান। দিনের দ্বিতীয় পরিবেশনায় ছিল বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীদের তবলা পরিবেশনা, যাতে অংশ নেন প্রশান্ত ভৌমিক, সুপান্থ মজুমদার, এম যে জেসাস ভুবন, ফাহমিদা নাজনিন, নুসরাত-ই-জাহান ও শ্রেষ্ঠা প্রিয়দর্শিনী। সুরেশ তালওয়ালকরের পরিচালনায় রাগ কিরওয়ানি নাগমায় তিন তালে তবলায় কম্পোজিশন পরিবেশন করে এই দলটি। পরিবেশনা শেষে শিল্পীদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এরপর ‘খেয়াল’ এ তন্ত্রমুগ্ধের মায়াজাল ছড়িয়ে দেন পণ্ডিত উল্লাস কশলকর। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনন্য ‘খেয়াল’ নিমজ্জিত হয়ে মাঠভর্তি শ্রোতারা হারিয়ে যান ধ্যানের নিমগ্নতায়। এ ছাড়া এ রাতে সেতারে সুর তুলেন ওস্তাদ শাহিদ পারভেজ খান। ‘ধ্রুপদ’-এর মোহনীয়তায় মানসপটে সুন্দরের চিত্র এঁকে দেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী অভিজিত কুণ্ডু। এরপর বাঁশি নিয়ে মঞ্চে আসেন পণ্ডিত রনু মজুমদার। তার সাথে সরোদে যুগলবন্দী ছিলেন পণ্ডিত দেবজ্যোতি বোস। সরোদ আর বাঁশির যুগলবন্দী পরিবেশনায় সুরের সাগরে ঢেউ খেলে যায় পুরোমাত্রায়। হালকা, মৃদু আর উচ্চমাত্রার দমে এ সময় অনুষ্ঠানের পরিবেশে বিরাজ করে শুদ্ধ সুরের ¯িœগ্ধতা। আর সেই সাধনার রেশ রেখেই পণ্ডিত রনু মজুমদারের বাঁশি আর পণ্ডিত দেবজ্যোতি বোসের সরোদের যুগলবন্দী পরিবেশনার মধ্য দিয়েই ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব ২০১৭’-এর দ্বিতীয় রাতের আসরের সমাপ্তি ঘটে।
সুরের খেলার এ উৎসব প্রাঙ্গণে আরো রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গীতসাধক ও তাদের জীবনী নিয়ে এবং বেঙ্গল ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটলমেন্টসের ‘সাধারণের জায়গা’ শীর্ষক প্রদর্শনী। ৩০ ডিসেম্বর শনিবার শেষ হবে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ও স্কয়ার গ্রুপ নিবেদিত পাঁচ রাতের এ উৎসব।

 

View Full Article