সুরের মিলন মেলায় স্বাগত
নানা অনিশ্চয়তা কাটিয়ে আজ সন্ধ্যায় শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের ষষ্ঠ আসর। তবে গত পাঁচবারের ধারাবাহিকতায় ছেদ ঘটিয়ে এবার এ আসর বসছে রাজধানীর বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামের বদলে ধানমণ্ডির আবাহনী মাঠে। সুরের এই মিলন মেলায় শ্রোতাদের স্বাগত জানানো হচ্ছে আজ সন্ধ্যা ৭টায়। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে শিক্ষাবিদ-সংস্কৃতিজন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত এবারের উৎসবের নিবেদক স্কয়ার গ্রুপ এবং সমর্থন করছে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড।
উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এ উৎসবের জন্য এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে আবাহনী মাঠকে। বাংলাদেশ ও ভারতের আড়াই শতাধিক শিল্পী এ আসরে অংশ নেবেন। তাদের কণ্ঠে যেমন রাগ-রাগিণী খেলা করবে, তেমনি শ্রোতাদের অনুভূতিকে জাগিয়ে তুলবে সেতার, সরোদ, সন্তুর, বাঁশি, বেহালা, ম্যান্ডোলিন ও তবলার বোল। সঙ্গে থাকছে ভরতনাট্যম, কত্থক আর মণিপুরি নৃত্যের ঝঙ্কার। এবারই প্রথম এ উৎসবে যুক্ত হচ্ছে পশ্চিমা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুর। কাজাখস্তান থেকে ৫৮ সদস্যের আসতানা সিম্ম্ফনি ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রা তাদের পরিবেশনা নিয়ে শ্রোতাদের সামনে উপস্থিত হবে আজ উদ্বোধনী দিনেই। তাদের সঙ্গে প্রখ্যাত বেহালাশিল্পী পদ্মভূষণ ড. এল সুব্রহ্মণ্যনের যুগল-বাদন পরিবেশিত হবে।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের সমকালকে বলেন, একটু দেরিতে হলেও এবার উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব হচ্ছে। বিশ্বের খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী, বাদক ও নৃত্যশিল্পীরা অংশ নেবেন এ আয়োজনে। প্রতিবারের মতো এবারও অগণিত সঙ্গীতপ্রেমীর মিলন মেলা হয়ে উঠবে এ উৎসব।
আজ রাতে উৎসবের উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি থাকার কথা রয়েছে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও আবাহনী লিমিটেডের সভাপতি সালমান এফ রহমান, স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা ও স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর।
ড. এল সুব্রহ্মণ্যনের নেতৃত্বে কাজাখস্তানের আসতানা সিম্ম্ফনি ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রার পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের আয়োজন। প্রথম দিন সরোদ-বাদনে অংশ নেবেন রাজরূপা চৌধুরী ও ফিরোজ খান, খেয়াল পরিবেশন করবেন বিদুষী পদ্মা তালওয়ালকর ও বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী সুপ্রিয়া দাস। রাকেশ চৌরাসিয়ার বাঁশি ও পূর্বায়ন চ্যাটার্জির সেতারের যুগলবন্দিতে শেষ হবে প্রথম দিনের আয়োজন।
বাকি দিনগুলোর আয়োজন :আগামীকাল বুধবার কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবেন অদিতি মঙ্গলদাস ড্যান্স কোম্পানির নৃত্যশিল্পীরা। তবলা-বাদনে অংশ নেবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এরপর সন্তুর বাজিয়ে শোনাবেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা, খেয়াল পরিবেশন করবেন পণ্ডিত উল্লাস কশলকর, সেতার-বাদনে ওস্তাদ শাহিদ পারভেজ খান এবং ধ্রুপদ পরিবেশন করবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী অভিজিৎ কুণ্ডু। সবশেষে পণ্ডিত রনু মজুমদার বাঁশি এবং পণ্ডিত দেবজ্যোতি বোস সরোদে যুগলবন্দি পরিবেশন করবেন।
তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠান শুরু হবে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীদের সেতার-বাদনের মধ্য দিয়ে। এর পর ঘাটম ও কঞ্জিরা-বাদনে থাকবেন বিদ্বান ভিক্ষু বিনায়ক রাম ও সেলভাগণেশ বিনায়ক রাম। খেয়াল পরিবেশন করবেন সরকারি সঙ্গীত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর সরোদ-বাদনে আবির হোসেন, বাঁশি-বাদনে গাজী আবদুল হাকিম, ধ্রুপদ পরিবেশন করবেন পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকর এবং বেহালা-বাদনে অংশ নেবেন বিদুষী কালা রামনাথ। সবশেষে খেয়াল পরিবেশন করবেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী।
চতুর্থ দিন শুক্রবারের আয়োজন শুরু হবে শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। মণিপুরি, ভরতনাট্যম ও কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবেন সুইটি দাস, অমিত চৌধুরী, স্নাতা শাহরিন, সুদেষ্ণা স্বয়মপ্রভা, মেহরাজ হক এবং জুয়াইরিয়াহ মৌলি। সরোদ-বাদনে অংশ নেবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর পর খেয়াল পরিবেশন করবেন ওস্তাদ রাশিদ খান, সরোদ-বাদনে পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার, বেহালা-বাদনে ড. মাইশুর মঞ্জুনাথ, খেয়াল পরিবেশন করবেন পণ্ডিত যশরাজ ও চেলো-বাদনে থাকবেন সাসকিয়া রাও দ্য-হাস। সবশেষে সেতার পরিবেশন করবেন পণ্ডিত বুদ্ধাদিত্য মুখার্জি।
পঞ্চম ও শেষ দিন শনিবারের আয়োজন শুরু হবে ওড়িশি নৃত্যের মধ্য দিয়ে। যা পরিবেশন করবেন বিদুষী সুজাতা মহাপাত্র। এর পর মোহনবীণা-বাদনে পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভট্ট, খেয়াল পরিবেশন করবেন ব্রজেশ্বর মুখার্জি, যৌথ সেতার-বাদনে পণ্ডিত কুশল দাস ও কল্যাণজিৎ দাস, সেতার-বাদনে পণ্ডিত কৈবল্যকুমার। পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশি-বাদনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের আয়োজন।
উৎসবের নিয়ম-কানুন : অনলাইন নিবন্ধন করে যারা পাস সংগ্রহ করেছেন তারাই অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে পারবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে রাত ১২টার পর সবরকম প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। মাঠে ব্যাগ নিয়ে ঢোকা যাবে না ও সেখানে ব্যাগ রাখার কোনো ব্যবস্থাও থাকবে না। তবে নারীরা আট ইঞ্চি বাই ছয় ইঞ্চি সাইজের ছোট ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। উৎসবস্থলে প্রবেশের জন্য সঙ্গে যে কোনো প্রকার শনাক্তকরণ পরিচয়পত্র রাখতে হবে; মাঠে একাধিকবার প্রবেশ ও প্রস্থান করা যাবে না; বারো বছরের কম বয়সী শিশুদের সঙ্গে আনা যাবে না এবং মাঠে গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা থাকছে না। এবার শ্রোতাদের আনা-নেওয়ার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা রাখছে না আয়োজক সংস্থা।
এবারের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের সম্প্রচার সহযোগী চ্যানেল আই, মেডিকেল পার্টনার স্কয়ার হাসপাতাল, ইভেন্ট ব্যবস্থাপক ব্লুজ কমিউনিকেশনস এবং আয়োজন সহযোগী ইনডেক্স গ্রুপ, বেঙ্গল ডিজিটাল, বেঙ্গল বই ও বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়। সার্বিক সহযোগিতা করছে পারফেক্ট হারমনি, সিঙ্গাপুর।