Menu

সম্ভর আর বাঁশির সুরে এলো ভোর

thumbnail

আবাহনী মাঠে কুয়াশার চাদর। পৌষের সন্ধ্যাতেই জাঁকিয়ে বসেছে শীত। রাত যত গভীর হয়েছে সুর উষ্ণতা ছড়িয়েছে পাল্লা দিয়ে। হেমন্তের কুয়াশাসিক্ত পরিবেশে সুরে সমর্পিত ওস্তাদদের কণ্ঠের মূর্ছনা, যন্ত্র সঙ্গীতের মন মাতানো পরিবেশনা শোনার বিরল সুযোগ — এক কথায় অনবদ্য সুর ভ্রমণের সুযোগ এনে দিয়েছে পাঁচ দিনের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উত্সবের। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরের ছোঁয়া ধানমন্ডির আবাহনী মাঠে গভীর রাতে এক ভিন্ন দ্যোতনার সৃষ্টি করেছিল। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উত্সব বাংলাদেশের মানুষের মাঝে এই সঙ্গীত পিপাসাকে নতুন করে চিনিয়েছে।

অদিতি মঙ্গলদাসের নৃত্য পরিবেশনা দিয়ে দ্বিতীয় দিনের যে সুরের অনুরণনের শুরু হয়েছিল এরপর জগত্ক্যাত শিবকুমার শর্মার সন্তুর, উলহাস কশলকরের খেয়াল, ওস্তাদ শহিদ পারভেজ খানের সেতার, স্বনামধন্য রনু মজুমদারের বাঁশি, সবশেষে পণ্ডিত দেবজ্যোতি বোসের সরোদবাদনের মধ্য দিয়ে এসেছে ভোর। একের পর এক সুরের খেলা উষ্ণতা ছড়িয়েছে উত্সব প্রাঙ্গণে। এত বড় বড় ওস্তাদদের মাঝে বাংলাদেশের তরুণ শিল্পী অভিজিত্ কুণ্ডুর ধ্রুপদ মন ভরিয়েছে শ্রোতাদের। আর বেঙ্গল পরম্পরার শিক্ষার্থীদের তবলাবাদন পরিবেশনাও ছিল অনবদ্য।

‘সঙ্গীত জাগায় প্রাণ’- এ প্রতিপাদ্যে স্কয়ার নিবেদিত এ উত্সবে সহযোগিতা করছে ব্র্যাক ব্যাংক। এবারের উত্সব উত্সর্গ করা হয়েছে শিক্ষাবিদ এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে। সঙ্গীত উপভোগের পাশাপাশি খাবারও পানীয়ের জন্য উত্সব প্রাঙ্গণে রয়েছে ফুডকোর্ট। উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞদের পরিবেশনার পাশাপাশি উত্সব প্রাঙ্গণে চলছে বাংলাদেশের সঙ্গীত সাধক ও তাদের জীবনী নিয়ে সচিত্র প্রদর্শনী। এছাড়াও বেঙ্গল ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটলমেন্ট আয়োজন করেছে ‘সাধারণের জায়গা’ শীর্ষক স্থাপত্য প্রদর্শনী।

শিবকুমার শর্মার সন্তুর ছড়ালো স্বর্গীয় অনুভূতি

শিবকুমার শর্মার সন্তুরের সুরের অনুরণন অস্তিত্বের গভীরে নাড়া দেয়, জাগায় প্রাণ। তার সন্তুরের মৃদু ঝঙ্কার মনকে শান্ত করে, নিঃসীম এই প্রকৃতির মাঝে লীন হয়ে যেতে প্রেরণা দেয়। সুরের শুদ্ধতম অনুভবই এই হাজার হাজার বছর ধরে লালিত সুরের মূল ধারা। যা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে। গতকাল শিবকুমার শর্মার প্রায় দেড় ঘণ্টার সুরভ্রমণ পিনপতন নিস্তব্ধতায় উপভোগ করলেন হাজার হাজার শ্রোতা-দর্শক। রক্ষণশীলদের নানা বাধার মধ্যেই তিনিই কাশ্মীরী লোক সংগীতে ব্যবহূত সন্তুরকে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের মঞ্চে নিয়ে এসেছেন। তার একনিষ্ঠ অধ্যবসায়, অনবরত নিরীক্ষা এবং সন্তুরকে নতুন রূপ দেওয়ার চেষ্টা এক নতুন সঙ্গীত ধারার সূচনা করেছে। পদ্মশ্রী ও পদ্মবিভূষণ সম্মাননায় ভূষিত এই শিল্পীর পরিবেশনা মন্ত্রমুগ্ধের মত উপভোগ করেছেন দর্শক শ্রোতারা।

রনু মজুমদারের বাঁশির মুগ্ধতা

পণ্ডিত রনু মজুমদার বাঁশির সুরে মুগ্ধ করেন সবাইকে। বাঁশির ভিন্নমাত্রার পরিবেশনার জন্য সারা পৃথিবীতে সারা পৃথিবীতে সমাদৃত পণ্ডিত রবিশংকরের কাছে দীক্ষা নেওয়া এ শিল্পী। পুরো নাম রনেন্দ্রনাথ মজুমদার হলেও তিনি রনু মজুমদার নামেই বেশি পরিচিত। তিনি মাইহার ঘরানার একজন শিল্পী। সোয়া পাঁচ হাজারের বেশি বংশী বাদকের সঙ্গে ‘আর্ট অব লিভিং’ এর ‘বেণুনাদ’ মঞ্চে বাঁশি বাজিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নিয়েছেন তিনি। পূর্বপুরুষের বাস ছিল বাংলাদেশে। সংগীতজ্ঞ বাবা ড. ভানু মজুমদারের কাছে নিয়েছেন বাংলার ভাটিয়ালি গানের দীক্ষা।

 

View Full Article