সুরে নিমজ্জিত উৎসবের রাত
পরিবেশনায় নান্দনিকতার সুষমা ছড়িয়ে পড়েছিল আবাহনী মাঠে। সুরের চাদরে আবৃত থেকে ধ্রুপদী একটি রাত পার করল উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের অনুরাগীরা। ‘খেয়াল, সরোদ, সেতার, বাঁশি আর বেহালার ব্যাকরণগত পরিবেশনায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সুরের সাগরে নিমজ্জিত ছিল অভিজাত সঙ্গীতের উচ্চমার্গীয় শ্রোতারা। বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীত শিক্ষালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘সেতার’ পরিবেশনা দিয়ে গতকাল তৃতীয় রাতের আসর শেষ হয় পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর ‘খেয়াল’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। এ রাতের মূল আকর্ষণ ছিলেন উপমহাদেশের বিখ্যাত ধ্রুপদী শিল্পী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। আকাক্সিক্ষত এ সঙ্গীতজ্ঞের সুরে ¯œাত হওয়ার জন্য সন্ধ্যা থেকেই সুরপিয়াসীদের ছিল আকুল অপেক্ষা। অবশেষে তিনি এলেন, ‘খেয়াল’ এর অনন্য পরিবেশনায় অগণিত শ্রোতার চিত্ত জয় করেই মঞ্চ ছাড়লেন। বিখ্যাত এ পণ্ডিতের ‘খেয়াল’ পরিবেশনের মধ্য দিয়েই ভোর ৫টায় আসরের তৃতীয় রাতের সমাপ্তি ঘটে।
এর আগে সন্ধ্যায় বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীত শিক্ষালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘সেতার’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে এ রাতের উদ্বোধন হয়। এ দলটিতে ছিলেন প্রসেনজিৎ মণ্ডল, টি এম সেলিম রেজা, রিঙ্কু চন্দ্র দাস, মেহরীন আলম, জ্যোতি ব্যানার্জি, মোহাম্মাদ কাউসার এবং জাহাঙ্গীর আলম শ্রাবণ। তবলায় ছিলেন প্রশান্ত ভৌমিক ও সুপান্থ মজুমদার। পণ্ডিত কুশল কুমার দাসের কম্পোজিশনে তারা কিরওয়ানি রাগে সেতার অর্কেস্ট্রা পরিবেশন করেন। পরিবেশনা শেষে শিল্পীদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন বরেণ্য শিল্পী বিদ্বান ভিু বিনায়ক রাম। উদ্বোধনী এ পরিবেশনাটি শেষে মঞ্চে আসেন পিতা-পুত্র বিদ্বান ভিু বিনায়ক রাম ও সেলভাগনেশ বিনায়ক রাম। উপমহাদেশের বিখ্যাত এ পিতা-পুত্র যুগল ঘাটম ও কঞ্জিরার যুগলবন্দী পরিবেশনায় অনন্য উচ্চতায় উন্নীত করেন সুরের এ আসরকে। এ যুগলের সাথে কঞ্জিরা ও কোনাক্কল বাজিয়েছেন স্বামীনাথন এবং মোরসিংয়ে ছিলেন এ গনেশন। শুরুতেই এ পিতা-পুত্র ঘাটমে শিবস্তব করেন। পরে তারা গুরুবন্দনা ও গণপতি বাজিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন। শিল্পীদের হাতে উৎসবের স্মারক সম্মাননা তুলে দেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। এরপর খেয়াল পরিবেশন করেন সরকারি সঙ্গীত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ দলটি মালকোষ রাগে খেয়ালের খেলায় বিমোহিত করেন আবাহনী মাঠে আগত শ্রোতাদের। এরপর ‘সরোদ’ এর অনুপম সুরে শ্রোতাদের মোহাবিষ্ট করে তোলেন ভারতীয় সরোদ শিল্পী আবির হোসেন। সরোদে আভোকি রাগ পরিবেশন করেন এ শিল্পী। তৃতীয় রাতের আসরে বাঁশির সুরে অনুষ্ঠানস্থলে আবেগ সঞ্চারি পরিবেশ সৃষ্টি করেন বাংলাদেশের বাঁশিওয়ালা গাজী আবদুল হাকিম। এ ছাড়া বেহালা বাজান বিদুষী কালা রামনাথ।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ উৎসবের নিবেদক স্কয়ার গ্রুপ।
গবেষক, চিন্তক ও শিাবিদ এমেরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামানকে এবারের উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে।