Menu

সুরের কাছে অসুরের পরাজয়

thumbnail

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উত্সবে আসা শিল্পীরা গানের সুরে সৃষ্টিকে ভালবাসার কথা বলছেন। এই সৃষ্টির মাঝে যে সুর মিশে রয়েছে তাকে ভালবাসার শক্তিই একদিন পৃথিবী থেকে হানাহানি দুর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। সুরের সেই শক্তি আছে।

আর্মি স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ধ্রুপদী শিল্পীদের শুদ্ধ সঙ্গীত মনে ছড়ায় শুদ্ধতম অনুভব। যেখানে হিংসার জন্ম হয় না। হলি আর্টিজানের নারকীয় জঙ্গি হামরার পর যে ভয় ও অনিশ্চয়তা জেঁকে বসেছিল মানুষের মনে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উত্সব আয়োজন যেন সেখানে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করেছে। সুরের ছোঁয়ায় মন থেকে ভয়, ঘৃণা, হিংসা এসব মিলিয়ে যায়।

গতকাল পণ্ডিত যোগেশ শামসি ও পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের তবলার যুগলবন্দিতে মুগ্ধ হন দর্শকশ্রোতারা। এর পর ছিলো আরও একটি যুগলবন্দি। কর্ণাটকি কণ্ঠসঙ্গীত করেন দুই বোন রঞ্জনি বালসুব্রক্ষ্মণ্যন ও গায়ত্রী বালসুব্রক্ষ্মণ্যন। এর পর সরোদ নিয়ে মঞ্চে আসেন পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। স্বনামধন্য সরোদিয়া তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের গভীর সঙ্গীতজ্ঞান ও কৌশলগত দক্ষতা এবং ধ্রুপদ, তন্ত্রকারী ও বিভিন্ন গায়কীর উপাদানে সমুজ্জ্বল ছিলো তার পরিবেশনা। তার সঙ্গে তবলায় সঙ্গত দেন আরেক কৃতিজন পণ্ডিত যোগেশ শামসি। তৃতীয় রজনীর শেষ পরিবেশনা ছিলো পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর খেয়াল। অজয় চক্রবর্তী পাতিয়ালা-কসুর ঘরানা ছাড়াও ভারিতীয় শাস্ত্রী সঙ্গীতের প্রধান প্রদান ঘরানার বৈশিষ্ট্য রপ্ত করেন। প্রতিবছর অজয় চক্রবর্তীর পরিবেশনা শ্রোতা-দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে। গতকালও তা ব্যতিক্রম ঘটেনি।

এর আগে গতকার সন্ধ্যায় উত্সবের চতুর্থ দিনের শুরু হয় দেশের বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ ও তাঁর দল ‘রেওয়াজ’এর কত্থক নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। প্রথমেই রাগ ভিন্ন ষড়জে গুরুবন্দনা দিয়ে শুরু করেন নিজেদের পরিবেশনা। এর পর ছিলো ত্রিতালে কত্থক, যার প্রথমাংশে বিলম্বিত লয়ে ঠাট, উঠান, আমাদ ও পরন-আমাদ। পরবর্তীতে মধ্য লয়ে তেজামদ, টুকরা, তেহাই, পরন, পারমিলু এবং লাড়ি। দ্বিতীয় অংশে রাগ গৌড় মল্্হারে বিন্দাদিন মহারাজ রচিত ঠুমরি ‘মোরি গগরিয়া কাহেকো ফোড়ি রে শ্যাম’ এর সঙ্গে মুনমুন আহমেদ একক কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন। পুরো পরিবেশনায় কণ্ঠ সহযোগিতায় ছিলেন তানজিলা করিম স্বরলিপি। তবলায় সুবীর ঠাকুর, সরোদে সুনন্দ মুখার্জি, বাঁশিতে মনিরুজ্জামান।

দিনের দ্বিতীয় পরিবেশনাটি ছিল ভারতের নীলেশ রণদেবের তবলাবাদন। পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকারের শিষ্য এ শিল্পী বিশ্বের বিভিন্ন বড় সঙ্গীত উত্সবে অংশ নেওয়া এ শিল্পী মুগ্ধ করেন দর্শকশ্রোতাদের। কিরানা ঘরনার কণ্ঠশিল্পী জয়তীর্থ মেউন্ডির খেয়াল পরিবেশনা ছিল দিনের অন্যতম আকর্ষণ। ভারতীয় রাষ্ট্রপতির হাত থেকে ‘ইয়াং মায়েস্ত্রো ইন মিউজিক’ পুরস্কার পাওয়া এ শিল্পীর পরিবেশনায় মুগ্ধ হন দর্শকশ্রোতারা।

আজকের আয়োজন

আজ সোমবার পঞ্চম ও সমাপনী দিনের অধিবেশনের শুরুতেই থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিল্পীদের অংশগ্রহণে দলীয় কণ্ঠসঙ্গীত। এর পর দলীয় সেতার পরিবেশন করবে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী শিল্পীরা। তাদের এই পরিবেশনার পর শুরু হবে সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। সমাপনী অনুষ্ঠান শেষ হতেই সন্তুর পরিবেশন করবেন শিল্পী শিবকুমার শর্মা। খেয়াল পরিবেশন করবেন কুমার মারদুক ও আরতি আঙ্কালিকর। পণ্ডিত কুশল দাশ পরিবেশন করবেন সেতার। পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশির সুরে শেষ হবে এবারকার উত্সব।

View Full Article