সুরে অবগাহন শুরু আজ
![thumbnail](https://bengalclassicalmusicfest.com/wp-content/uploads/2016/12/0017009_kalerkantho-16-12-24.jpg)
অপেক্ষার প্রহর ফুরিয়ে এলো। আজ বৃহস্পতিবার থেকে শাস্ত্রীয় সুর ও নৃত্যের ঝংকারে ঝলমলিয়ে উঠবে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম।
এদিন পঞ্চমবারের মতো রাজধানীতে শুরু হচ্ছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব। পঞ্চরজনীর এ মহাযজ্ঞে প্রতিরাতেই সুরের মূর্ছনা ছড়াবেন শাস্ত্রীয় সংগীতের নামকরা ওস্তাদ-পণ্ডিতরা। উৎসবে অংশ নেবেন দেশ-বিদেশের দুই শতাধিক শিল্পী, যন্ত্রী ও কলাকুশলী। উৎসবে যেমন থাকছে ৮৭ বছর বয়সী প্রবাদপ্রতিম শিল্পী বিদুষী গিরিজা দেবীর পরিবেশনা, তেমনি থাকছে সাত বছরের খুদে প্রতিভা ইসরাত ফুলঝুরি খানের সেতার বাদন। যন্ত্র ও কণ্ঠসংগীতের মধুরিমার পাশাপাশি থাকবে কত্থক, মণিপুরি, ভরতনাট্যম, ওড়িশি নৃত্যের স্বর্গীয় সুধাও।
পাঁচ দিনের উৎসবটির সূচনা হচ্ছে আজ সন্ধ্যা ৭টায়। উৎসব চলবে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলবে সুর, তাল ও লয়ের খেলায় বৈচিত্র্যময় ধ্রুপদী পরিবেশনা। দর্শক-শ্রোতার সংখ্যার বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উচ্চাঙ্গসংগীত আসরের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত উৎসবটি এ বছর উৎসর্গ করা হয়েছে সদ্যপ্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে। স্কয়ার নিবেদিত এ উৎসবের আয়োজক বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। সহযোগিতায় রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
আজ উৎসব শুরু হবে শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল নৃত্যনন্দনের দলীয় নৃত্য ‘রবি করোজ্জ্বল’ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। তারপর থাকছে উদ্বোধনী পর্ব। এ পর্বে প্রধান অতিথি থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী পর্ব শেষে শুরু হবে বাঁশি ও বেহালার যুগলবন্দি। এরপর খেয়াল শোনাবেন বিদুষী গিরিজা দেবী। কণ্ঠের মাধুর্য শেষে শুরু হবে সরোদের ঝংকার। সরোদ বাজিয়ে শোনাবেন ওস্তাদ আশিষ খান। এরপর থাকছে খেয়াল যুগলবন্দি ‘জাসরাঙ্গি’। তাতে অংশ নেবেন বিদুষী অশ্বিনী ভিদে দেশপাণ্ডে ও পণ্ডিত সঞ্জীব অভয়ংকর। শেষ রাতে বেহালায় সুর তুলবেন ড. এল সুব্রহ্ম্যণন।
উৎসব আয়োজন প্রসঙ্গে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, বাংলাদেশে শাস্ত্রীয় সংগীতের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে নবজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে এ উৎসবের সূচনা। ইতিমধ্যে বিশাল পরিসরের এ সংগীতাসরটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে। তবে নানা পরিস্থিতির কারণে এ বছরের আয়োজন নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছিল। তবে সরকারি উদ্যোগ, আগ্রহ ও বিভিন্ন মহলের অঙ্গীকার দূর করেছে সেই শঙ্কা।
আসছেন বরেণ্য শিল্পীরা : অন্যান্যবারের মতো এবারও উৎসবে আসছেন বরেণ্য শিল্পীরা। এবারের উৎসবে অংশ নিচ্ছেন বেনারস ঘরানার পদ্মবিভূষণপ্রাপ্ত ৮৭ বছরের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী বিদুষী গিরিজা দেবী। উৎসবের প্রবীণতম এই শিল্পী খেয়াল, ঠুমরি ও টপ্পার পরিবেশনায় ছড়াবেন পূরব অঙ্গের রূপ-রস। প্রথম দিনের পরিবেশনায় অংশ নেবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেওয়া কিংবদন্তি শিল্পী আলাউদ্দিন খাঁর বংশধর ওস্তাদ আশিষ খাঁ। এবারের উৎসবে প্রাধান্য