Menu

সুর বেঁধে রাখা যায় না দেশকালের গন্ডিতে

thumbnail

শশাঙ্ক সুব্রহ্মণ্যন। কর্নাটকি সঙ্গীত ঘরানার বিশিষ্ট বংশীবাদক। বাবা সুব্রহ্মণ্যনের কাছে সঙ্গীতে হাতেখড়ি হলেও তালিম নিয়েছেন শ্রীকান্তন পালঘাট, কেডি নারায়ণস্বামী ও পণ্ডিত যশরাজের কাছে। ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন শিল্পীর সঙ্গে বাঁশি বাজিয়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। এরই মধ্যে তামিলনাড়ূ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ‘কালাইমামানি’সহ একাধিক সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গুণী এ শিল্পী। বেঙ্গল আয়োজিত উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব ২০১৬-এর তৃতীয় দিনে বাঁশি বাজিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন তিনি। নিজের সঙ্গীতজীবন, বাংলাদেশ সফর ও অন্যান্য প্রসঙ্গে সমকালের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

কর্নাটকি সঙ্গীতধারার পাশাপাশি আপনি হিন্দুস্তানি সঙ্গীতেও তালিম নিয়েছেন। কিন্তু কর্নাটকি সঙ্গীত পরিবেশনায় আগ্রহী হলেন কেন?

জ্ঞান অন্বেষণে আমি অনেক কিছুই শিখতে চেয়েছি। হিন্দুস্তানি সঙ্গীত ঘরানায় সে জন্যই প্রশিক্ষণ নেওয়া। বাঁশির পাশাপাশি অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র নিয়েও আমার একইরকম আগ্রহ রয়েছে। তবে কর্নাটকি সঙ্গীত পরিবেশনই আমার আনন্দের মূল কেন্দ্র। এটি পরিবেশন করেই আমার আজকের এ অবস্থান।

পেশাগতভাবে আপনি বিশ্বের বিভিন্ন শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছেন। জ্যাজ থেকে শুরু করে ব্লুজ ধারায়ও আপনি সমান পারদর্শী। কর্নাটকি ধারায় থেকে বিশ্বব্যাপী কাজ করতে এতে কোনো সমস্যা হয়নি?

আমি মনে করি, সঙ্গীতের কোনো ভৌগোলিক সীমা নেই। দেশকাল গণ্ডির মধ্যে সুর কখনও আটকানো যায় না। যখনই বিভিন্ন শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছি, তারা কী চান, আমার কাছে কেন এসেছেন তা মাথায় রেখেই কাজ করেছি। আসলে সুরের মূল কাঠামোটা বুঝতে পারলে কারও সঙ্গেই তা মেলাতে সমস্যা হয় না। কী নোটটা একবার ধরে ফেলতে পারলেই হয়।

আপনি পরিচিত সুরের বাইরে নতুন কিছু কম্পোজিশন নিয়ে এসেছেন। বাঁশিতে নতুন সুর আবিষ্কারের এ মন্ত্রটা কেমন?

নতুন সুর আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ থাকে। কেবল বাঁশি নয়, এ পরিবেশনায় ভায়োলিন ও সেতারের সঙ্গে নতুন কিছু করতে চাচ্ছিলাম। সচেতনভাবে পুরো বিষয়টি হয়েছে বলব না। তবে চেষ্টা করতে করতে নতুন সুর বের হয়েছে। এর মধ্যে ‘ক্যালিয়ান’ রাগ আমার বোনের কাছে শোনা। এর মানে হলো পূর্ণ চাঁদ। সব শেষে একটা তামিল গানের সুর নতুন করে কম্পোজ করেছি। এ ছাড়া ছিল রাগ ইমন কল্যাণী। আমার একটি অ্যালবামে গানটি ছিল। ভগবান কৃষ্ণের বিভিন্ন লীলা এ রাগে ব্যক্ত করা হয়েছে।

আপনার সঙ্গীতজীবনের শুরু হলো কীভাবে?

আমি প্রকৃতিদত্ত শিল্পী নই, বংশ পরম্পরায় সঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছি। আমার বাবার কাছে মাত্র ৬ বছর বয়সেই আমি তালিম নেওয়া শুরু করি। তারপর প্রায় ৩০-৩২ বছর কেটে গেল। এখনও নানাভাবে শেখার চেষ্টা করছি। তবে এটা সত্য যে, পারিবারিকভাবে আমি সঙ্গীতের একটি শক্তিশালী ভিত পেয়েছি। তাই এগিয়ে যাওয়াটা খুব বেশি কঠিন হয়নি। তবে বংশীবাদক হিসেবে আমি পরিচিত হলেও অন্যান্য ধারায়ও সমান পারদর্শী।

তরুণ প্রজন্মের যারা বাঁশি শিখতে আগ্রহী তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

তাদের বুঝতে হবে, এটা স্বল্প সময়ের বিষয় নয়। পুরো মিউজিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানতে হবে তাদের। তাহলেই নিজস্ব একটা স্টাইল বা ঘরানা আবিষ্কার করতে পারবে। আমার কাছেও প্রচুর ছাত্র আসে। তারা অনেকেই নিজস্ব পরিচয় নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনেকে এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছে।

সঙ্গীত পরিবেশনায় আপনি একাধিক বাঁশি ব্যবহার করেন, এ ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলেন?

একেক ঘরানার সঙ্গীতের ক্ষেত্রে এটি একেক রকম। বিভিন্ন রাগের ওপর নির্ভর করে কোন বাঁশি ব্যবহার করব। সাধারণত সবাই ছয় ছিদ্রের বাঁশি ব্যবহার করেন; আমি আট ছিদ্রযুক্ত বাঁশি ব্যবহারে অভ্যস্ত। গায়কীর সঙ্গে মিল রেখেও অনেক সময় বাঁশি পরিবর্তন করি।

বাংলাদেশে এবার প্রথম সঙ্গীত পরিবেশন করলেন, অভিজ্ঞতা কেমন হলো?

খুবই চমৎকার। দর্শকদের খুবই আন্তরিক ও সঙ্গীতপ্রেমী মনে হয়েছে। পুরো পরিবেশনায় তাদের অংশগ্রহণ ও প্রতিক্রিয়া একজন শিল্পী হিসেবে আমাকে মুগ্ধ করেছে।

বিশ্বের অনেক শিল্পীর সঙ্গেই আপনি কাজ করেছেন। কাদের সঙ্গে কাজ করতে বেশি ভালো লেগেছে?

এটি নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। প্রত্যেক শিল্পীর নিজস্ব একটা স্টাইল রয়েছে, জীবনবোধ রয়েছে। তাই আলাদা করে কাউকে ভালো লাগার সুযোগ নেই। এরই মধ্যে তেজেন্দ্র নারায়ণ, জাকির হোসেন, অজয় চক্রবর্তী, জন ম্যাকলফলিন, পাকো দ্য লুচ্যা, বিশ্বমোহন ভট, সুলতান খান, কুশল জীসহ অনেকে আমাকে সুযোগ দিয়েছেন। এ জন্য সবার কাছেই আমি কৃতজ্ঞ।

বাংলাদেশের কোনো বাঁশিশিল্পীর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে?

না; কিন্তু দুই বছর আগে বাংলাদেশের একটি দলের (ঢাকা) সঙ্গে আমি বাঁশি বাজিয়েছিলাম। তারা ভারতের রাষ্ট্রপতির একটি আয়োজনে বাউল গান পরিবেশন করেছিল। সেখানে একজন বাঁশিশিল্পী, বাউলশিল্পী এবং একতারা ছিলেন।

অন্যান্য শিল্প আঙ্গিক যেমন- চিত্রকলা, নাচ বা সাহিত্যের সঙ্গে সুরকে আপনি কীভাবে মেলান?

আসলে সব শিল্পের স্ফুরণটা একই রকম। প্রদর্শনটা কেবল ভিন্ন। তবে ভারতে নাচ ও গানের যোগসূত্র এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। ব্যক্তিগতভাবে আমি নাচের জন্য সেভাবে কাজ করিনি; কিন্তু মাঝে মধ্যে একজন শিল্পী যেভাবে কল্পনা করে ক্যানভাসে নানা চিত্র ফুটিয়ে তোলেন, আমি সুরের রাজ্যে সেভাবেই ভাসতে থাকি। এ কল্পনাপ্রবণতা থেকেও আমার অনেক সুর সৃষ্টি।

View Full Article