সুরের অপূর্ব মূর্ছনায় বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব
পশ্চিমা সংগীতের ফিউশন আর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের অপূর্ব মূর্ছনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব। উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সংগীতের দিকপালদের নিয়ে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার ধানমন্ডির আবাহনী মাঠে শুরু হয় এবারের উৎসব। এল সুব্রামনিয়ামের সঙ্গে যুগলবন্দি হয়ে মঞ্চে আসে সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা। ভারতীয় ক্ল্যাসিকালের সঙ্গে ওয়েস্টার্নের ফিউশনে কখনো বিরহ-ব্যথা, কখনো ছড়ায় উচ্ছ্বাসের বারতা। তারপর মঞ্চে আসেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভারতীয় সরোদশিল্পী রাজরূপা চৌধুরী। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে যন্ত্রসংগীতে স্নাতকোত্তরের পর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত চর্চার একপর্যায়ে তিনি উত্তর ভারতীয় ধারার সংগীতের প্রতি ঝুঁকে পড়েন।
এরপর মঞ্চে আসেন ভারতীয় খেয়ালিয়া পদ্মা তালওয়ালকার। গোয়ালিয়র, কিরানা ও জয়পুর ঘরানার শাস্ত্রীয় সংগীতের চর্চা করে যাওয়া এ শিল্পী বেড়ে ওঠা সংগীতের আবহে; পরে ঘর বেঁধেছেন তবলাবাদক সুরেশ তালওয়ালকরের সঙ্গে। তারপর মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের সেতারবাদক ফিরোজ খান। বেঙ্গল পরম্পরা সংগীত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এরপর মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের খেয়ালিয়া সুপ্রিয়া দাশ।
প-িত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার পৌত্র বংশীবাদক রাকেশ চৌরাসিয়া আসেন এরপর। একক পরিবেশনায় খ্যাতি কুড়ালেও প্রায়ই তিনি ওস্তাদ জাকির হোসেন, বেলা ব্ল্যাক, এডগার মায়ের, যশোয়া রেদমানের মতো খ্যাতিমান শিল্পীদের সঙ্গে পরিবেশনা করেছেন।
সন্ধ্যা ৭টায় উৎসব মঞ্চে আসেন আন্তর্জাতিক সংগীত পরিচালক এল সুব্রামনিয়াম, রাগ আভোগি পরিবেশনা নিয়ে। তার সঙ্গে মৃদঙ্গমে সংগত করেন রামামূর্তি ধূলিপালা, তবলায় ছিলেন প-িত তন্ময় বোস এবং মোরসিং-এ ছিলেন সত্য সাই ঘণ্টশালা।
তারপর মঞ্চে আসে কাজাখস্তানের অর্কেস্ট্রা দল আস্তানার স্টেট একাডেমিক ফিলারমানিক সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা। অর্কেস্ট্রার পরিচালক বেরিক বাত্যরখানের পরিচালনায় মঞ্চ মাতান এরনার নুরতাজিন। মঞ্চ মাতাল করেন কে পেন্ডারকি, ভি আশকেনাজি, আর গাটার, এ চাইকোভস্কি, আর কানেট্টি, ডি ব্রোসরা। শুরুতে তারা পরিবেশন করেন কাজাখস্তানের সংগীত পরিচালক তিলেশ তাসগালিব ও চায়কোভস্কি রচিত দুটি শাস্ত্রীয় সংগীত। চেলো, ভায়োলিন, বাঁশি আর স্যাক্সোফোনে পরিবেশিত হল স্টাফ নোটেশন। উৎসবজুড়ে তখন ভিন্ন আবহ।
এবারের উৎসব উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা ও আবাহনী লিমিটেডের সভাপতি সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী। উৎসবে গান শুনতে এসেছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও। এবারের আয়োজনটি উৎসর্গ করা হয়েছে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে।
আজ তৃতীয় দিনের আয়োজনে থাকবে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের সেতারবাদন। বিদ্বান ভিক্ষু বিনায় করাম ও সেলভা গণেশ বিনায় করামের ঘাটাম ও কঞ্জিরা বাদন। সরকারি সংগীত কলেজের খেয়াল পরিবেশন। আবির হোসেনের সরোদ বাদন। গাজী আবদুল হাকিমের বাঁশিবাদন। প-িত উদয় ভাওয়ালকরের ধ্রুপদ পরিবেশন। বিদূষী কালারামনাথের বেহালাবাদন ও প-িত অজয় চক্রবর্তীর খেয়াল পরিবেশন।