পাবে নবীন শিল্পীদের উপস্থিতি ও একাধিক যৌথ পরিবেশনা। পুরুষ ও নারী কণ্ঠের ভিন্ন স্তরের রাগে পরিবেশিত জাসরাঙ্গি শীর্ষক যুগলবন্দি পরিবেশনায় অংশ নেবেন জয়পুর আত্রোলির বিদুষী অশ্বিনী ভিদে ও মেওয়াতি ঘরানার পণ্ডিত সঞ্জীব অভয়ংকর। উৎসবের প্রথম দিন বেহালা বাজিয়ে শোনাবেন পদ্মভূষণপ্রাপ্ত ড. এল সুব্রহ্মণ্যন। বরেণ্য এ শিল্পী এ উৎসবে আসছেন প্রথমবারের মতো। প্রেরণাসঞ্চারী ওড়িশি নৃত্যের আশ্রয়ে মঞ্চ আলোকিত করবেন বিদুষী মাধবী মুদগাল ও তাঁর শিষ্যা আরুশি মুদগাল। এ উৎসবে প্রথমবারের মতো শোনা যাবে ম্যান্ডোলিনের সুর। বাঁশি ও ম্যান্ডোলিনের যুগলবন্দি পরিবেশন করবেন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত শিল্পী বংশীবাদক রনু মজুমদার ও ইউ রাজেশ।
বিগত বছরের মতো এবারও অনন্য এই সংগীতায়োজনে অংশ নেবেন প্রবাদপ্রতিম বাঁশরিয়া পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। শোনা যাবে পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার মোহনীয় সন্তুরের সুর। কণ্ঠসংগীত ও বাদ্যের নানা পরিবেশনা নিয়ে হাজির হবেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, পণ্ডিত উল্লাস কশলকর, ওস্তাদ রশিদ খান, পণ্ডিত কুশল দাস, পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার ও পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকার। শোনা যাবে বিশিষ্ট সেতার পণ্ডিত সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিষ্টি-মধুর সেতারের বাজনা। থাকবে পদ্মভূষণপ্রাপ্ত কিরানা ঘরানার কোকিলকণ্ঠী শিল্পী ড. প্রভা আত্রের সুর মূর্ছনা। বরেণ্য এ শিল্পী এবারই প্রথম এ উৎসবে আসছেন। থাকছে খ্যাতিমান তবলিয়া পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ছেলে অনুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পরিবেশনা। বাঁশি ও বেহালার যুগলবন্দি পরিবেশনায় রং ছড়াবেন প্রবীণ শিল্পী গোধকিন্ডি ও রাতিশ টাগডের। যৌথ তবলাবাদনে অংশ নেবেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি ও পণ্ডিত শুভংকর বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন মেজাজের শাস্ত্রীয় সংগীত উপস্থাপন করবেন সেতারে রাগসংগীতের নন্দিত শিল্পী পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়, কর্ণাটকি সংগীতে পারদর্শী ভগ্নিদ্বয় রঞ্জনী ও গায়ত্রী, কর্ণাটকি বংশীবাদক শশাঙ্ক সুব্রহ্মণ্যন, খেয়ালিয়া আরবতহী আঙ্কালিকার, জয়তীর্থ মেউন্ডি ও কুমার মারদুর।
দেশের শিল্পীদের পরিবেশনা : উৎসবে অংশ নেবেন বাংলাদেশের ১৬৫ জন শিল্পী। উদ্বোধনী পর্বে নৃত্যশিক্ষক শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা ও নির্দেশনায় নৃত্যনন্দন দলের প্রায় ৬০ জন শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূল গান ও ভাঙ্গা গানে মণিপুরি, ভারতনাট্যম, ওড়িশি ও কত্থক রীতির রূপায়ণ পরিবেশন করবেন। উৎসবের চতুর্থ দিনে কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবেন মুনমুন আহমদ ও তাঁর দল। উৎসবের শেষ দিন প্রিয়াংকা গোপের একক কণ্ঠের খেয়ালের সঙ্গে থাকবে তাঁর নির্দেশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা। উৎসবের দ্বিতীয় দিন মোহাম্মদ শোয়েবের নির্দেশনায় তাঁর শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করবেন নিরীক্ষামূলক রাগসংগীত। এ ছাড়া উৎসবের বিভিন্ন দিন সেতার, সরোদ ও তবলায় যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করবেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীরা।