Menu

সাঙ্গ হলো শাস্ত্রীয় সংগীতের মিলনমেলা

সাঙ্গ হলো প্রাণের উৎসব। রেখে গেলো আবেগজড়িত কিছু মধুময় স্মৃতি। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে পাঁচদিনব্যাপী শাস্ত্রীয় সংগীতের মিলনমেলার সফল সমাপ্তি ঘটলো। বিশ্বখ্যাত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার মন মাতানো বাঁশির জাদুকরি পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে উৎসবের পঞ্চম আসরের বিদায়ের সুর বেজে উঠলো। সোমবার ভোরে তার পরিবেশনার মধ্যে দিয়েই শেষ হয় বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব-২০১৬। পাঁচটি দিন আর্মি স্টেডিয়ামে উপমহাদেশের বরেণ্য সব শাস্ত্রীয় সংগীতের পণ্ডিতের সুরের মনমাতানো পরিবেশনায় বুঁদ হয়েছিলেন হাজারো দর্শক। হিম শীত ও শাস্ত্রীয় সংগীতের অপূর্ব মিশেলে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত অন্যরকম পাঁচটি রাত অতিবাহিত করেছেন দর্শক। উপমহাদেশ তথা বিশ্বে সর্বাধিক বড় পরিসরে আয়োজিত উচ্চাঙ্গসংগীতের এ আসরটি এ বছর উৎসর্গ করা হয় সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের স্মৃতির উদ্দেশ্যে।

thumbnail

অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে এবারের উৎসবটি উপভোগ করতে পেরেছেন দর্শক। গত চারবারের চাইতেও কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ উৎসব। এবার শতাধিক শিল্পী এ উৎসবে অংশ নিয়েছেন। উল্লেখযোগ্য শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন ভারতের আশীষ খান (সরোদ), অভিজিত ব্যানার্জি (তবলা), অজয় জোগলেকার (হারমোনিয়াম), অজয় চক্রবর্তী (কণ্ঠ), অনিন্দ্য চ্যাটার্জি (তবলা), আর্তি আনকালিকার (কণ্ঠ), অশ্বিনীভিদে (কণ্ঠ), সঞ্জিব অভয়ঙ্কর (কণ্ঠ), ভাওয়ানি শঙ্কর (পারেকশন), বিক্রম ঘোষ (তবলা), পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকার (কণ্ঠ), ওস্তাদ রাশিদ খান (কণ্ঠ), রঞ্জনী ও গায়ত্রী (কণ্ঠ ও বেহালা), গিরিজা দেবী (কণ্ঠ), হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া (বাঁশি), জয়াতীর্থ মেভুন্ডি (কণ্ঠ), কুমার মারদুর (কণ্ঠ), রাহুল শর্মা (সন্তুর), কুশাল দাশ (সিতার), এল সুুব্রক্ষণ্যন (বেহালা), পূর্বায়ন চট্টোপাধ্যায় (সেতার), উল্লশ কশলকার (কণ্ঠ), রাতিশ তাগড়ে (বেহালা), তন্ময় বোস (তবলা), রনু মজুমদার (বাঁশি), ইউ রাজেশ (ম্যান্ডোলিন), আরুশি মুগডাল (নৃত্য), রাম দাস পাল সুলে (তবলা), মাধবী মুগডাল (নৃত্য), মুরাদ আলী (সারোঙ্গি), নিলেশ রানাদিবে, বাংলাদেশ থেকে মোহাম্মদ শোয়েব (কণ্ঠ), মুনমুন আহমেদ (নৃত্য), শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় (নৃত্য), প্রিয়াঙ্কা গোপ (কণ্ঠ), ইফতেখার আলম প্রধান (তবলা), মোহাম্মদ জাকির হোসেন (তবলা), বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দসহ আরো অনেক শিল্পী। এদিকে সোমবার বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের পঞ্চম ও শেষ দিনের আয়োজন শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টায়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দলীয় কণ্ঠসংগীত পরিবেশন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ। সমবেত কণ্ঠে রাগ ভূপালী পরিবেশন করেন তারা। এ সময় তবলায় তাল দেন স্বরূপ হোসেন ও জাকির হোসেন। এরপর বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ দলীয় সেতার পরিবেশন করেন। শিল্পীরা হলেন নিশিত দে, সম্যদে, আশিস নারায়ণ সরকার, প্রসেনজিৎ মণ্ডল, আহম্মেদ ইমতিয়াজ হুমায়ুন, টি এম সেলিম রেজা, খন্দকার নাজমুস সাকিব, রিংকু চন্দ্র দাস, মেহরিন আলম, জ্যোতি ব্যানার্জী, জাহাঙ্গীর আলম শ্রাবণ ও মোহাম্মদ কাওছার। সেতার, তবলা ও গিটারের সম্মিলিত সুরে তারা রাগচারুকেশী পরিবেশন করেন। তবলায় ছিলেন প্রশান্ত ভৌমিক ও সুপান্থ মজুমদার। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব ২০১৬-এর আনুষ্ঠানিক সমাপনী ঘোষণা করা হয় এরপরই। অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান। মঞ্চে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। আরো উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান উৎসবে আগত শিল্পীদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমাদের দেশে উচ্চাঙ্গসংগীতের চর্চা যখন স্তিমিত হতে যাচ্ছিল তখন এই উৎসব সে চর্চাকে আবার উজ্জীবিত করেছে। যা আমাদের জাতীয় চেতনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এদিকে উৎসবের সমাপনী ঘোষণার পর তৃতীয় পরিবেশনা ছিল পণ্ডিত শিব কুমার শর্মার। তিনি সন্তুরে রাগ যোগ বাজিয়ে শোনান। পরবর্তী পরিবেশনায় খেয়াল শুনিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন কুমার মারদুর। তিনি পুরিয়া কল্যাণ ও কিরওয়ানিতে ভজন পরিবেশন করেন। খেয়ালের পর সেতার পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন পণ্ডিত কুশল দাস। সেতারের তারে কৌশিকা নাড়ারাগ তোলেন তিনি। রাতের সপ্তম ও পরিবেশনায় দর্শকদের খেয়ালে মুগ্ধ করেন আরতী আঙ্কালিকর। তাকে তবলায় সঙ্গ দেন রোহিত মজুমদার। পঞ্চম ও সমাপনী দিনের সর্বশেষ পরিবেশনা ছিল পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার। উৎসবের সবচেযে বড় আকর্ষণও ছিলেন তিনি। বাঁশিতে রাগ প্রভাতী ও রাগ জৈৎ বাজিয়ে শোনান এ শিল্পী। তার পরিবেশনা প্রাণভরে উপভোগ করেছেন দর্শক। শেষ পরিবেশনায় এসে বাঁশির মায়াবি সুরে আর্মি স্টেডিয়াম জুড়ে প্রশান্তি ছড়িয়ে দেন চৌরাসিয়া। ফোক ধুন বাজিয়ে তিনি শেষ করেন তার পরিবেশনা। সঙ্গে তবলায় তাল দেন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। পাখাওয়াজে ছিলেন পণ্ডিত ভবানী শঙ্কর। বাঁশি বাজিয়ে শিল্পীকে সহযোগিতা করেছেন দেবপ্রিয় রনদ্বীপ ও বিবেক সোনার এবং তানপুরায় ছিলেন অভিজিৎ কুণ্ডু। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব ২০১৬-এর নিবেদক স্কয়ার গ্রুপ। আয়োজন সর্মথনে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড। অনুষ্ঠানে সমপ্রচার সহযোগী ছিল মাছরাঙা টেলিভিশিন।

View Full Article